শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ফরিদপুরে তীব্র ভাঙ্গনের মুখে ৬ স্কুল, বিলীন প্রায় দুইশত বাড়ী

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪০ পিএম

ফরিদপুরে তীব্র নদী ভাঙনের মুখে ৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যেই, পদ্মার বুকে বিলিন হয়ে গেছে প্রায় দুই শত বাড়ী।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্কুলের ছাত্র শিক্ষক ও এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এদের ধারনা যে, কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলো।

প্রচন্ড ভাঙ্গনের মুখে থাকা চরভদ্রাসন উপজেেলার চরভদ্রাসন ইউনিয়নের এমপি ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সমাজসেবক জব্বার মাতুব্বর বলেন,
স্কুলটি নদীর বুকে চলে গেলে বাচ্চাদের পড়াতে অনেক দুর হবে।

ভাঙ্গনের মুখে আছে, একই উপজেলা ও ইউনিয়নের বাইলা ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এবং সবুল্লা শিকদারদের ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যলয়টিও।

শিকদার ডাঙ্গী স্কুলের নিকটের একজন দোকানদার শহীদ প্রমানিক তিনি বলেন, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চিহ্ন মাত্র এই স্কুলটিই আছে। এটি নদীর বুকে চলে গেলে পুরো একটি হউনিয়নের মানচিত্র ই শেষ হবে।

ঝুঁকিতে থাকা পশ্চিম চরনারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নব খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত। এরপর ১৯৯৩ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টির টিনসেড ভবন থেকে নদী মাত্র ৩ হাত দূরে অবস্থান করছে। আর একতলা ভবন থেকে ২০ হাত দূরে রয়েছে নদী। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবার আর বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত। এরপর নতুন একতলা ভবনটি নির্মাণ হয় ২০১৪ সালে। বিদ্যালয়ের ভবন থেকে নদী এখন ৫ গজ দূরে অবস্থান করছে। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও মধুমতীর ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা স্কুল ৬ টি হচ্ছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাজরা চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম চর নারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চরভদ্রাসনের এমপি ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়,সবুল্লা সিকদার ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ফরিদপুরের গোলডাঙ্গীর কাইয়মুদ্দীনের ডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়,

পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার জানান, ১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত। এরপর ২০১০ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টি থেকে মাত্র ৪০ হাত দূরে অবস্থান করছে মধুমতি নদী। এ বছর নদী যেভাবে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

অপরদিকে, আলফাডাঙ্গা মধুমতি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে টগরবন্দ, গোপালপুর ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন।

টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া, আজমপুর, চর আজমপুর ও চরডাঙ্গা, গোপালপুরের গোপালপুর, দিকনগর, কাতলাসুর ও খোলাবাড়িয়া, পাচুড়িয়ার বাঁশতলা, পাচুরিয়া ও চাঁদরা গ্রামগুলোতে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে হুমকিতে রয়েছে এসব এলাকার মানুষ।

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাসান বলেন, তার ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়া দুই একর ফসলি জমি ভেঙে গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য কোনো সরকারি ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ পায়নি বলে চেয়ারম্যান জানান।

চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের হাজিডাঙ্গী ভাঙ্গার মাথায় সলেমান শিকদারের বাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর ভাঙন। ওই এলাকার ৫০ মিটারব্যাপী এলাকাজুড়ে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি।

অপরদিকে, তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়ে আলাফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ এলাকায় মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে
কমপক্ষে ৫০টি বাড়ী বিলিন হয়ে গেছে।

পাশা-পাশি চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গীর পদ্মার তীরের অন্ততপক্ষে ৫০ টি বাড়ী প্রমওা পদ্মার বুকে চলে গেছে।

এছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গী কাইয়মুদ্দীন শিকদারদের ডাঙ্গীর ৫০ টি এবং ডিক্রীরচর ইউনিয়নের তাইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গীর আরও ৫০ টি বাড়ী পদ্মার ভাঙ্গনে হারিয়ে গেছে।

ভাঙ্গনের বিষয়, ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, পানি কমার সঙ্গে জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন রোধে কাজ চলছে। প্রয়োজনে নতুন করে ভাঙন কবলিত স্থানে আবারও জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার। ইনকিলাবকে জানান, আপদকালীন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়গুলো রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রান পন চেষ্টা করছি।

ভাঙ্গন এবং বাড়ী ঘর হারোনে মানুষদের সরকারীভাবে কোন বাড়ীর ঘরের ব্যবস্হা করার বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক জনাব, অতুল সরকারের সাথে কথা হলে, তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলছেন পর্যায়ক্রমে সকলের ঘরের ব্যবস্হাই করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন