সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা

খালি নেই সিট অক্সিজেন সঙ্কট

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনার অপ্রত্যাশিত দাপুটে কাবু গোটা সিলেট। মনেবলে লেগেছে ঝড়। ভরসার স্থানগুলোও নড়েবড়ে। হাসপাতালে নেই সিট খালি রয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চলমান করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ৮ গুণ চাহিদা বেড়েছে অক্সিজেনের। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পারছে না চাহিদা মেটাতে। সেই সঙ্কটে মৃত্যুর পথ খুলে গেছে করোনা রোগীদের। সেকারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে টালবাহানা করছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং যেসব রোগীর অক্সিজেন সাপোর্ট কম লাগছে তাদের ভর্তির ক্ষেত্রেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।


এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের চলছে আর্তনাদ। অনেক চেষ্টা করেও স্বজনরা পাচ্ছেন না অক্সিজেন সাপোর্ট। নির্দয়ের মতো রোগীদের জরুরি বিভাগ থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৃত্যুর পরিসংখ্যানে কেবল হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী করোনা রোগীর পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগী অনেক বেশি। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পূর্বে সিলেটে দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার কিউবিক মিটার। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ হাজার কিউবিক মিটার। জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেটে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। এরপর থেকে সিলেটে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দেয়। এখনো চলমান রয়েছে সেই সঙ্কট। সরবরাহী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে ও স্পেক্ট্রার সিলেটের বিক্রয় এজেন্টরা নির্ধারিত উৎপাদনের মধ্যে বাড়তি চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কোনো মতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ হাজার লিটার ও শামসুদ্দিনে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পারছেন তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন প্রতি একদিন পর পর প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে সিলেটে অক্সিজেনের গাড়ি এসে পৌঁছে না। এতে করে আরো আশঙ্কা বিদ্যমান হয় অক্সিজেন সঙ্কটের। সিলেট বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। হাসপাতালে রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন প্রতি দুই দিনে প্রয়োজন হয় ১০হাজার লিটার অক্সিজেনের। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পূর্বের মতো নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে না। অক্সিজেন সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে শামসুদ্দিনে সিরিয়াস রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। যেহেতু একটি কোভিড ডেডিকেডেট হাসপাতাল, এ কারণে এখানে রোগী সিরিয়াস রোগী সবসময় বেশি থাকে। এছাড়া আইসিইউতে সব সময় রোগীর চাপ। জায়গা না থাকায় অনেক রোগী ভর্তি করতে না পারলেও ওসমানীতে রেফার্ড করেন। এছাড়া সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে সিরিয়াস রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। এদিকে, সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শেষ ভরসা শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালেও অক্সিজেনের স্কৃটের কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টরা রোগী ভর্তি করে থাকেন। ফলে ভর্তি হতে না পেরে গাড়িতে, বাড়িতেই মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ হাজার লিটারের অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। এই প্ল্যান্টেও চাহিদা মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে সেই অক্সিজেন দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। ওসমানী হাসপাতালে গতকালও ভর্তি ছিলেন ৩২২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীকেই সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালে করোনার ৪৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় ৮ মাস আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্টের ৪ কোটি টাকা চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তখন ওই টাকা ছাড় দেয়া হয়নি। এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৬, ২৭, ৫ ও ১৭নং ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট করে চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে। ওই ৪ ওয়ার্ডে এখন অক্সিজেনের মূল প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন দিয়ে রোগীদের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এ কারণে নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য এখন নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো প্রয়োজন। এ নিয়ে গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আইসোলেশন ওয়ার্ড ও অক্সিজেন প্ল্যান্টের কথা জানিয়ে ডিও দিয়েছেন।
ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল আজাদ জানিয়েছেন, অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমান প্ল্যান্ট থেকে ভর্তি থাকার করোনা রোগীদের দেয়া হচ্ছে সার্পোট। নতুন আইসোলেশন সেন্টার করলে নতুন প্ল্যান্টও লাগবে। অক্সিজেন ছাড়া নতুন আইসোলেশন সেন্টার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, সিলেটে অক্সিজেনের সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে রয়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
মানবিক দিক বিবেচনায় তারা সিলেটে করোনার চিকিৎসার পরিধি বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চাহিদা মতো তরল কিংবা সিলিন্ডার অক্সিজেন দিতে পারছে না। চাহিদা ৮গুণ, কিন্তু দিচ্ছে ৩ থেকে ৪ গুণ। এ কারণে বর্তমানে করোনায় শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা সিরিয়াস রোগীদের প্রায় সময় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে হাসপাতালের দরজা থেকে।
সিলেটের বেসরকারি মেডিকেল ও ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ জানিয়েছেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অক্সিজেন দেয়ার ক্ষেত্রে কথা রাখতে পারছে না। ফলে সঙ্কটও কাটছে না। যে পরিমাণ অক্সিজেন পাচ্ছেন সেগুলো দিয়ে তারা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, করোনার এই পিকটাইমে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান সিলেটে সরবরাহ করছে অক্সিজেন। মান সম্পন্ন প্রতিষ্টানের পাশাপাশি রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিষ্ঠানও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন