মহিউদ্দিন খান মোহন
দলকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট একটি নির্দেশনামা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাতে বলা হয়েছিল, উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠন করে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করতে হবে । উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যেসব জেলা সম্মেলন করতে না পারবে, কেন্দ্র সেসব জেলা সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেবে এমন কথাও ছিল সে চিঠিতে। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সঙ্গত কারণেই বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা ধরেই নিয়েছিল যে, ওই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি তার বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠার প্রয়াস পাবে এবং দলটি আবার রাজনীতির মহাসড়কে পদচারণা শুরু করবে। নেতাকর্মীদের আরো ধারণা ছিল যে, কর্মের মূল্যায়নের মাধ্যমে দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে, যাতে আগামী দিনে আন্দোলন-নির্বাচনে দলটি কাক্সিক্ষত তৎপরতা চালাতে সক্ষম হবে। ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দল ঐক্যবদ্ধ এবং অধিকতর শক্তিশালী হবে এমন ধারণাও ছিল তাদের।
সে সময় পরিচিতজনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মন্তব্য করেছিলাম যে, ২০১৫ নয়, ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি বিএনপি এ তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ ‘সুসম্পন্ন’ করতে পারে তাহলে ধরে নিতে হবে বিএনপি একটি ‘বড় কাজ’ করে ফেলল। আমার এ মন্তব্যের পেছনে কারণ ছিল এই যে, গত কয়েক বছরে দলটির অভ্যন্তরে এমন একটি শক্তির পাকাপোক্ত অবস্থান হয়েছে, যে শক্তিটি চায় না বিত্রনপি সাবলীলভাবে রাজনীতি এবং সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করুক। ফলে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি, কর্মসূচি সফলতার মুখ দেখেনি।
একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরের মধ্যে বিএনপি এ মুহূর্তে সবচেয়ে দুর্যোগময় সময় পার করছে। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর বিএনপির ওপর যে প্রচ- আঘাত এসেছিল, সেটাও কাটিয়ে উঠেছিল দলটি। বিশেষ করে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপতি এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর প্রবল ঝড়ের মুখে পড়েছিল বিএনপি। এরশাদ দল গঠন করার লক্ষ্যে বিএনপিকে ভাঙার যে মাস্টার প্ল্যান করেছিল তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। ছোটখাট কয়েকটি ভাঙন এবং কতিপয় ক্ষমতালোভী নেতা সে সময় দল ছেড়ে চলে গেলেও জনসমর্থন এবং তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে বিএনপির ঘুরে দাঁড়াতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের ভাবমর্যাদা এবং শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দলটিকে বন্ধুর পথ অতিক্রমে সহায়তা করেছিল সে সময়। যার ফলে ২০ বছরের মধ্যে তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে বিএনপির যে বেহাল অবস্থা তা কারো কাম্য না হলেও এটাই বাস্তবতা যে, দলটি যেন শনির দশায় পতিত হয়েছে। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যে বিপর্যয়ের শুরু তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে। জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার দলবিরোধী অবস্থান ও তৎপরতা দলটিকে বিপাকে ফেলে ছিল ভীষণভাবে। সংস্কার প্রস্তাবের নামে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদায় করার বা পরিকল্পনা মান্নান ভূঁইয়া গং করেছিল তা শেষপর্যন্ত সফল হতে পারেনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তার কারণেই। সে সময়কার ‘আধা সামরিক’ সরকার যে নীলনকশা বিএনপিকে নিয়ে এঁটেছিল মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন তার ক্রীড়নক মাত্র। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পেরে মইন ইউ আহমেদ গং বিএনপিকে ধ্বংসের বীজ রোপণ করে গিয়েছিল ভিন্নভাবে। এক. ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বরের নীল নকশার নির্বাচনে তাদের পছন্দের দলটিকে বসিয়ে যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়। দুই. বিএনপির অভ্যন্তরে এমন কিছু লোক তারা ঢুকিয়ে দিয়ে যায়, যারা তাদের নিদের্শিত পথেই বিএনপিকে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখে এবং এখনো রেখে চলেছে। ফলে দেখা গেল, জরুরি সরকারের জেলখানা থেকে মুক্তি পাবার পরদিন বেগম জিয়ার বাসায় তার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন সংস্কারপন্থী নেতারা। অপরদিকে, যারা দুই বছর বেগম জিয়া এবং বিএনপির পক্ষে লড়াই করল, তারা ত্রিসীমানায়ও ঢুকতে পারল না। এমনও দেখা গেল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাবের কপি বেগম জিয়ার বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন যে ব্যক্তিটি, তিনি ২০০৯ এর কাউন্সিলে দলে ভালো পদ পেলেন আর ওই সংস্কার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যিনি সংবাদমাধ্যমে কথা বলাসহ ঝুঁকি নিয়ে নানা কাজ করেছিলেন কমিটিতে তার ঠাঁই হলো না। বলা নি®প্রয়োজন যে, ওয়ান-ইলেভেনের হোতাদের বসিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরাই এসব কাজ সম্পন্ন করেছে।
যাক বর্তমান সময়ে ফিরে আসি। আমার অনুমানকে সত্য প্রমাণ করে ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আজো শেষ হয়নি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেয়া মেয়াদও অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এ ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারেনি। কেন এমন হচ্ছে, কেন এধরনের স্থবিরতা বিএনপিকে গ্রাস করল তা নিয়ে নানাজন অবশ্য নানা কথা বলছেন। তাদের সেসব বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, দলের অভ্যন্তরে কোনো একটি শক্তি অতি সুকৌশলে কলকাঠি নাড়ছে যে, বিএনপি এগিয়ে যাবার পরিবর্তে বারবার শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর নেতৃত্ব নির্বাচনের বিধান গঠনতন্ত্রে থাকলেও এবার কেন্দ্র থেকে ওইসব ইউনিটের সুপার ফাইভ (সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ১নং যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক) কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। পত্রিকাটি লিখেছেÑ দলটির নীতি নির্ধারকরা বলেছেন, ‘দলের সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে এবং সক্রিয় ও যোগ্য ছাত্রদল-যুবদলের সাবেক নেতাদের কমিটিতে জায়গা করে দিতেই নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ পদ্ধতিতে কমিটি হলে প্রভাবশালী নেতাদের স্বজনপ্রীতির আশঙ্কা করছেন দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্র থেকে জেলা মহানগর কমিটি করে দেয়া হলে কতজন যোগ্য ও সক্রিয় নেতা সেগুলোতে স্থান পাবেন সেটা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও স্বজনপ্রীতির যে আশঙ্কা সাধারণ নেতাকর্মীরা করছেন, তাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কেননা, এর প্রমাণ বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে। চেয়ারপারসন যাদেরকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তারা স্বজনপ্রীতিসহ অন্যান্য প্রীতির চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে একটি প্রশ্নবিদ্ধ কমিটি গঠন করেছেন। ফলে নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের বেলায়ই যদি এমন অনিয়ম হয়, তাহলে জেলা মহানগরের ক্ষেত্রে তা কতটা প্রকট আকার ধারণ করবে তা সহজেই অনুমেয়।
অনেকে আবার তুলছেন গঠনতান্ত্রিক বিধানের কথা। বলছেনÑ গঠনতন্ত্রে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেয়ার কোনো বিধান নেই। সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, জেলার ক্ষেত্রে উপজেলা ও পৌর কমিটির সদস্যদের নিয়ে জেলা কাউন্সিল এবং ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে মহানগর কাউন্সিল গঠিত হবে; যাদের মতামতের ভিত্তিতে জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করতে হবে। তবে, যারা বিএনপির গঠনতন্ত্রের কথা বলছেন, তারা বর্তমানে দলটির বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বোধকরি তেমন কোনো ধারণা রাখেন না। কারণ, যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেই গঠনতান্ত্রিক বিধানকে অবজ্ঞা করা হয়, সে দলের স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে গিয়ে গঠনতান্ত্রিক বিধানকে যদি চরমভাবেও লঙ্ঘন করা হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ প্রসঙ্গে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি। ৫ম (২০০৯) কাউন্সিলের পর ঘোষিত কমিটি ছিল ৩৮৬ সদস্যের। ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে ৫৭টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন ১০ শতাংশ সদস্য বাড়াতে পারেন। সেটি যোগ করলে সদস্য সংখ্যা হয় ৪৪৯। কিন্তু কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ৫০২ সদস্যের। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ১৯ মার্চের কাউন্সিলে নির্বাহী কমিটিতে ৫৭টি পদ সৃষ্টি করা হলেও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব উত্থাপন বা অনুমোদন করা হয়নি। রীতি অনুযায়ী চলমান গঠতন্ত্রে উল্লিখিত ৩৮৬ জনের মধ্যেই নতুন ৫৭টি পদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। অর্থাৎ সম্পাদক বা সহ-সম্পাদকের পদ ৫৭টি বাড়লেও কমিটির আকার পূর্বের মতো ৩৮৬ই থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে নির্বাহী কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ সংখ্যা কমে যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা না করে বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে (যেহেতু নতুন গঠনতন্ত্র এখনো ছাপা হয়নি) উল্লিখিত সংখ্যার চাইতে অতিরিক্ত ১১৪ জনকে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনাকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল দলীয় গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বললেও দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। এ প্রসঙ্গে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পত্রিকাটিতে বলেছেন ‘দলের চেয়ারপারসন চাইলে পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোনো সময় কমিটির আকার বাড়াতে বা কমাতে পারেন। দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনকে সে ক্ষমতা দেয়া আছে।’
গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন সম্মেলন বা কাউন্সিলকে বিএনপি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেÑ এ প্রশ্ন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের মনে উদ্রেক হওয়াটা বিচিত্র নয়। এর পেছনের উদ্দেশ্য যে মোটেই সাধু নয়, সেটা অনুমান করাও কষ্টকর নয়। অনেকেই বলছেন যে, কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের আস্থা ও অনুগ্রহভাজন ব্যক্তিদের জেলা-মহানগর পর্যায়ে অধিষ্ঠানের লক্ষ্যেই এধরনের একটি ‘অবিমৃশ্যকারী’ সিদ্ধান্ত নিতে দলের সুপ্রিম কমান্ডকে প্ররোচিত করা হয়েছে। আর সে জন্য অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হয়েছে বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতনকে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স পত্রিকাকে বলেছেনÑ ‘নানা কারণে তৃণমূল কমিটি ঢাকা থেকে করে দেয়া হয়। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারের রোষানল। জেলা বা মহানগর পর্যায়ে সম্মেলন করতে গেলে তা করতে দেয়া হয় না। ১৪৪ ধারা জারি করে দেয়া হয়। নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নতুন মামলা দেয়া হয়। এসব মামলা-হামলা এড়িয়ে চলতে চাই। গত সাত বছরে আমাদের বহু শক্তি ক্ষয় হয়েছে। তাই আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে কমিটি গঠন করাই ভালো। (যুগান্তর ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬)।
বিএনপির মাঝারি সাইজের এ নেতাটির বক্তব্য আমাদের বিক্রমপুরে প্রচলিত প্রবচন ‘চোরের ভয়ে বউ ন্যাংটা’ রাখার সমার্থক বলেই আমার মনে হচ্ছে। সরকারি হামলা-মামলার ভয়ে যদি দলের সাংগঠনিক কর্মকা- লুকিয়ে ছাপিয়ে করতে হয়, তাহলে সে সংগঠন কতটা শক্তিশালী হবে তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সম্মেলন বা কাউন্সিল অধিবেশন করলে দলের নেতাকর্মীরা যে উৎসাহ-উদ্দীপনা পেত, নেতৃত্ব পাবার জন্য যে প্রতিযোগিতায় নামত এখন তারা সেটা থেকে বঞ্চিত হবে। এখন কর্মীদের কাছে কাউকে যেতে হবে না প্রত্যাশিত পদ পেতে। বরং তার পরিবর্তে পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত (ওই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ) নেতাদের কাছে ধরনা দিলেই তাদের কাক্সিক্ষত পদ লাভ সম্ভব হবে। জেলা বা মহানগর কাউন্সিল হলে স্থানীয় জনগণ সরাসরি তা জানতে পারত। এখন পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখেই তারা বুঝতে বা জানতে পারবে যে তাদের জেলা বা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাগজের মাধ্যমে জেলা-মহানগর কমিটি গঠনের এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে শেষপর্যন্ত একটি কাগুজে সংগঠনে পরিণত করা হচ্ছে কিনাÑ এ প্রশ্ন দলটির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের। তারা আরো প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কতটা সাহস নিয়ে মাঠে দাঁড়াতে পারবে সেটা কী দলের হাই কমান্ড ভেবে দেখেছেন?
কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেয়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল। তারা বলছেনÑ বিএনপিতে এখন ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে জেলা-মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়তে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তারা ওইসব পদে নিজেদের অনুগত-অনুসারী বা দারা-পুত্র-কন্যা কিংবা আত্মীয়স্বজনকে বসাতে চান। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন বা ভোট পেয়ে নেতা নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দিলে তাতে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজস্ব লোকদের স্থানীয় নেতৃত্বে বসানো সহজ এবং সম্ভব হতে পারে। এধরনের ব্যক্তিস্বার্থগত চিন্তা যে আলোচ্য সিদ্ধান্তটির পেছনে অন্যতম কারণ সেটা অস্বীকার করা যাবে না।
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতে এখন যা ঘটছে তা কারো কাছেই যে কাম্য নয় তা বলাই বাহুল্য। অন্তত যারা দেশ ও জাতির কল্যাণ অকল্যাণ নিয়ে ভাবেন তাদের কাছে বাংলাদেশের জন্য বিএনপির অপরিহার্যতা সর্বদাই অনুভূত হয়। কিন্তু আজ বিএনপির অভ্যন্তরে যে ‘বারো ভূতে’র আস্তানা বেশ ভালোভাবেই গড়ে উঠেছে তাতে দলটি না পারছে নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে, না পারছে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। ভ্রান্তির চক্করে পড়ে এদেশের গণমানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি আজ একই বৃত্তে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। সে চক্কর ভেদ করে দলটি আবার রাজনীতির রাজপথে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা সেটা শুধু ভবিষ্যতই বলতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
mohon91@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন