জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট কোয়ার্টার রয়েছে ৪৭৪টি। তবে এর মধ্যে ১৫৯টি কোয়ার্টার খালি পড়ে আছে। যা মোট বাসার এক তৃতীয়াংশের বেশি। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্তে¡ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়াটারে অবস্থান করছেন না। এমনকি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বরাদ্দ বাসায় থাকেন না প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলমসহ কয়েকজন হল প্রাধ্যক্ষ। কোয়ার্টারগুলোর মান, পরিবেশ ও অধিক ভাড়া নেওয়ার কারণ দেখিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এসব কারণে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের একমাত্র আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তো বটেই, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও শতভাগ আবাসনের নিশ্চয়তা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আবাসিক আল বেরুনী হলের পাঁচটি বøকে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাগাভাগি করে থাকতেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকতে যে পরিমাণ টাকা ভাড়া দিতে হয় তার থেকে কম টাকায় এমনকি অর্ধেক টাকাতেও ক্যাম্পাসের বাইরে ভালো বাসায় থাকা সম্ভব। এ ছাড়া কোয়ার্টারের অবস্থা অনুন্নত। যে কারণে বাইরে থাকতেই পছন্দ করছেন তারা। ভালো মানের বাসা হলে কর্মচারীরা ভিতরেই থাকবে। কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কম টাকায় আরও বড় এবং ভালো বাসা নিয়ে বাইরে থাকা যায়। সুযোগ-সুবিধাও বেশি বাইরের ভাড়া বাসাগুলোতে। বাসাগুলো যদি ভালোভাবে মেরামত করে দেওয়া হয়, তাহলে কর্মচারীরা সেখানে উঠবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুন বলেন, ‘অনেক শিক্ষক বাইরে বাড়ি তৈরি করে থাকছেন। আবার বাইরে তুলনামূলক কম বাড়ি ভাড়া দিয়ে অনেকে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে তৈরি এই বাসাগুলো জীবনযাত্রার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাসাগুলোর আধুনিকায়ন দরকার।’ এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, কোয়াটার ভবন যখন তৈরি হয় তখন পুরাতন মডেলে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় উন্নতমানের ভবন তৈরি হওয়াতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগই আশেপাশের এলাকায় থাকেন। এদিক থেকে ক্ষতি তো কিছু আছেই। তবে আমরা এখন উন্নতমানের কোয়ার্টার তৈরি করছি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রো-ভিসির (শিক্ষা) জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত কোয়ার্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে প্রো-ভিসির ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার অফিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে নেন বাসা ভাড়ার টাকা। এ বিষয়ে অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘বরাদ্দ বাসায় থাকা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাসায় থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে থাকার জন্য বলা হয় তাহলে আমি বরাদ্দকৃত বাসায় অবস্থান করব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন