রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস এ দুটি মহাসড়ক রয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক থেকে ঢাকার দূরত্ব কম হওয়ায় ও এ সড়কটি সুনশান থাকায় এটি চোরাকারবারিদের চোরাচালানের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার না থাকায় এই চোরাচালান ভয়াল রুপ ধারণ করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজা, মূল্যবান মূর্তি, স্বর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জিনিজপত্র বিদেশে পাচার হচ্ছে ও দেশে আসছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের আশেপাশে তেমন একটা জনবসতি না থাকায় এটি বেশিরভাগ সময়ই সুনশান নীরব থাকে। রূপগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে ৩’শ ফুট রাস্তা হয়ে ঢাকা যেতে সময় লাগে ১০-১৫ মিনিটের মতো। এছাড়া বাইপাস সড়ক দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পৌছাঁতে সময় লাগে আধার ঘন্টারও কম। এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক হয়ে উত্তরদিকে গাজীপুর বাইপাস সড়কে খুব অল্প সময়ে পৌঁছানো যায়। দিনের বেলাতে এ সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী গাড়িসহ বেশকিছু গাড়ি চলাচল করলেও রাতে এ সড়কটিতে এক প্রকার ভূতূড়ে ভাব বিরাজ করে। চারদিক থাকে স্তব্ধ, নিরবতা। এই নীরবতার সুযোগ নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। তারা সিলেট, ব্রা²ণবাড়িয়া, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ বিপুল পরিমান মাদক এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে সহজেই সরবারহ করছে। এছাড়া এয়ারপোর্ট থেকে চোরাইপথে আনা স্বর্ণের বারও এশিয়ান হাইওয়ে দিয়েই নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ বিভিন্ন মূল্যমান জিনিজপত্রও এশিয়ান মহাসড়ক দিয়ে বিদেশে পাচার হয়। সর্বশেষ ৬ আগষ্ট কাঞ্চন ব্রীজ থেকে ৩২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ৩৫.৪ কেজি ওজনের সাড়ে ৩ কোটি টাকা মূল্যের কষ্টিপাথরের পাথরের মূর্তি উদ্ধার করেছে র্যাব-১। এসময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কষ্টিপাথরের মূর্তি পাচারের কথা স্বীকার করে। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে কয়েকটি কোটি টাকার চোরাচালান সম্পন্ন হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
র্যাব-১ সিপিসি-৩ পূর্বাচল ক্যাম্প ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত ২ আগষ্ট রূপগঞ্জে পেটের ভেতরে করে অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচারকালে ১৬ হাজার ৫০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাবাদ করলে তারা জানায় তারা একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীচক্রের সদস্য। তারা কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। তারা গত ৩ মাস ধরে পেটের ভেতরে পাকস্থলিতে রেখেই ইয়াবার ১০/১২ টি চালান এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় সরবারহ করে আসছে। এসময় ইয়াবা পাচারের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করে র্যাব। তারা কক্সবাজারের এক ব্যাক্তির মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা পাচা করে আসছিল। গত ১ আগষ্ট র্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে কাঞ্চন এলাকা থেকে ৬’শ ৭২ ক্যান বিয়ার ও ১ লাখ ২২ হাজার টাকাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা রাজধানীর গুলশান থেকে যাত্রীবেশে কাঞ্চন এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে আড়াইহাজার যাচ্ছিল। ২০১৮ সালের শেষে দিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের ৩’শ ফুট সড়কে ৫১ ভরি ওজনের ৬ টি স্বর্ণের বারসহ স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। চলতি বছরের র্যাব-১ সিপিসি-৩ পূর্বাচল ক্যাম্পের সদস্যরা ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বিপুল পরিমাণ মাদকসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস পাচারের সময় উদ্ধার করে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, মাদক, স্বর্ণ, মূর্তিসহ বিভিন্ন মূল্যমান জিনিপত্র সরবারহ ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়াল রয়ে যায় অধরা। এ কারণেই দিনদিন বেড়েই চলছে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান। এ সকল অপরাধের সঙ্গে জড়িত চুনোপুটিদের পাশাপাশি রাঘববোয়ালদেরকেও খুঁজে বের আইনের আওতায় আনলে মাদক ও চোরাচালান অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এশিয়ান হাইওয়ে সড়কটিতে কোন সড়ক বাতি নেই। সন্ধ্যার পরই সড়কটি সুনশান হয়ে পড়ে। সুনশান নীরব সড়ক হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক টহল না থাকায় সড়কটিতে মাদক ও বিভিন্ন মূল্যাবান জিনিস চোরাচালানের পাশাপাশি ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই ওই এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানোর জোর দাবি জানায় স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে বাইবাস সড়কটিতে টহল পুলিশের তিনটি দল নিয়মিত ডিউটি করেন। এসড়কটির আশেপাশে তেমন কোন ঘনবসতি না থাকায় এটি অনেক সুনশান থাকে। আমরা এরই মধ্যে ৩’শ ফুট সড়কে অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার করেছি। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছি এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে অপরাধ রোধে আমরা সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা চিন্তা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন