ভোলার দৌলতখানের মেঘনায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌদস্যুরা। প্রতিদিনই দস্যুতার শিকার হচ্ছে কোনো না কোনো নৌকা। এতে জাল, নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন জেলেরা। এমনিতে ভরা মৌসুমেও মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। তবুও কাঙ্খিত ইলিশের আশায় নদীতে নামলেই দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ঘাটে ফিরতে হয় জেলেদের। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
গত এক মাসে মেঘনা নদীতে অন্তত অর্ধশত মাছ ধরা নৌকায় ডাকাতি হয়েছে। নৌদস্যুরা এসব নৌকার জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে নিচ্ছে। নৌকার মালিকরা নৌদস্যুদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে টাকা দিলেই মুক্তি পায় জিম্মি হওয়া জেলেরা। বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে জেলে ও নৌকা ছাড়িয়ে আনতে হয়। মেঘনায় দস্যুতার শিকার হয়েও প্রাণভয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানাতে ভয় পায় জেলেরা। গত শনিবার ভবানীপুর, ঘোষের হাট, এছহাক মোড় মাছঘাটে সরেজমিন গিয়ে জেলেদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এসময় জেলেদের চোখে-মুখে ভীতির ছাপ ছিল স্পষ্ট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেরা জানায়, গত এক মাসে দৌলতখানে শতাধিক নৌকায় ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। গত ১৯ জুলাই ভোর রাতে সৈয়দপুর ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন লাভু মিয়ার একটি নৌকায় হানা দেয় দস্যুরা। ওই সময় প্রাণভয়ে নৌকার মাঝি লোকমান ও কাদের নদীতে ঝাঁপ দেয়। বাকি জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যায় দস্যুরা। পরে মুক্তিপণ দিয়ে নৌকা ও জিম্মি হওয়া জেলেদের ছাড়িয়ে আনে। নিখোঁজ দুই জেলের সন্ধান এখনও মেলেনি। জেলেরা জানায়, এর আগে গত ২৬ জুন রাতে মেঘনার এছহাক মোড়, বোরহানউদ্দিনের হাকিমুদ্দিন তজুমদ্দিন এলাকায় ৬টি মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ডাকাতি হয়েছে। এর মধ্যে জসিম মাঝি ও কামাল মাঝির দু’টি নৌকাসহ জেলেদের ছাড়িয়ে আনতে দস্যুবাহিনীকে এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এসব ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানাতে ভয় পায় অসহায় জেলেরা। জেলেদের ভাষ্য, প্রশাসনকে জানালে আমরা নদীতে গিয়ে আর জীবন নিয়ে ফিরতে পারবো না।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান বলেন, জেলেরা মাছ ধরে ফেরার পথে বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিনের সীমান্তবর্তী বাকের খাল, স্লুইজ খালসহ মেঘনার তৎসংলগ্ন এলাকায় দস্যুরা হানা দিয়ে জাল, নৌকা ও মাছ নিয়ে যায়। পরে নৌকাসহ জেলেদের জিম্মি করে গোপন আস্তানায় নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। এসব বিষয়ে নৌপুলিশের হাকিমউদ্দিন ক্যাম্পের ইনচার্জ রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা লোক মারফত জানতে পেরেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। মেঘনায় নৌপুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। যে সমস্ত তথ্য পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন