রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাদা বক-কালো পানকৌড়ির নিরাপদ মেলা

ফুলবাড়ীর গ্রামটি এখন পাখির জন্য বিখ্যাত

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৫ এএম

গাছের ডালে বসা সাদা বক আর পানকৌড়ির কলকাকলি পথচারীর মনোযোগ কাড়বেই। পূর্বের আকাশের অন্ধকার কেটে যাওয়ার পর থেকেই শুরু পাখির কিচিরমিচির গান। শেষ বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই গানের শব্দ আরো বেড়ে যায়। মহাসড়কের পাশে বাঁশ ঝাড় ও ছোট ছোট গাছের ডালে বসে হাজারো বক পাখির মেলা।
এ ছাড়া আশপাশের আরো কয়েকটি গাছের ডালে রয়েছে বক আর পানকৌড়ির দৃষ্টিনন্দন অবস্থান। ধবল বক আর কালো রঙের পানকৌড়ির এমন উপস্থিতি সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এই দুই প্রজাতির পাখির এমন উপস্থিতির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বলিহরপুর গ্রামে। এলাকাবাসীর সতর্ক দৃষ্টি আর ভালোবাসায় বলিহরপুর গ্রামে প্রতিদিন পাখি দেখতে আসেন বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য পাখিপ্রেমি।

কেউ পাখি শিকার করতে গেলে গ্রামবাসীদের তোপের মুখে পড়েন। অতিথি পাখিগুলোকে স্থানীয়রা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ভালোবাসেন। হয়তো সে জন্যই নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গাছের ডালে এবং বাঁশঝাড়ে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির দল রাত যাপন করে।
ভোর হলেই কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মা পাখিরা ফিরে না আসা পর্যন্ত গ্রামের মানুষ বাসা, ডিম ও বাচ্চাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে।

এমনি করে এলাকায় প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কলতানে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামের গাছে গাছে যেন সাদা-কালো ফুল ফুটে রয়েছে। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে পাখিগুলো।
এই গ্রামের সুবাস চন্দ্র রায় ও দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, গ্রামটিকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পাখি প্রজনন কেন্দ্র’ ঘোষণা করা হলে পাখির প্রতি মায়া-মমতা ও ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকারি ভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো এই এলাকায় শুধু সাদা বক পাখি ও কালো পানকৌড়ী নয়, অন্যান্য প্রজাতির পাখিরাও প্রজননের জন্য তাদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে পারে।
এলাকাবাসীরা জানান, পাখিগুলো বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে আসতে শুরু করে এবং প্রজনন শেষে বাচ্চাগুলো বড় হওয়ার পর ভাদ্র মাসে চলে যায়। প্রায় ৫ মাস তারা এখানে অবস্থান করে । গ্রামের পাশের নদী-নালা, খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে মাছ পোকামাকড় ও শামুক-ঝিনুক খেয়ে থাকে। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম দেয়া, ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটানো, বাচ্চা বড় করা সব কিছুই এখানেই তারা করে।
গাছ ও বাঁশঝাড়ে পাখি প্রকৃতিকে অপরূপ করে তুলেছে। বলিহরপুর গ্রামে সাদা বক ও পানকৌড়ি বছরের ৫ মাস অবস্থান করে চলে যায়। বছরের চাকা ঘুরলে আবার ঠিক সময়ে ফিরে আসে। এভাবে তাদের আসা-যাওয়া চলছে ৭ বছর ধরে।

ফুলবাড়ী শহর থেকে দেখতে পাখি দেখতে এসে ডা. মাহাফুজ আলম বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমানে দেখতে পাওয়া বড়ই কঠিন। সকাল-সন্ধ্যায় হাজারো পাখির কলকাকলির শব্দ অন্যরকম এক আবহ তৈরি করে। আর তা খুবই আনন্দদায়ক ও মনোমুগ্ধকর।
বনবিভাগের উপজেলা বিট কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের অভায়াশ্রম নিরাপত্তায় সবসময় খোঁজ-খবর রাখা হয়। তবে পাখিদের রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন