রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

নিহার বানু থেকে নিতু মন্ডল

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

আমি তখন কলেজে পড়ি। আমাদের পাশের গ্রামের একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেল। মেয়েটি তখন নাইন-টেন-এ পড়তো। দেখতে খুবই সুন্দরী। অনেক দিন দূর থেকে দেখার পর একদিন সাহস করে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালাম। একটু নির্জনে নিয়ে ওর হাতে গুঁজে দিলাম একটি ছোট্ট চিঠি। তাতে আমার হৃদয়ের ভালোবাসা আর ওকে পাবার প্রাণের আকুতি সংক্ষেপেই বলেছিলাম। মেয়েটি চিঠিটি নিয়ে চলে গেল। কয়েকদিন পর সে আমাকে ডাকলো। আমি পরম প্রাপ্তির অপার আনন্দে ছুটে গেলাম ওর কাছে। কিন্তু আমার আশার গুড়ে এক মুঠো বালি ছড়িয়ে দিয়ে সে বলল- ‘দুঃখিত। আপনার প্রস্তাবে আমি সাড়া দিতে পারছি না। তবে, এলাকার বড় ভাই হিসেবে আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। সেটা ধরে রাখবেন- এটা আমার বিশ্বাস।’ আমি ওর মুখের দিকে আর তাকাতে পারলাম না। মাথা নিচু করে চলে এসেছিলাম। কষ্ট পেয়েছিলাম, না পাওয়ার বেদনায় আচ্ছন্ন হয়েছিলাম। তবে, ক্রুদ্ধ হইনি, উন্মত্ত হয়ে কোনো কিছু করিনি। আমার প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এ রকম আমার ওকে ভালো লেগেছিল, কিন্তু ওর যে আমাকে ভালো লাগবে এমন তো কথা নেই। আমার প্রস্তাব গ্রহণ এবং প্রত্যাখ্যান দুটো করারই অধিকার ওর আছে। আর ‘জোর করে ভালোবাসা হয় না’ এটা বইপত্র পড়ে আগেভাগেই আমার উপলব্ধিতে ছিল। কিন্তু আজকাল এসব কী দেখছি! প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেই ‘প্রেমিক পুরুষ’ হয়ে উঠছে হন্তারক! ফুলের পরিবর্তে তার হাতে উঠে আসছে তীক্ষè ছোরা! এসব দেখে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এক আদিম বর্বর সমাজে আমরা বসবাস করছি। প্রাগৈতিহাসিক যুগ আমরা দেখিনি। তখনও এ ধরনের ঘটনা সমাজে ঘটেছে কী না জানি না। তবে, একবিংশ শতাব্দীর এ ‘সুসভ্য’ সমাজে মানুষও যে মুহূর্তেই হিংস্র শ্বাপদ জন্তু হয়ে উঠতে পারে তা এখন বিশ্বাস না করে উপায় নেই।’
উপরের কথাগুলো আমার নয়। আমার ঘনিষ্ঠ একজনের। মাদারীপুরের কালকিনি’র নবম শ্রেণীর ছাত্রী নিতু ম-লের নির্মম হত্যাকা-ের খবর পড়ে তিনি ওপরের কথাগুলো বললেন। তার কথা মর্মার্থ হলো- একজন মানুষকে অপর একজন মানুষের ভালো লাগতেই পারে। এ ভালো লাগা বা ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া দোষের কিছু নয়। তেমনি যাকে ভালো লাগলো তারও ভালো লাগা মন্দ লাগার বিষয় আছে। এটা তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত অভিরুচি এবং অধিকারের বিষয়। এখনো জোর খাটানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেই একেকজন ‘প্রেমিক পুরুষ’ যেভাবে আজরাইলের প্রতিমূর্তি ধারণ করছে তাতে একথা নিশ্চয়ই বলা যায় যে, আমাদের এ সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন চরমে পৌঁছেছে, এখানে এখন এক শ্রেণীর মানুষের মনে জোর যার মুল্লুক তার নীতি বেশ পাকাপোক্ত আসন গেড়েছে। স্বার্থান্ধ মানুষ এখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন সব অপকর্ম করছে, যা তাদের নিজেদের জীবনেও ডেকে আনছে ভয়ংকর বিপর্যয়।
কালকিনির নিতু ম-লকে হত্যা করেছে তাদেরই প্রতিবেশী মিলন ম-ল, যার সাথে মিতুর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ধরে নিলাম সে নিতুকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু মিলনকে ভালোবাসা না বাসার অধিকার তো নিতুর রয়েছে। তাহলে কেন মিলন প্রাণসংহারী মূর্তি ধারণ করল। মাত্র কিছুদিন আগে একমাস পেরোয়নি এখনো রাজধানী ঢাকায়ও এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা। কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে ছুরিকাঘাতে খুন করলো দর্জি দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল। কারণ রিশা ওর প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। রিশাকে খুন করে ওবায়দুল সে গ্রেফতার হয় এক গোশত বিক্রেতার বুদ্ধিমত্তায়। সে এখন কারাগারে বন্দি বিচারের অপেক্ষায়। আর নিতুর হত্যাকারী মিলন সাথে সাথেই পাকড়াও হয়েছে এলাকাবাসীর ত্বরিত তৎপরতার কারণে।
রিশা এবং নিতু দেশের দুই এলাকার দু’টি মেয়ে। প্রায় একই বয়সের। ওদের ছবি পত্রিকার পাতায় দেখার পর হৃদয়টা মোচড় দিয়ে ওঠেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। নিষ্পাপ সে মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকেই অশ্রু সজল হয়েছেন। জীবন শুরু না হতেই জীবনের এমন মর্মান্তিক অবসান কারো তো কাম্য ছিল না! এ যেন পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই কোনো এক মৌ লোভী বিষাক্ত ভ্রমরের তীব্র আঘাতে বৃন্ত থেকে সুন্দর ফুলের ঝরে পড়া।
আমাদের সমাজে হত্যা নতুন কোনো ঘটনা নয়। নানা কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। সমাজের একটি অংশের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, এটা একটি ঘটনা ঘটানোর সময় নিজের পরিণতির কথাও চিন্তা করে না। এটা এটাও ভুলে যায় যে, একটি মানুষকে হত্যার সাথে সাথে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে, ধ্বংস হয়ে যায় অনেক শুভ চিন্তা। নিতু ম-ল এবং সুরাইয়া আক্তার রিশা যদি পরিপূর্ণ জীবন অতিক্রান্ত করতে পারতো, তাহলে তাদের কাছ থেকে এ সমাজ, এ পৃথিবী হয়তো ভালো অনেক কিছু পেতে পারতো। কিন্তু ঘাতকের ছোরার সুতীক্ষè ফলা যে সম্ভবনার সূর্যকে মৃত্যুর কালো পর্দায় চিরতরে আচ্ছাদিত করে দিল!
নিতু কিংবা রিশাই যে কেবল প্রেম প্রত্যাখ্যাত হিংস্র যুবকদের জিঘাংসার শিকার হয়েছে তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। সেসব মর্মান্তিক ঘটনার খুব কম অংশই গণমাধ্যমে আসে আমরা জানতে পারি। যাদের বয়স পঞ্চাশের ওপরে তাদের হয়তো রাজশাহীর ‘নিহার বানু’ হত্যা মামলার কথা মনে আছে। ১৯৭৭ সালে সে মামলার কার্যক্রম প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছিল। নিহার বানু ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহমদ হোসেন বাবু আকৃষ্ট হয় সুশ্রী নিহার বানুর প্রতি। প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। নিহার সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বারবার প্রত্যাখ্যাত হয় হিংস্র হয়ে ওঠে বাবু। একদিন নিহার বানুকে সে হত্যা করে। লাশ গুম করে রাখে তারই এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বাড়িতে, মাটির নিচে। পরে সব ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। মামলার রায়ে বাবুর ফাঁসির আদেশ হয়। কিন্তু তা আজো কার্যকর হয়নি। কারণ হত্যাকা- ঘটিয়ে সে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আর ফিরে আসেনি। ওই একই সময়ে আরেকটি হত্যাকা- বেশ আলোড়ন তুলেছিল। ডা. ইকবাল কর্তৃক সংঘটিত সে হত্যাকা-টি ‘সালেহা হত্যা’ নামে পরিচিত লাভ করেছিল। কাজের মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় স্ত্রী সালেহা বেগম স্বামী ডা. ইকবালের জিঘাংসার শিকার হয়েছিল। বিচারে ডা. ইকবালের ফাঁসি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আরো একটি নৃশংস হত্যাকা- দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ১৯৮৯ সালে সংঘটিত সে হত্যাকা-ের হোতা ছিল আরেক স্বামী প্রবর মনির হোসেন, যে তার নব বিবাহিতা স্ত্রী শারমীন রীমাকে পরিকল্পতিভাবে হত্যা করেছিল। রীমা হত্যাকা- সেদিন সমাজের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল। পত্র পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছিল। ঘাতক মনিরের বাবা-মা প্রভাবশালী হলেও জনসচেতনতা আর মিডিয়ার প্রহরার কারণে তারা ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মুনিরের ফাঁসির আদেশ এবং তা কার্যকর হয়েছিল।
ঘটনাগুলো এখানে উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, এ ধরনের হত্যাকা- মাঝে মাঝে সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলে। মানুষ এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে উচ্চকণ্ঠে আওয়াজ তোলে। কিন্তু তারপরও অপরাধ প্রবণতা কমছে না। নিহার বানু, সালেহা এবং রীমা হত্যার ঘটনা যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল, জনগণের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করেছিল, তাতে সমাজে একটি প্রতিবাদী তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল। আর যেন এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়- এমন আশাবাদ তখনও ব্যক্ত করা হয়েছিল এখনো হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি? নিহার বানু, খালেদা বেগম কিংবা শারমীন, রীমার হত্যাকা-ের মধ্য দিয়েই সে অশুভ প্রবণতা শেষ হয়ে যায়নি। বরং বলা চলে বর্তমানে তা বহুলাংশে বেড়েছে। কেন এই বৃদ্ধি? এ প্রশ্নের জবাব এক কথায় কেউ-ই হয়তো দিতে পারবেন না। তবে, একটি বিষয়ে সবাই হয়তো একমত হবেন যে, অপরাধের শাস্তি না হওয়াই অপরাধ প্রবণতার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে নিজ বাসায় রহস্যজনকভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার এবং মেহেরুন রুনি। আজ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। চলতি বছরেই কুমিল্লা সেনা নিবাস এলাকায় খুন হয় কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। সে হত্যাকা-ের হোতাদের গ্রেফতার তো দূরের কথা তদন্তই ঘুরপাক খাচ্ছে ডিএনএ টেস্টসহ নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আবর্তে। অতি সম্প্রতি যে হত্যাকা-টি দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেটি হলো চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা, মামলাটি নিয়ে যেসব কায়কারবারের খবর গণমাধ্যমে এ পর্যন্ত এসেছে তাতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, এটাও সাগর-রুনি এবং তনু হত্যা মামলার পরিণতি বরণ করবে হয়তো। এসব হত্যাকা-ের মূল নায়ক যারা তাদের নাম পরিচয় কখনো জনসমক্ষে প্রকাশ হবে কী-না তা নিয়ে কমবেশি সবারই ঘোরতর সন্দেহ সংশয় রয়েছে। আর তাই যদি ঘটে তাহলে এসব হত্যামামলার ক্ষেত্রে ‘বিচারের বাণী যে নীরবে নিভৃতেই অশ্রু বিসর্জন করবে সেটা বলাই বাহুল্য।
উপর্যুক্ত হত্যাকা-গুলোর সাথে নিতু কিংবা রিশার হত্যাকা-ের কোনো মিল নেই এটা ঠিক। তবে সব হত্যাই জঘন্যতম অপরাধ। সেটা যেখানে যে কারণেই ঘটুক না কেন। একটি হত্যাকা-ের হোতা বা হোতারা যখন নানা ফিকিরে পার পেয়ে যায় তখন অপরাধ প্রবণ ব্যক্তিদের মনে এ আশার বাতি প্রজ্জ্বলিত হয় যে, অপকর্মটি করে ফেললে যে কোনো কায়দায় রেহাই পাওয়া অসম্ভব হবে না। আর এ ধারণার বশবর্তী হয়েই চোখের সামনে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তির প্রমাণ থাকার পরও কেউ কেউ হত্যার মতো জঘন্যতম পন্থা অবলম্বনে পিছ পা হয় না।
গোড়ার কথায় ফিরে যাওয়া যাক। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, নীতি বা মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত কারণেই আমাদের সমাজে নানা ধরনের অপরাধ কর্ম একের পর এক সংঘটিত হচ্ছে। আর এসব অপরাধ প্রবণতার ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির অন্যতম কারণ বিচার এবং সাজা না হওয়া এটাও অনস্বীকার্য। তবে, নৈতিক শিক্ষার অভাবজনতি কারণে অনেকে যে বিপথে যাচ্ছে সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। যে দুই যুবক রিশা ও নিতুর প্রাণসংহারে প্রবৃত্ত হয়েছে তাদের মধ্যে যে মানবিক মূল্যবোধের ছিটো ফোঁটাও নেই এটা না বললেও চলে। হয়তো মানবিক মূল্যবোধের এ বিষয়গুলো সম্বন্ধে তারা কোনো শিক্ষা কোথাও থেকেই পায়নি। যার ফলে স্বার্থজনিত কারণে মুহূর্তে তাদের অন্তরে লুকিয়ে থাকা হিংস্র পাশবিকতা জেগে ওঠে। আর সে হিংস্রতাই ওবায়েদুল আর মিলন ম-লের মতো অপরিণামদর্শী যুবকদের খুনিতে পরিণত করে।
সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা বলে থাকেন যে, মানুষের মধ্যে যখন মনুষ্যত্ববোধ লোপ পায়, আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করাই যখন মানুষের প্রধান অভীষ্ট হয়ে দাঁড়ায়, তখনই সমাজ সংসারে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। বর্তমানে আমাদের সমাজে অপরাধ প্রবণতার যে ব্যাপক বিস্তৃতি তার পেছনে একই কারণ নিহিত এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ অশুভ প্রবণতার কী অবসান হবে না? নাকি এ ভাবেই আমরা শ্বাপদ সংকুল অরণ্য সদৃশ এ সমাজে প্রতিনিয়ত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করব? একশ্রেণীর মানুষের মনে যেভাবে পশুত্ব তীব্র হয়ে উঠছে তাতে এখানে মান-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিতু এবং রিশার করুণ পরিণতির পর দেশের প্রতিটি পিতা-মাতা আজ শঙ্কিত তাদের কিশোরী বা তরুণী মেয়েটির জীবন ও ইজ্জত নিয়ে। কোথায় কোন ওবায়দুল বা মিলন ম-ল তীক্ষè ছোরা হাতে ওঁৎপেতে আছে কে জানে!
এ বিভীষিকার অবসান হওয়া দরকার। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিরোধ। প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। তার চেয়ে বেশি দরকার আইন প্রয়োগে দ্বিধাহীনতা। কোনো হত্যাকা-ের তদন্তই যেনো ভিসেরা রিপোর্ট কিংবা ডিএনএ রিপোর্টের চোরাবালিতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
নিহার বানু, নিতু ম-ল কিংবা রিশার মতো আর কেউ যেন এমন নৃশংসতার শিকার না হয় আমাদের কামনা সেটাই। আমাদের সন্তানেরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে চলাফেরা করবে আমরা সে পরিবেশ চাই। আর সে জন্য যতো কঠোর হতে হয় সরকারকে তাই হতে হবে। যেনো ‘অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়’ দুষ্কৃতকারীদের মন থেকে এ ধারণাটা চিরতরে মুছে যায়।
 লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সড়যড়হ৯১@ুধযড়ড়.পড়স

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন