রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল আর কত দীর্ঘ হবে?

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

যেকোন দেশের জন্য সেদেশের কর্মঠ জনসংখ্যা মূল্যবান সম্পদ। কেননা, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা সার্বিক উন্নয়নে কর্মঠ জনসংখ্যার অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর। সেই হিসেবে দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়ে সম অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যার পেছনে কর্মঠ জনসংখ্যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু কারনে দেশের ত্বরিৎ এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারন দেশের বাজারে শ্রমের মূল্য অনেক কম। এজন্য বাইরের দেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশের কর্মঠ জনগণকে তুলনামূলক কম পারিশ্রমিক দিয়ে সেসব কাঁচামাল থেকে পণ্য বানিয়ে আবার পাশ্চত্য দেশগুলোতে চড়া দামে রপ্তানি করা হয়। ফলে প্রতি বছর দেশের তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রাজস্ব খাতে মোটা অঙ্কের টাকা জমা পড়ে। তার সাথে বিদেশের বাজারেও দেশীয় পণ্যের অনেক সুনাম বয়ে আনে। শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্প বলে কথা নয়। জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া একটি দেশের সকল মানুষের সার্বিক সুবিধা বৃদ্ধিতে এই কর্মঠ এবং শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের জনগণের সার্বিক চাহিদা মেটাতে এরা নির্মাণ শৈলী, শিল্প-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মাঠে ফসল ফলানো সবখানেই অবদান রেখে চলেছে। তারা নিজেরা আধপেটা খেয়ে দেশের সেবায় সর্বদা নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ ভাবেনা। তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবেনা। উপরন্তু মালিক শ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের মানুষের কাছে এদের জীবনের মূল্য একবারেই কম। আর সেজন্যই অকালে তাদের পৃথিবী হতে বিদায় নিতে হয় ভবন ধসে, আগুনে পুড়ে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে, পানিতে ডুবে সহ নানাবিধ অব্যবস্থাপনার কারনে।

মালিক পক্ষ এসব শ্রমিককে খাটিয়ে, নায্য পাওনা না দিয়ে আয় করে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এদের জীবনে নেই কোন আনন্দ-ফুর্তি ও উৎসবের আমেজ। শুধুমাত্র দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগানোর নিশ্চয়তায়, জীবনের সকল সাধ আহ্লাদ ত্যাগ করে, শোষণ ও বঞ্চনা সহ্য করেই তাদের টিকে থাকতে হয়। অর্থ সংকটে থাকা এসব মানুষেরা উপযুক্ত মাত্রার খাবারের অভাবে বছরের অধিকাংশ সময়ে ভোগে অপুষ্টিতে। অনেকে আবার পরিবারের ভরণপোষণ করতে না পেরে দিনরাত ওভার টাইম ডিউটি করতেই থাকে। তাদের নায্য পাওনা তো দেওয়া হয়না বরং জাতীয় উৎসবগুলোর সময় বেতন ও বোনাসের দাবীতে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে, সড়ক অবরোধ করতে দেখা যায়। আমরা বিগত প্রায় প্রতিটা ঈদের পূর্ববর্তী সময়ে বেতন ও বোনাসের দাবীতে দেশের শিল্প-কারখানা গুলোতে কর্মরত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের এই চিত্র দেখতে পাই। ‘হয়ত একদিন ভাগ্যের চাকা ঘুরবে’ এই আশাকে সম্বল করে কোন উপায়ন্তু না পেয়ে এই শ্রেণীর মানুষগুলো টিকে আছে যুগের পর যুগ। যে টিকে থাকার ভিতর নেই কোন আনন্দ, নেই কোন প্রাপ্তি। আছে বিস্তীর্ণ মলিনতা, জীর্ণ-শীর্ণ কঙ্কালসার দেহখানি। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তাদের পদচারনায় মুখরিত হয় জনপদ। হাতে ছোট্ট একটি খাবারের বাটি নিয়ে দলবেঁধে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। যে ছোটার ভিতর ও আছে অনেক অনিশ্চয়তা, আছে চাকরি থেকে যেকোন মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত ছাঁটাইয়ের ভয়, সর্বোপরি পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের মত ভয়।

একজন ভিক্ষারিরও দুচোখ ভরে স্বপ্ন থাকে। সে স্বপ্ন দেখে দিনশেষে ভিক্ষা করে যা পাবে তা দিয়েই তার আগামীর প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখবে। সে স্বপ্ন দেখে তার আয়ের টাকায় ভবিষ্যত বংশধরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার। তাই নানান অবহেলায় এসব নিন্ম আয়ের মানুষের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু শুধুমাত্র তাদেরই মৃত্যু নয়। মৃত্যু এক একটি স্বপ্নের, মৃত্যু এক একটি পরিবারের। আমরা খুব কম লোকই ভাবি এগুলো নিয়ে। যেকোন দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরেই আমরা ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করি। প্রশাসনে বিরাজ করে সেই সরগরম অবস্থা। মিডিয়া ও একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, একের পর এক নিউজ কভারেজ দেয়। যেটা দিন পনেরো পার হতেই আবার চাপা পড়ে যায়। ঘটনাগুলো ইতিহাসের কালো সাক্ষী হয়ে রয়ে যায়। কিন্তু তাদের পরিবারের ক্ষত শুকায় না। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কখনো কখনো ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠে আত্মীয়-পরিজনের মন। ফিরতি বছরের ওই একই দিনে নিহতদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করা হয়। বিগত দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডিগুলো থেকে আমরা এমন শিক্ষা পাই। কিন্তু ঘটা করে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার চেয়ে প্রকৃত বাস্তবতা এমনটা হওয়া উচিত ছিল যাতে এগুলোর পুনরাবৃতি ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে নজর দেওয়া এবং যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।

অতি সম্প্রতি ১৫ দিনের ব্যবধানে ঢাকার মগবাজারের এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঘটে গেল তেমনই দু’টি অগ্নিকান্ড। ঘটনা দু’টির বর্বরতার বিষয়ে না গিয়ে একটু ভিন্ন বিষয়ে বলতে চাই। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যাপারেও সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রুপগঞ্জের কারখানাটি বেশ অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই চলতো। সেখানে ছিলনা অগ্নিনির্বাপনের মত কোনো ব্যবস্থা। এমনকি আপদকালীন সময়ে জরুরি নির্গমনের কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। কারখানায় ব্যবহৃত হত অতিমাত্রায় কেমিক্যাল। আর এসব কারনেই আগুনের সূত্রপাত এবং পরিশেষে অতিমাত্রায় প্রাণহানি।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গেল ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭৩ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল ১৫ বছরে দেশে অগ্নিদুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৪ জন। অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত বা কারন উদঘাটনে জানা গেছে এসব অগ্নিকান্ডের বেশিরভাগই ঘটেছে কারখানার অব্যবস্থাপনার কারণে। কারখানাগুলোয় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও ফায়ার এক্সিট ছিলনা। এছাড়া কারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও দাহ্যপদার্থের সংরক্ষণজনিত ত্রুটি ছিল। যথাযথ বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করা হয়েছে। একটি কারখানায় যেকোন ধরনের দুর্ঘটনার জন্য উক্ত কারণগুলোই যথেষ্ট। সকল আমজনতার মনে প্রশ্ন একটাই, দুর্ঘটনার পরে কেন মালিক পক্ষের এসব সীমাবদ্ধতার এবং ব্যর্থতার মুখোশ উন্মোচন হয়? একটি শিল্প কারখানা নির্মাণের ব্যাপারে, সেটি উৎপাদনে যাওয়ার আগে এবং উৎপাদন কালীন সময়ে সব বিষয়ে তদারকি করার জন্য সরকারের পৃথক পৃথক দপ্তর রয়েছে। যে দপ্তরগুলো ভরণপোষণের জন্য সরকার প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করে।

যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে কারখানা তৈরি হচ্ছে কিনা, উৎপাদনে যাওয়ার আগে সেখানে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি আছে কিনা সেগুলো তদারকির করার দায়িত্ব ছিল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের। কিন্তু কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরেই আমরা জানতে পারি সেখানে পূর্ব হতে নানান সীমাবদ্ধতা ছিল। তাহলে সরকারের ওই দপ্তরের কাজটা আসলে কী ছিল, সেটা ভাববার বিষয়। নাকি মালিক পক্ষ সব দপ্তরকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোন অবৈধ উপায়ে ম্যানেজ করেই তবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে? দেশের প্রেক্ষাপটে সেটা যদিও অসম্ভব কিছু না। কেননা, আমরা বারবার এগুলো দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব দেখভালের দায়িত্বে যে সব দপ্তর আছে তাদের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন: সাভারের রানা প্লাজা ধ্বস, পুরানো ঢাকার নিমতলী ও চকবাজারের অগ্নিকান্ড, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ড, মগবাজারের অগ্নিকান্ড, সর্বশেষ হাসেম ফুড কোম্পানির অগ্নিকান্ড আপনাদের কি কোন শিক্ষা দেয় না? যদি উক্ত ঘটনাগুলো থেকে কোন শিক্ষা পেয়ে থাকেন তাহলে গরীব, মেহনতি, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। তাদের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের সবার বেতন হয়। দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখে তারাই দেশকে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া অবশ্যই আপনাদের নীতিগত এবং পেশাগত দায়িত্বের ভিতর পড়ে।

এসব দুর্ঘটনায় যেমন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে, তেমনি বর্হিবিশ্বেও দেশের ভাবমর্যাদা যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়। কেননা, বর্হিবিশ্বের কাছে যেকোন দেশের ভাবমর্যাদা প্রকাশ পায় সেদেশের প্রশংসানীয় এবং ভালো কিছু করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা বিদেশিদের কাছে দিনকে দিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। একের পর এক এত বেশি দুর্ঘটনা, প্রাণহানি এবং দুর্নীতি দেশে ঘটে থাকে যে, তাতে করে ভালো সংবাদগুলো চাপা পড়ে খারাপগুলোই ঢালাওভাবে চাউর হয়ে যায়। বিদেশিরা বাংলাদেশকে ভাবে জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া একটি দারিদ্রপীড়িত, ক্ষুধাগ্রস্ত এবং অতি দুর্নীতিপ্রবণ দেশ। যেখানে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। যেখানে প্রতিবছর আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, ভবন ধ্বসে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে, সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। বার বার দুর্নীতির তালিকায় শীর্ষের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের এমনটায় ভাবতে বাধ্য করে।

শিল্প-কারখানা থাকলে মাঝেমধ্যে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। কিন্তু সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মত অবশ্যই ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারখানাগুলোতে থাকতে হবে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সিট, স্মোক ডিটেক্টরের ব্যবস্থা। যেকোন ধরনের কারখানা নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোডসহ সব ধরনের নিয়মকানুন মেনেই তৈরি করতে হবে। ভবনগুলোতে বিপদের সময়ে জরুরি নির্গমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের টিমকেও যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে। অগ্নিকান্ড ঘটে যাওয়া এলাকায় অক্সিজেনের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিভাবে অতিদ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। আগুন লাগলে কিভাবে নিজেদের সেভ করে সেখান থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সে বিষয়ে অন্তত ছয় মাসে একবার ফায়ার সার্ভিসের তত্ত্বাবধায়নে কারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিকদের ট্রেনিং বা মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মহড়াতে প্রতিটি শ্রমিককে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে হবে কিভাবে আপদকালীন সময়ে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরপর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তরকে তদারকি করতে হবে কারখানাগুলোতে রক্ষিত ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরপর সেখানে নতুন মেয়াদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা হচ্ছে কিনা। তাহলেই এসব বিপদ থেকে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বাসা-বাড়ি সহ রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও অহরহ মৃত্যুর খবর চোখে পড়ে। মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের বারবার ব্যবহার দুর্ঘটনার অন্যতম কারন। সেগুলো যাতে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণের জীবনের অনেকটা মূল্যহীন। তাদের সুযোগ সুবিধার নিয়েও সবার ভিতরে অনেক উদাসীনতা দেখা যায়। আর এসব উদাসীনতা থেকেই প্রতি বছর লঞ্চ-স্পিড বোট ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, ভবন ধ্বসে, আগুনে পুড়ে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অথচ এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো খুব কঠিন কোন বিষয় নয়। দরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ। যদি আজ থেকেও সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়ে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বন্ধে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা দপ্তরগুলোর প্রতি কঠোর নির্দেষ প্রদান করেন তাহলে অচিরেই সকল অনিয়ম বন্ধ হবে। তা না হলে এমন বহু ঘটনা আগামী দিনের জন্য জাতির সামনে অপেক্ষা করছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা।

যেকোন দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরে তদন্ত কমিটি গঠনের চেয়ে দুর্ঘটনা পূর্ববর্তী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনার পক্ষে সহায়ক। দেশে বহু শিল্প কারখানা রয়েছে। এসকল কারখানার সার্বিক নিরাপত্তা দেখভালের জন্য কর্তৃপক্ষও রয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে প্রমান মেলে কারখানাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকিতে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। আশা করি, দেশের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়গুলো অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। সেইসাথে নিয়ম লঙ্ঘনকারী সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যু থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করবেন।
লেখক: গবেষক,ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
ajoymondal325@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md Jubaer Hossain ১৭ জুলাই, ২০২১, ১০:৫৬ এএম says : 0
`` একটি শিল্প কারখানা নির্মাণের ব্যাপারে, সেটি উৎপাদনে যাওয়ার আগে এবং উৎপাদন কালীন সময়ে সব বিষয়ে তদারকি করার জন্য সরকারের পৃথক পৃথক দপ্তর রয়েছে। যে দপ্তরগুলো ভরণপোষণের জন্য সরকার প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করে।`` ``এসব দেখভালের দায়িত্বে যে সব দপ্তর আছে তাদের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন: সাভারের রানা প্লাজা ধ্বস, পুরানো ঢাকার নিমতলী ও চকবাজারের অগ্নিকান্ড, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ড, মগবাজারের অগ্নিকান্ড, সর্বশেষ হাসেম ফুড কোম্পানির অগ্নিকান্ড আপনাদের কি কোন শিক্ষা দেয় না? যদি উক্ত ঘটনাগুলো থেকে কোন শিক্ষা পেয়ে থাকেন তাহলে গরীব, মেহনতি, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। তাদের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের সবার বেতন হয়। দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখে তারাই দেশকে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া অবশ্যই আপনাদের নীতিগত এবং পেশাগত দায়িত্বের ভিতর পড়ে।'' এই কথাগুলো বলার সাহস লাগে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন