উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে দফায় দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি এবং অব্যাহত ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গঙ্গাচড়ার ৫টি ইউনিয়নের মানুষ। সর্বগ্রাসী তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গন দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই গিলে খাচ্ছে নতুন নতুন ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বানের পানিতে ডুবে আছে শত শত একর জমির আমন ধান, বেগুন, মরিচ, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও মাছের খামার। বসতভিটে হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন অসহায়-নীরিহ লোকজন।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইচলি ও পূর্ব ইচলি এলাকার শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই দুইটি গ্রামে প্রায় ৭ শতাধিক পরিবারের বসবাস। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এই এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, আগে এই এলাকায় নদী ভাঙ্গন ছিল না। বেড়ি বাঁধ না দেয়ায় নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে এখনি জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে এই গ্রাম দু’টিকে রক্ষা করা যাবে না।
শনিবার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাঙ্গন কবলিত মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে ভয়াবহ ভাঙ্গণ। পানি বৃদ্ধি এবং কমার সময় নদী ভাঙ্গন বাড়ে। জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৪ দফা বন্যা হয়ে গেছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৫টি চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অসংখ্য ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মিত বাঁধটি গত মাসে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে তিস্তার পানি সামান্য বাড়লেই বিভিন্ন এলাকায় বানের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়ছে। লক্ষীটারী ইউনিয়নের কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমের উপবাঁধটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের ১০/১২টি পরিবারের ঘর-বাড়ি ইতিমধ্যে তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ন, পূর্ব ইচলি, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানিয়েছেন, তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গণের ফলে ইতিমধ্যে বিনবিনা চরে ৮/১০টি পরিবারের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ১৫ দিনেই নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে নতুন করে বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়িঘর। সব মিলে চলতি মৌসুমেই প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
লক্ষ্মীটারি ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী জানান, প্রায় দুই বছর আগে থেকেই তিস্তা নদীর উত্তর– পশ্চিমে শংকরদহ এলাকা থেকে ইচলি হয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেওয়ায় নদীর পতিপথ পরিবর্তন হয়ে এখন এই এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি শনিবার (২১ আগস্ট) ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে পানি কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, শনিবার দুপুরে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান উপজেলার লহ্মিটারী ইউনিয়নের পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে তিনি লক্ষিটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১’শ ৫০টি পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, পানিবন্দি ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা পাড়ের দুরদশা থাকবে না। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাবিয়া বেগমসহ প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন