দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবীর ঘটনায় হাতেনাতে জনতার হাতে আটক সিআইডি’র রংপুর কার্যালয়ের এএসপি সারোয়ার ,এ এস আই ও কনস্টেবল ও মাইক্রোবাসের চালক হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের হাতে আটক সোর্স ফসিউল আলম পলাশসহ মোট দশ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনের কথা বলা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন অপহৃত হওয়া ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। চিরিরবন্দর থানার মামলা নং ২৬ তারিখ ২৫-৮-২০২১। তবে মামলার এজাহারে সিআইডি রংপুরে এএসপি, এ এস আই ও কনস্টেবলের পরিচয় ও পদবী কোনটাই উল্লেখ করা হয়নি।
দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগষ্ট রাত ৯ টার দিকে অপহৃতদের বাসার সামনে যেয়ে জোহরা বেগমের স্বামী ও জাহাঙ্গীরের বাবা লুৎফর রহমানের নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকে। জাহাঙ্গীর বের হয়ে আসলে ১ নং আসামী ফসিউর আলম পলাশ ঘরে ঢুকে আমার বাবাকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আরো ৮ থেকে ১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে তারা বলে তোর বাবাকে বের করে দাও নাহলে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাও। চাঁদা না দিলে তোর মাকে আমরা তুলে নিয়ে যাব। আমরা বাবা বাড়িতে নাই ও টাকাও নাই বললে বাড়িতে থাকা মোটর সাইকেল চুরি করে নেয় এবং আমাকে ও আমার মা জোহরা বেগমকে বাহিরে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রো হাইস গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলিয়া তাহারা আমাদেরকে নিয়ে দিনাজপুরের দিকে রওয়ানা হয়। গাড়ীতে থাকা আসামীরা বলে ১৫ লক্ষ টাকা না দিলে তোকে ও তোর মাকে মেরে ফেলবো। দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে আমাদের নিয়ে ঘোড়াঘুরির পর পলাশ মোবাইল নম্বর থেকে আমার বাবার নম্বরে ফোন দেয়। আমার বাবার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়ায় তারা আমাকে বলে কাকে ফোন করলে টাকার ব্যবস্থা করতে পারবো বলো। আমি আমার বাবার উকিল জামাই কামরুল হককে ফোন দিলে সে টাকা নিয়ে আসতে পারবে বলে জানাই। এর পর কামরুলকে তারা মোবাইল করতে থাকে। এর মধ্যে আমাকে ও আমার আম্মাকে নিয়ে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা একটি বাগান বাড়ীতে নিয়ে জনৈক তোফাজ্জল ওরফে গুড্ডু’র পরিত্যক্ত বাসায় আটক করে রাখে। বাড়ীতে আটক অবস্থায় আসামীরা আমাকে প্লাস ও মোটা লোহার সুচ দিয়ে হাতে ও পায়ে আঘাত করে আমার আম্মাকেও কিল ঘুসি মারে।
পরে তারা রানীরবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে (অবস্থান বদল করতে থাকে) টাকা নিয়ে আসতে বলে। ২৪ আগষ্ট সর্বশেষ তারা দশমাইল থেকে দিনাজপুরগামী রাস্তায় আসতে বলে। টাকা নিয়ে মাইক্রোবাসের সামনে কামরুল আসতে মাইক্রোতে উঠতে গড়িমসি করে। এসময় আসামীরা কামরুলের সাথে আরো লোকজন ও পুলিশও আছে বুঝতে পেরে তারা মাইক্রো ঘুরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাদেরকে ধাওয়া করে দশমাইল এলাকায় ব্যারিকেড সৃষ্টি আটক করা হয়। আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের সামনে থেকে আমার বাড়ী থেকে নেয়া মোটর সাইকেলসহ পলাশকে পুলিশ আটক করে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, তাদের আটক করার সময় সিআইডি’র এএসপিসহ অন্যান্যদের কাছে সিআইডি’র লগোসহ বেল্ট দেখতে পায় জানালেও এজাহারে তার উল্লেখ করা হয়নি।এমনকি এজাহারে এএসপিসহ অন্যান্যদের পিতার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও সিআইডি’র পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এজাহারে উল্লেখিত আসামীরা হলো ১। মোঃ ফুসিউল আলম পলাশ (৪৫) পিতা মৃত এনামুল হক সাং নিমনগর বালুবাড়ী (ফুলবাড়ী বাস ষ্ট্যান্ড দিনাজপুর। ২। মোঃ সারোয়ার কবির সোহাগ (৪০) পিতা মোঃ মতিউর রহমান সাং সাহেবজোত থানা তেতুলিয়া জেলা পঞ্চগড় ৩। মোঃ হাসিনুর রহমান (৩৫) পিতা মোঃ গোলাম মোস্তফা সাং রসুল শাহপাড়া, থানা বিরল জেলা দিনাজপুর ৪। মোঃ আহসান উল ফারুক (৪০) পিতা মৃত আবদুল হক, সাং শ্রী খাতা, থানা কালীগঞ্জ জেলা লালমনিরহাট। ৫। মোঃ হাবিব মিয়া পিতা মৃত সাদেকুল ইসলাম সাং গঙ্গাচড়া, জেলা রংপুর ৬। মোঃ আরেফিন শাহ (৪০) পিতা মৃত এন্তাজুল হক সাং আন্ধারমুহা, থানা চিরিরবন্দর জেলা দিনাজপুর। ৭। মোঃ সোহেল (৩২) পিতা অজ্ঞাত সাং খেরপট্টি (৬ নং উপশহর) দিনাজপুর। ৮। মোঃ রিয়াদ (৩৫) পিতা অজ্ঞাত সাং সুইহারী (চৌরঙ্গী বাজার, দিনাজপুর। ৯। মোঃ সুমন (৪০) পিতা অজ্ঞাত সাং ২ নং উপশহর, দিনাজপুর ও ১০। মোঃ জাহিদ(৩৭) পিতা অজ্ঞাত সাং ৩ নং উপশহর, দিনাজপুর। তাদের বিরুদ্ধে ১৫৩/৪৪৮/২৩/৩৮৩/৩৮৫/৬৫/৪১১/৫০৬ পেনাল কোর্টে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে চিরিরবন্দর থানা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি’র ওসি মোস্তাফিজার রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি দল চিরিরবন্দরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন