রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

কাশ্মীর যে ভারত ভূমি নয়, সেটা পরিষ্কার

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৬ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হোসেন মাহমুদ
বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন গগন অন্ধকার’- কবির বাণীতে উল্লিখিত সেই াঁধারের আবরণে অটুট নীরবতার মধ্যে সারা বিশ্ব যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, যখন মুসলিম বিশ^ও তাদের কথা সবাই ভুলে গেছে, তখনি একটি সহমর্মিতার বাণীভরা কণ্ঠ ধ্বনিত হতে শোনা গেল। সেই কণ্ঠটি যেন বলছেÑ না, আমরা জেগে আছি, আমরা তোমাদের ভুলিনি। তোমরা আছ, মুসলিম উম্মাহ থেকে তোমাদের নাম মুছে যায়নি।
তার একথা যেন একের কণ্ঠে অনেকের সম্মিলিত ধ্বনি। আর তা উচ্চারিত হয়েছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিবের কণ্ঠে, কাশ্মীরের মুসলমানদের উদ্দেশে। যদি তা নিছক বাগাড়ম্বর না হয়ে থাকে তবে তার মূল্য অপরিসীম। সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি নামের কালো, কুৎসিত চাদরে ঢেকে দিয়ে যাদের স্বাধীনতার মহান আকাক্সক্ষা ও সংগ্রামকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পিত চেষ্টা চলছে, তাদের কাছে এ সহমর্মিতার বাণী নতুন প্রেরণাদায়ী বলে গণ্য হবে।
বিশ শতকের অন্তিম পর্ব ও একুশ শতকের ইতোমধ্যে পেরুনো দেড় দশক সময়কে মুসলিম বিশ্বের জন্য ক্রান্তিকাল। গত শতক থেকে বর্তমান পর্যন্ত শুধু ইসলাম অনুসারী হওয়ার কারণেই যেন বিশ্ব মোড়লদের ঘৃণা ও উপেক্ষার শিকার হয়েছে মুসলমানরা। আর তারই পরিণতিতে ধুঁকে মরছে ফিলিস্তিন, কবরের নীরবতা নেমেছে চেচনিয়ায়, কাশ্মীরের রক্তদান এখন ভারতের ভাষায় নিষ্ফল সন্ত্রাস, একপ্রান্তে নীরবে মার খাচ্ছে ফিলিপাইনের মোরো মুসলিম, রোহিঙ্গা মুসলমানরা নির্মূলিকরণের শিকার হয়ে নিশ্চিহ্নপ্রায়, উইঘুর মুসলমানদের আকাক্সক্ষা মাথা কুটে মরছে মৃত্যুর আলিঙ্গন আর চীনের কারাগারগুলোর অন্তরালে। অথচ বিশ্ব মোড়লদের ইচ্ছায় কত সহজেই না ইন্দোনেশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে খ্রিস্টান অধ্যুষিত ক্ষুদ্র দেশ পূর্ব তিমুর এবং সর্বশেষ দক্ষিণ সুদান।
কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের সন্ত্রাসবাদী, জঙ্গি নামের রাষ্ট্রীয় তকমা লাগিয়ে সেখানে চলছে নিষ্ঠুর হত্যাকা-। কাশ্মীরের ইতিহাস শিক্ষিত ব্যক্তি কার জানা নেই? ভারত বিভাগের সময় উপমহাদেশে চির অশান্তির যে বীজ রোপণ করে দিয়ে যায় আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসের ভেদবুদ্ধির মহাগুরু ব্রিটেন, আজো তার জের বয়ে চলেছে কাশ্মীরের মুসলমানরা। ভূস্বর্গ কাশ্মীরে রক্তের ¯্রােত বইছে। ভারতীয় সৈন্য, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশের হাজার হাজার রাইফেলের গুলি কি সহজেই না নিভিয়ে দেয় কাশ্মীরের মানুষের জীবন প্রদীপ। কত মা-বোনের পবিত্র সম্ভ্রম প্রতিনিয়ত লুট করছে এসব সৈন্য। জম্মু বাদে গোটা কাশ্মীর আজ কান্না-আর্তনাদ-আহাজারিতে বেদনা-বিধুর করুণ উপত্যকা। সা¤্রাজ্যবাদী ভারত শক্তিবলে হায়দারাবাদ, জুনাগড়, মানভাদার ও কাশ্মীর নিজের অন্তর্ভুক্ত করে। হিন্দুময় ভারতে মুসলিম প্রধান একমাত্র জনপদ কাশ্মীর। ভূস্বর্গ কাশ্মীর দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। আবার বিশেষ করে অমরনাথসহ হিন্দু ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলোর কয়েকটি কাশ্মীরে অবস্থিত এবং কিছু পবিত্র স্থানে গমনের পথ গেছে এখান দিয়েই। অতএব ধর্মীয় কারণে কাশ্মীর হিন্দু ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীরীরা যেহেতু মুসলমান তাই চিরশত্রু পাকিস্তানের সাথে তাদের যোগদানের একটা আশঙ্কা আছে। ভারত তা কিছুতেই হতে দিতে পারে না। আবার কাশ্মীরের খানিক অংশ মুঠোবন্দি করে বসে আছে চীন। তাই কাশ্মীরকে স্বাধীন হতে দিয়ে ভারত চীনকে কোনো সুবিধা পেতে দিতে পারে না। আর সর্বোপরি রয়েছে হিন্দুদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশটির মনে শত শত বছর মুসলিম শাসনে দিনযাপনের পুঞ্জিভূত গ্লানি ও জ্বালা যার সুদে আসলে শোধ তুলতে চায় তারা এ একুশ শতকে। অতএব, কোনো মূল্যেই ভারত কাশ্মীরকে স্বাধীন হতে কিংবা পাকিস্তানে যোগদান করতে দিতে পারে না।
ভারতের শক্তিশালী মিডিয়া কাশ্মীর নিয়ে যত প্রচারণাই চালাক না কেন, কাশ্মীর যে ভারত ভূমি নয়, তা পরিষ্কার। কয়েক মাস আগে জম্মু ও কাশ্মীরের হাইকোর্ট জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অংশ নয় বলে রায় দেয়। এ রায় নিয়ে গোটা ভারতে তোলপাড় অবস্থা সৃষ্টি হয়। ভারত সরকার এ রায় পরীক্ষা করে দেখছে, তবে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আপিল করেনি। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা ঘোষণার সময় থেকেই কোনো দেশীয় রাজ্যকেই স্বাধীন ভারত তথা ভারত ভূখ-ের বাইরে না রাখার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় নেতৃবৃন্দ। তাই ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫শ’ রাজ্য নয়াদিল্লির নীরব চোখ রাঙানিতে ভিতসন্ত্রস্ত হয়ে তড়িঘড়ি করে নিজেদের মিশিয়ে দেয় ভারতের সাথে। তার বাইরে থাকে মাত্র দু’একটি রাজ্য যাদের পরিণতি হয় করুণ। যেমন হায়দারাবাদ ও জুনাগড়। তারা পাকিস্তানে যোগ দিতে চাওয়ায় ভারত সৈন্য পাঠিয়ে স্বাধীন রাজ্য দুটি দখল করে নেয়। আর কাশ্মীরের রাজা হরি সিং কাশ্মীরকে পাকিস্তানে রাখার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান থেকে আসা উপজাতীয়দের সশস্ত্র অনুপ্রবেশের ঘটনাকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নিজের দেশকে তুলে দেন ভারতের হাতে। তবে সত্য যে তিনি যদি তা নাও দিতেন, যে কোনোভাবেই হোক ভারত কাশ্মীরকে নিয়ে নিত। এও সত্য যে পাকিস্তানি সশস্ত্র উপজাতীয়রা যদি কাশ্মীর দখলের হামলা না করত তাহলে কাশ্মীরের যে অপ্রধান এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে তাও অর্থাৎ সমগ্র কাশ্মীরই ভারতের দখলে চলে যেত। এ হিসেবে বলা যায়, জন্মের পরমুহূর্তেই সা¤্রাজ্যবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যে ভারত, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানকে টুকরো করা, সিকিমকে গ্রাস, নেপালকে চাপে রাখা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সে তার চরিত্র বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের সাথে ফারাক্কা বাঁধ এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রবাহসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ভারতের অস্বস্তিকর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করায় এবং ভারতের জন্য বাংলাদেশকে সকল ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়ায় এখন নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক সরকারি ভাষ্যে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তা এখন এতটাই অনন্য মাত্রায় অবস্থান করছে যে কাশ্মীর নিয়ে সৃষ্ট-ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই প্রথমবার ‘কারো সাথে শত্রুতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বের’ শাশ^ত নীতিকে ছুঁড়ে ফেলে এবং সার্ক নীতি-আদর্শের পরিপন্থী অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ একটি সার্কভুক্ত দেশের সাথে বিরোধে আরেকটি সার্ক দেশ ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থান মুসলিম উম্মাহর সাথে ভ্রাতৃত্ববোধের শাশ^ত আদর্শেরও বিরোধী। কার্যত বাংলাদেশের উচিত ছিল আঞ্চলিক দেশ এবং সার্ক সদস্য হিসেবে ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমনে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করা। কিন্তু তা না করে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংঘাতে হঠাৎ করে ভারতের পক্ষ নিয়েছে যা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয় বলে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা মনে করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট পাকিস্তান সফরকালে ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমিন মাদানি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সঙ্কট নিরসনে সেখানকার জনগণের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি মত প্রকাশ করেন, কাশ্মীর সঙ্কট একটি গণভোটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর সেই গণভোটকে জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটানোর পথ মনে করেন তিনি। মাদানি সংকট উত্তরণের গোটা প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশী¥রে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা। দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে অল্প কয়েকটি দেশই কথা বলছে। ভারতের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে কাশ্মীরিদের গণভোটের সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে ওআইসি মহাসচিব বলেন, গণভোট নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কাশ্মীরিদেরই তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। কাশ্মীরের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্র প্রয়োগেরও নিন্দা জানান আইয়াদ মাদানি। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সনদ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত।’ তিনি আরো বলেন, যখন দখলকৃত কাশ্মীরের প্রসঙ্গ আগে, তখন শুধু বিবৃতিই যথেষ্ট নয় এবং চুপ থেকে এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তিনি আবার কাশ্মীরে নিপীড়ন বন্ধে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারতকে জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার সমাধান মেনে নেয়া উচিত। তিনি কাশ্মীরি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ওআইসি কাশ্মীরবাসীর অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে উচ্চকণ্ঠ থাকবে।
জানা মতে, কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তান ও তুরস্ক ছাড়া ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশের মধ্যে আর কারো কাছ থেকে কোনো কথা শোনা যায়নি। সারা বিশ^ কেন কাশ্মীরে অব্যাহত প্রাণহানি ও নারী ধর্ষণের ব্যাপারে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কাশ্মীরে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। ধর্ষিত হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি নারী। শুধু ৮ জুলাই তরুণ স্বাধীনতাকামী বুরহান ওয়ানিকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী খুন করায় তার প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশের গুলিতে প্রায় ৮০, কোনো সূত্রে ১০৮ জন নিহত হয়েছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরে আরো সৈন্য পাঠাতে শুরু করেছে। সেখানে ইতোমধ্যেই ৭ থেকে ৮ লাখ সৈন্য ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে যে কারণে কাশ্মীর হচ্ছে বিশে^র সর্বোচ্চ সামরিকীকৃত অঞ্চল। বলা দরকার যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরে প্রায় একটানা কারফিউ বলবৎ রেখেছে। সে কারণে কাশ্মীরের ইতিহাসে এবারই প্রথম মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পারেননি। এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীর সীমান্তে উরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দফতরে ৪ জন স্বাধীনতাকামীর হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। এ ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা। দেখা দিয়েছে যুদ্ধের আশঙ্কা। দু’দেশই রণ প্রস্তুতি নিয়েছে। আর এর মধ্যে ভারত পাকিস্তানকে একঘরে করে ফেলার জোর উদ্যোগ শুরু করেছে। তার আড়ালে চাপা দেয়ার অপচেষ্টা চলছে কাশ্মীরের স্বাধীনতা ও গণভোটকে।
কাশ্মীর প্রসঙ্গে ওআইসির এ উদ্বেগ অনেকটা অপ্রত্যাশিত। যাহোক, ওআইসির কাশ্মীর সংকট সমাধানে গণভোটের উপর জোর দেয়ার মধ্যে কাশ্মীরের জনগণের বহু যুগের ইচ্ছারই অনুরণন শোনা গেছে। কিন্তু সবারই জানা, যে কোনো মূল্যে ভারত এ গণভোট অনুষ্ঠান না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদিকে সর্বসাম্প্রতিক খবরে জানা যায়, কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর নিপীড়ন তদন্তে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পাঠাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক। দেশটি ওআইসির মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তাই সংস্থাটির পক্ষে তদন্ত মিশন পাঠানোর এখতিয়ার তুরস্কের আছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে বৈঠককালে তাকে বলেন, শিগগিরই কাশ্মীরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন যাবে। কিন্তু ভারত এ মিশনকে সে দেশে প্রবেশের অনুুমতি দেবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সেক্ষেত্রে ওআইসির কিছু করার আছে বলেও মনে হয় না। উল্লেখ্য, আগস্ট মাসে ভারত কাশ্মীরে সহিংস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
২০০২ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যে গোধরা হত্যাকা-ের জন্য সন্দেহভাজন (যদিও পরে আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে) নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারতকে একটি পরাশক্তিতে পরিণত করছেন। কংগ্রেস শাসনামলে ভারতের এই জানান দেয়া সামরিক চেহারা ছিল না। পাকিস্তানের সাথে বৈরীতা বৃদ্ধি ও তাকে একঘরে করে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা স্পৃহাকে আর কতদিন রক্ত¯্রােতে ¯œাত করাবে ভারত? কেন নয়াদিল্লি কাশ্মীরে গণভোট দেয় না তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য? স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, অরুন্ধতী রায়ের ভারত এ কোন চেহারায় আত্মপ্রকাশ করছে? এত শিবাজীর ভারত, উগ্র হিন্দুপন্থ’ী আরএসএস-সংঘ পরিবারের মুঠোয় বন্দি ভারত। জঙ্গিবিমান, বিমানবাহী জাহাজ, পারমাণবিক সাবমেরিন সজ্জিত যুদ্ধংদেহী সামরিক বাহিনী, আমেরিকার সাথে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে দেয়ার চুক্তি করার মাধ্যমে ভারত নিজের সামরিক পেশি বিস্তার করে কোথায় যেতে চাইছে? এতে কি ভারতীয় জনগণ ও মানবতার কোনো উৎকর্ষ ও কল্যাণ হবে? ১৮ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়া দুঃখজনক। তা নিয়ে ভারতে ও ভারত দরদীদের মধ্যে এত তোলপাড় চলছে। অথচ ৮ জুলাই থেকে আড়াই মাসে ৮০ জন কাশ্মীরি তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় খোদ ভারতসহ বিশ্বের কোথাও কোনো আহাÑ উহু শোনা যায়নি। তা কাশ্মীরিরা মুসলমান বলেই কি? কিন্তু মুসলমান বলে কি তারা মানুষ নয়? তাদের রক্তের কোনো মূল্য নেই? ভারতীয়দের কাছে তাদের নিহত সৈন্যরা শহীদ, কিন্তু নিহত কাশ্মীরিরা কাশ্মীরিদের কাছে কী তা কি তারা ভাবে? ইরাকে কয়েক হাজার ইয়াজিদি আইএসের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছিল। আর কাশ্মীরে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় ২৭ বছরে প্রায় এক লাখ মুসলমান নিহত হলেও, ১০ হাজার নারী ধর্ষিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব একটি কথাও বলে না। যেমন শত শত ফিলিস্তিনি ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে নিহত হলেও পশ্চিমা বিশ্বে গাছের একটি পাতাও নড়ে না। কিন্তু ফিলিস্তিনি বা আরবদের হাতে একজন ইহুদি মারা গেলেও তাদের মধ্যে মাতম ওঠে।
কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রণদামামা বেজে উঠেছিল। তার আওয়াজ এখন একটুু নিচে নেমেছে। এদিকে যুদ্ধ ছাড়াই কাশ্মীরে ৬-৭ লাখ আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সৈন্য মোতায়েন রয়েছে তাদের স্বাধীনতার লড়াই রুখতে, অথচ সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট দেয়া হয় না। কেউ বলে না কাশ্মীরিরা ভারতে থাকতে চায় তো থাকুক, স্বাধীন হতে চাইলে স্বাধীনতা দেয়া হোক কিংবা পাকিস্তানের সাথে যেতে চাইলে যাক। সে সিদ্ধান্ত তাদের নিতে দেয়া হোক। গণভোটে তা নির্ধারিত হোক। তাতে ৭০ বছরের রক্তক্ষয়, আতঙ্ক, অবিশ্বাস দূর হবে। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত পাকিস্তানের ঠোঁট সেলাই হবে, বর্তমান নিত্য যন্ত্রণা থেকে ভারতের মুক্তিলাভ ঘটবে। যে কোনো মূল্যে কাশ্মীরকে ভারতে রাখতেই হবেÑ এ জিদ কি ছাড়া যাবে না, শান্তির শে^তকপোতের সন্ধান করা হবে না? তা যদি না হয়, আজ হোক কাল হোক, দানব শক্তি জয়ী হবে। তখন ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হবে অবশ্যম্ভাবী। তার অর্থ হবে কিয়ামত। এখন শান্তিকামী মানুষের উদ্বেগাকুল প্রশ : কোনটা কাম্য? যে কোনো মূল্যে কাশ্মীরকে ভারতভুক্ত রাখা নাকি কিয়ামত?
য় লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Moklesur Rahman ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৬:৫৮ এএম says : 1
ইসলামিক ইতিহাস বলছে কাশ্মীর বা মুসলিম আমরা সাধীনহবো পৃথীবি কন সরোজন্ত টিকবে না ইন সা আল্লাহ্‌
Total Reply(0)
Md Riazul Hasan ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:২১ এএম says : 4
অামরাও স্বাধীনতার জন্য লডেছি। অাজ কাশ্মীরি বাসীরাও লড়ছে। সে হিসেবে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিবাসীদের সার্পোট দেওয়া যায়। কারণ অামরাই বুঝেছি পরাধীনতা মানে কি?
Total Reply(0)
Sakibul Islam ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:২২ এএম says : 1
কাশ্মিরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাই জাতিসংঘকে
Total Reply(0)
Ahmmed Jony ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:২৩ এএম says : 1
যাই হোক, ভাল একটা নিউজ দেখলাম
Total Reply(0)
MD Mustak Ahmed ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:২৪ এএম says : 1
I agree with you
Total Reply(0)
Atikur Rahman ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:২৫ এএম says : 0
১০০%
Total Reply(0)
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৮:৫৯ পিএম says : 0
100%
Total Reply(0)
Jakir hussain ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:১৩ এএম says : 0
I agree with you
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন