চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ সারা দেশের সব নদীতে শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার উৎসব। দীর্ঘ ৬৫ দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারো ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। এতদিন পর কর্মে ফিরে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি তারা। তবে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীতে আসতে পারছে না বলে অভিযোগ মাছ ব্যবসায়ীদের। একারণে রাজধানীর টাউনহল বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ইলিশ মাছ দেখা গেলেও দাম কমছে না। চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসকরা বলেন, ইলিশ মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দুই জেলায় জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রে মাছ ধরেন জেলে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে তাদের প্রত্যেককে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার চাঁদপুর ও নোয়াখালীর হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপক‚লের হাটগুলোতে ইলিশ মাছে সয়লাব হয়ে যায়। দামও ছিল হাতের নাগালে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণের জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস ৬ জেলার ৫টি ইলিশ অভয়াশ্রমে যাবতীয় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালীর ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদী। আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের কথা বলা হয়েছিল।
দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস ১৯৮৫ সংশোধন করে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৬৫ দিনে যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো হচ্ছে- ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার মদনপুর, চর ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল, এই দুই মাস উল্লিখিত অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময় সংশ্লিষ্ট ছয়টি জেলার তালিকাভুক্ত জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে সহায়তা দেয় সরকার। একাধিক জেলে বলেন, নদী উত্তাল ও আবহাওয়া অধিদফতরের সিগন্যাল থাকায় নদীতে আমরা বেশি দূর যেতে পারিনি। তবুও আমাদের জালে প্রচুর রুপালি ইলিশ ধরা পড়েছে। এবার মাছের আকার তুলনামূলক ছোট। এরপরও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় আমরা খুশি।
কোম্পানীগঞ্জের জেলে মনতোষ দাস জানান, মুছাপুর ক্লোজার ঘাট ও চরএলাহীর চরলেংটা ঘাটে প্রচুর ইলিশ এসেছে। চাপরাশিরহাট, পেশকারহাট, বামনী বাজার, বাংলাবাজার, বসুরহাটসহ সব বাজারে মাইকিং করে ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে কনোর কারণে ঢাকায় যেতে পারছে না। মাছের আড়তে ৩০০, ৫০০ ও ৭০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিধিনিষেধের কারণে ক্রেতা কম থাকায় বাজারের আশপাশে বেশ কয়েকটি স্থানে মাইকিং করে। সে কারণে ক্রেতারা আসতে পারছে না।
নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, ইলিশ মাছ বড় হতে দেয়ার লক্ষ্যেই এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য ইলিশসহ গভীর সমুদ্রের মাছ নিরাপদে মা মাছে রূপান্তর করা। যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। আমরা ধারণা করছি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। চাঁদপুরের জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা জাটকা ছেড়ে দিয়ে বড় সাইজেরগুলোই রাখি। বড় ইলিশের চাহিদাই বেশি। দামও ভালো। তবে করোনার কারণে মাছের বাজার খারাপ। চাঁদপুর জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জানান, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে শুরু করেছে জেলেরা। করোনা মহামারির সুযোগে এবারও নদীতে প্রচুর জাটকা ধরা হয়েছে। সেগুলো দেখভাল করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন