দ্বীপাঞ্চল নামে খ্যাত বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর একটি জেলা। যার চারপাশেই রয়েছে অসংখ্য নদী। নদীবেষ্টিত এ জনপদের একটি নদী—সন্ধ্যা।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা—বাণিজ্য বা শিল্পাঞ্চল হিসেবেই প্রসিদ্ধ। আবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক তাতে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ করেছে। জগৎপট্টি, ইন্দেরহাট, মিয়ারহাট, বরচাকাঠি, জগন্নাতকাঠি বন্দরসহ বেশ কিছু এলাকা জুড়ে চলছে সন্ধ্যা নদী দখল বাণিজ্য। বছরের পর বছর ধরে উপজেলার নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডক ইয়ার্ড, বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য দোকানপাট। কেউ প্রতিবাদ করতে এলে দখলদারদের পেটে যাচ্ছে তাদের বসত ভিটেও। প্রাণের ঝুঁকি তো থাকছেই, একের পর এক মামলা দিয়ে করা হচ্ছে হয়রানি।
বেশ কয়েকজন স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পটুয়াখালী থেকে আসা গফ্ফার মৃধার ছালেহিয়া ডক ইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ডক ইয়ার্ডদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ধ্যা নদীর তীরের অধিকাংশ দখলের অভিযোগ।
জানা যায়, ২০১৫ সালে একবার পরিবেশ অধিদপ্তর ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তার তোয়াক্কা করেননি ছালেহিয়া ডক ইয়ার্ডের গফ্ফার মৃধা। এরপর আর পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে এসব অবৈধ দখলদারিদের বিরুদ্ধে তেমন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি ডক ইয়ার্ড মালিকদের কেউ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সমন্নয়ে দূর—দূরান্ত থেকে ট্রলার নৌকা আসে যারা এখান থেকে মাল উঠায় ও নামায় সেই জায়গাকে তারা লিজের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে। নদীর অনেকাংশ দখল করে তারা সেখানে ডকইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। যেগুলো করার কারণে স্বরূপকাঠীর সৌন্দর্য বিলুপ্তির পথে। আমরা জগন্নাথকাঠীবাসী এই ভূমিদস্যূদের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি আমাদের দখলমুক্ত করে স্বরূপকাঠীর এই উন্মুক্ত পরিবেশকে সঠিকভাবে বজায় রাখবেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী হযরত আলী হিরু জানান, এখানকার কিছু ভূমিদস্যুরা জমির মতো নদী দখল করছে। এতে দিন দিন নদীগুলোর নাব্যতা সংকট হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে যদি নদী খাল দখল হয়ে যায় তাহলে স্বরূপকাঠীর পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তাই এই নদী খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন জানিয়েছেন, সারা বাংলাদেশে নদীর পাড়কে বাঁচিয়ে রেখে নদী উচ্ছেদ রোধ করা এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২১০০ সালে যে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করার একটি অঙ্গিকার। নদীকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, নদী কাউকেই দখল করতে দেয়া যাবে না। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছি। যাতে কেউ নদী দখল করে না রাখতে পারে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। যারা উপজেলায় স্টক হোল্ডার রয়েছে সবাইকে নিয়ে চেষ্ট করবো যাতে উপজেলার নদী দ্রুত দূষণ ও দখলমুক্ত করতে পারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন