প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প ০২ ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অসহায় মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে নূর উদ্দিন নামে এক আ'লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। চরদরবেশ ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি মাস্টার মো. শাহাব উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নজির আহম্মদ বেলাল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নূর উদ্দিন চরদরবেশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আ' লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
জানা যায়, উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের নুরুল আফসার সবুজ নামের এক দিনমজুরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায়ের ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে, ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আফসারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয় ।
ভুক্তভোগী নুরুল আফসার বলেন, ঘর বরাদ্দ পেতে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামশেদ আলমের সহযোগিতায় তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। এর কিছুদিন পর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন তাঁকে জানান, ৪০০ লোক ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও অনেক কষ্টে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনিসহ (নুরুল আফসার) ১৩ জনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। ঘরের রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়া চলছে, এখন ২০ হাজার টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না। টাকা দিতে অস্বীকার করলে নুর উদ্দিন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে নুর উদ্দিন আবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা না দিলে ঘর অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নুর উদ্দিনকে ১৫ হাজার টাকা দেন।
আফসার আরও বলেন,গত ১৮ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন তাঁকে একটি ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়। ওই দিন রাতে নুর উদ্দিন তাঁর কাছে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে গালমন্দ করেন।
একইভাবে পশ্চিম চর দরবেশ এলাকার কামাল উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, তাঁকেও সরকারিভাবে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নুর উদ্দিন পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ঘর পাননি। আদর্শগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সফি উল্যাহ ও সাহাব উদ্দিন বলেন, নুর উদ্দিন এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ঘর ও বয়স্ক ভাতা এবং প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে চাঁদা নিয়েছেন। তাঁদের দুজনের কাছ থেকেও ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তাঁরা নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ করেন। শেখ বাহার নামে এক বৃদ্ধের নামে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তার টাকা তাঁর মোবাইলে এনে আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে ওই এলাকার প্রায় ২০ জন ব্যক্তির টাকা তাঁর মোবাইলে এনে আত্মসাৎ করেছেন। নাম ঠিকানা অন্যের দিয়ে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনের নগদ নাম্বারে টাকা এনে সে অভিনব কায়দায় আত্মসাত করে।
নুরুল আবসার সবুজ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম জহিরুল হায়াত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আ' লীগ নেতা নুর উদ্দিনের চাঁদাবাজির কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে সোনাগাজী মডেল থানার ওসিকে আদেশ দেন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন