চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মধেই আগামী রোববার (১ আগস্ট) থেকে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বহু মানুষকে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ায় ঈদ করতে বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকরা কিভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা আরোপিত বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত রাখা হলো। এই সিদ্ধান্তের ফলে রোববার সকাল থেকেই খুলছে রফতানিমুখী সব শিল্প-কারখানা। ব্যবসায়ীদের দাবির একদিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এলো।
শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে সুজন আহমেদ লিখেছেন, ‘‘ঈদের আগে লকডাউন তুলে শ্রমিকদের গ্রামে আসার সুযোগ দিলেন। ঈদের পরে গার্মেন্টস সহ গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের বাসায় বসিয়ে রাখলেন। এখন গণপরিবহন বন্ধ রেখে ১ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খুলে দিলেন। এখন শ্রমিকরা কিভাবে কর্মস্থলে পৌঁছাবে? শ্রমিকদের কি আপনারা মানুষের মধ্য ধরেননা? যাদের পরিশ্রমে দেশের অর্থনৈতিক বাজার ঠিক রাখেন তাদের মর্যাদা দিতে শিখেন।’’
সরকারের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কঠোর সমালোচনা করে শরিফুদ্দিন মাহমুদ ইমন লিখেছেন, ‘‘কোন ডিসিশনের আগা-মাথা-গোড়া কিছু নাই। সকালে এক ডিসিশন, বিকালে আরেক ডিসিশন। একবার একে খুশি করতে এক ডিসিশন দেয়, আরেকবার ওকে খুশি করতে ডিসিশন দেয়। মাঝখান দিয়ে পড়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। প্রতিদিন ২০০+ মারা যাওয়ার এই পরিস্থিতির মধ্যেও যদি কলকারখানা খোলা নিরাপদ হয়, তবে সবকিছুই খুলে দেন স্বল্প পরিসরে হলেও। নাকি কারখানার মালিকদের সাথে চুক্তি হয়েছে করোনার, শিল্পকারখানায় সে আসবে না কিন্তু অন্য জায়গায় আসবে? খুললে সব খুলে দেন, বন্ধ রাখলে সব বন্ধ রাখেন। ডিসিশন একটাতে থাকেন। তামাশা বন্ধ করেন। যত্তোসব ফাইজলামি। এতগুলা মানুষ একদিনের মধ্যে গাদাগাদি করে আপনাদের মাথার উপর দিয়ে আসবে? এভাবে একসাথে আসলে তো সংক্রমণ আরো ডাবল বাড়বে।’’
ফিরোজ আলম লিখেছেন, ‘‘সঠিক সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন ধরে সবকিছু বন্ধ করে রাখা কোন সমাধান নয়। বরং কিধরনের এবং কিভাবে স্বাস্থ সচেতনতার বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে সবকিছু খোলা রাখা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা করা উচিত। সেই সাথে চলমান টিকাদান কর্মসূচি আরও বেগবান করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সবশেষে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের প্রার্থনা, হে আল্লাহ আপনি আমাদের সকলকে স্বাভাবিক জীবন যাপন ফিরিয়ে দিন।’’
মোঃ মনির হোসাইন লিখেছেন, ‘‘কল-কারখানা খুলে দিলে, গ্রামের বাড়ি যাওয়া শ্রমিকেরা কিভাবে কাজে যোগদান করবে? কাজে যোগদান করতে না পারলে, বেশির ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকই চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এবং যদি চাকরি চলে যায়, এর দায় ভার কে নিবে? লকডাউন এর নামে সাধারণ শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করা হোক।’’
সোঃ শাজামাল ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে আমি ধিক্কার জানাই। আপনারা যদি মনে করেন গার্মেন্টস শিল্প কলকারখানা যারা কাজ করে এরা মানুষ নয় এই দেশে গরীব দিনমজুর মানুষগুলো নিরাপদ এ বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই শুধু নিরাপদে বেঁচে থাকবে প্রভাবশালী শিল্পপ্রতি আর আমলাতন্ত্র তাহলে আপনাদেরকে সাধুবাদ জানাই। তবে দয়া করে লকডাউন নামের নাটকগুলো অবিলম্বে বন্ধ করুণ আর যদি খুলতেই সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দিন। মনে রাখবেন গার্মেন্টস শিল্প কলকারখানা যারা কাজ করে এরাও আপনাদের মত মানুষ কারো না কারো কলিজার টুকরা।’’
রাশেদ করিম রাজু লিখেছেন, ‘‘গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়ে গার্মেন্টস কর্মী ভাইদেরকে নিরাপদে কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। তা নাহলে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গার্মেন্টস কর্মীরা কর্মস্থলে পোঁছাবে কি ভাবে? আর যদি গণপরিবহন খুলে না দেওয়া হয় তাহলে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখিনা।’’
খোসরু জাহিদের প্রশ্ন, ‘‘সরকার তার কোন সিদ্ধান্তেই অটল থাকতে পারছে না, এখন আমার প্রশ্ন, কঠোর লকডাউন এখন ঢিলে হলো, তো ,কঠোর লকডাউনের জন্য যে জরিমানা গুলো করা হয়েছে, তা কি ফেরত দেয়া হবে?’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন