টোকিও অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ইতিহাস গড়তে না পারলেও অলিম্পিকমঞ্চ কাঁপিয়ে সবাইকে চমকে দিলেন আরচ্যার দিয়া সিদ্দিকী। রোমান সানার মতো তিনিও বিদায় নিলেন অলিম্পিক থেকে, তবে আগামীর বার্তা জানান দিয়েই ফিরলেন। দেশসেরা আরচ্যার রোমান সানার বিদায়ের পর টোকিও অলিম্পিক আরচ্যারিতে দিয়া সিদ্দিকীর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন দেশবাসী। বৃহস্পতিবার টোকিওর ইউমেনাস হিমাপার্ক আরচ্যারি মাঠে বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮ টায় শুরু হওয়া রিকার্ভ নারী এককের এলিমিনেশন রাউন্ডে বেলারুশের জিওমিনস্কায়ার কারইয়ানার বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে দূর্ভাগ্যজনকভাবে ৬-৫ সেট পয়েন্টে হেরে যান দিয়া। ফলে দারুণ খেললেও অলিম্পিক থেকে বিদায় নিতে হয় তাকে। মাত্র ১৭ বছরের দিয়া হেরেছেন ঠিকই; তবে তীর-ধনুক হাতে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে লড়তে হয়! বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। এমন দিনে বাংলাদেশের দিয়া সিদ্দিকী খেললেন বাঘিনীর মতোই।
অলিম্পিকের বড় মঞ্চে দাঁড়িয়ে নীলফামারীর কিশোরী তীরন্দাজ বুক চিতিয়ে লড়েছেন শেষ পর্যন্ত। কখনো এগিয়ে গেছেন, কখনো পিছিয়ে পড়ে আবার সমতায় ফিরেছেন। নকআউট পর্বে একজনকে তো হারতেই হবে। ম্যাচ শেষে দিয়ার নামের পাশে লেখা হলো পরাজিত এই যা। কিন্তু বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১২৪ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের সঙ্গে এমন লড়াই, পুরো বিশ্বকেই জানান দিয়েছে দিয়ার সামর্থ্যরে।
বৃহস্পতিবার এলিমিনেশন রাউন্ডে প্রথম সেট জিতলেও শুরুটা ভালো ছিল না দিয়া সিদ্দিকীর। প্রথম তীরে তিনি স্কোর করেন ৬। তবে বেলারুশের আরচ্যার মাত্র ৪ পয়েন্ট স্কোর করায় দিয়া প্রথম সেট জিতে নেন ২৩-২২ পয়েন্টে। শেষ দুই তীরে লাল-সবুজের আরচ্যার স্কোর করেছিলেন ৯ ও ৮। দ্বিতীয় সেটও হয় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দিয়ার ৯, ৭, ৯ স্কোরের বিপরীতে কারইয়ানা করেন ৯, ৮, ৯। ২৬-২৫ পয়েন্টে জিতে ম্যাচে ফিরে আসেন কারইয়ানা। তৃতীয় সেট ২৫-২৫ পয়েন্টে শেষ হলে পয়েন্ট দাঁড়ায় ৩-৩। চতুর্থ সেটে ২৭-২৫ পয়েন্টে হেরে যান দিয়া। ৫-৩ সেট পয়েন্টে পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের বাঘিনী তীরন্দাজ দিয়া সিদ্দিকী পঞ্চম সেটে এসে ২৭-২৫ পয়েন্টে জিতে টাই করেন। তখন খেলার ফলাফল নির্ধারণ হয় টাইব্রেকার শুট অফে। একটা করে তীর ছোড়ার পালা। ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়ে যায় প্রথম তীরেই। বেলারুশর কারইয়ানা ১০ স্কোর করলেও দিয়া করেন ৯। ফলে টাইব্রেকারে ৬-৫ সেট পয়েন্টে জয় তুলে নেন কারইয়ানা। টোকিও অলিম্পিকে পুরুষ রিকার্ভ ইভেন্টে রোমান সানা বৃটেনের টম হলকে হারিয়ে শেষ ষোলতে ওঠার লড়াইয়ে হেরে যান। দিয়া বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ড থেকেই। তবে গেমসের আরচ্যারিতে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলাই উপহার দিয়েছেন তিনি। গেমস থেকে বিদায় নিয়ে খানিকটা হতাশ ছিলেন দিয়া। তাই তো খেলা শেষে টোকিও থেকে বাংলাদেশ আরচ্যারি দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক বলেন,‘কিছুক্ষণের জন্য তার মন খারাপ ছিল। পরক্ষণে বুঝেছে তার কাজ সে অসাধারণভাবে সম্পন্ন করেছে। আমিও তাকে বুঝিয়েছি যে সে দুর্দান্ত ফাইট করেছে। শুধু আমিই নই সবাই তার প্রশংসা করছে ফলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দিয়া সবটুকুই করেছে, যতটুকু সে পারে। অসাধারণ এক ম্যাচ খেলেছে।’
রোমান শেষ ১৬ তে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন আর দিয়া এলিমিনেশন পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন। টোকিও অলিম্পিক আরচ্যারি থেকে বাংলাদেশের বিদায় হলেও প্রাপ্তি দেখছেন অনেকে। কোচ ফ্রেডরিক আরো বলেন, ‘রোমান ও দিয়া দুজনেই ভালো করেছে। আরো অনুশীলন ও সুযোগ পেলে তারা উভয়ই অনেক বেশি ভালো করবে। বাংলাদেশে তাদের উত্তরসূরীও রয়েছে।’
দিয়া সিদ্দিকীর হারের মধ্যে দিয়ে টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের ৬ ক্রীড়াবিদের ৩ জনের বিদায় হলো। সবার আগে বিদায় নিয়েছিলেন শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি। পরে রোমান সানা ও দিয়া। গেমসে এখন থাকলেন লাল-সবুজের তিন প্রতিনিধি- সাঁতারু আরিফুল ইসলাম, জুনাইনা আহমেদ ও অ্যাথলেট জহির রায়হান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন