সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায় বলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সবাই জানেন, উনি (খালেদা জিয়া) তো অসুস্থ ছিলেন। তখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যেটা সরকার দেয়নি। আমরা খুব আর্শ্চয হয়নি যে, এখনও সরকার এই কয় মাসের মধ্যে বিদেশ যেতে পারবেন না-এই একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। মূল বিষয়টা হচ্ছে, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এত বেশি ভয় পান যে, তাকে কোনো মতেই তারা দেশের বাইরে যাওয়া বা মুক্ত করার বিষয়টা তারা ভাবতেই পারে না। গতকাল রোববার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এত অসুস্থতার পর চিকিৎসার জন্য যখন তার ডাক্তাররা বলছেন, হাসপাতাল বলছে, এডভান্স টিট্রমেন্টের জন্য তাকে এডভান্স সেন্টারে নিয়ে যাওয়া দরকার। তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার তাকে আটকিয়ে রাখছে। ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা ও বিদেশে যেতে পারবেন না- আগের শর্ত বহাল রেখেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডের কার্যকারিতা সরকার আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার মানে তার ছোট ভাই শর্ত সাপেক্ষে, সময়টা বর্ধিত করার একটি আবেদন করেছিলেন। আমরা সেই আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদন দিয়েছি। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজের বাসায় থেকে যেভাবে চিকিৎসা নিতে চান, সেভাবে চিকিৎসা নেবেন। তবে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। আগে যেসব শর্ত ছিল, সেসব শর্ত বহাল থাকবে।
৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছে।
তৃণমূল নেতাদের সাথেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত: দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে সিনিয়র নেতাদের পর এবার কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সাথেও ধারাবাহিক বৈঠকের বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যা শুরু হবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে। চলবে টানা তিনদিন। গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গতকাল বিকালে জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, গত ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে দলের জাতীয় কার্যানির্বাহী কমিটির ধারাবাহিক সভায় মতবিনিময় হয়েছে। অবশিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে আগামী ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই তিনদিনের সভায় তারাও থাকবেন। কারণ জেলার সভাপতি পদাধিকার এক্স অফিসিও হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তারা অবশ্যই আসবেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমন্ডলী এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে দেশের বর্তমান অবস্থা ও দলের করণীয় কি হওয়া উচিত তার নিয়ে নেতাদের মতামত শুনেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান।
মতবিনিময় শেষ হলে কর্মপন্থা জানানো হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন ধারাবাহিক সভাগুলো শেষ হবে তখন আমরা সময়মতো আমাদের মতামতগুলো আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের পরবর্তী কর্মপন্থাও জানতে পারবেন। এসব মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা হয়েছে। পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বর্তমান পরিস্থিতি, এক দলীয় শাসন প্রবর্তন করবার যে একটা প্রচেষ্টা, বিরোধী দলের ওপরে যে নির্যাতন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া, মিথ্যা মামলা-গায়েবী মামলা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা হয়েছে।
সাংগঠনিক কার্য্ক্রম পুরোদমে চলছে: মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কমিটি তাদের পূর্ণগঠনের কাজ শুরু করেছে, কাজ চলছে। অঙ্গসংগঠনগুলোরও কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। থানা পর্যায়ে, মাঠ পর্য়ায়ে হয়ে গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে হয়েছে। এখন জেলা পর্যায়ের হয়ে যাবে, হতে যাচ্ছে। যেহেতু করোনা মহামারী সেই কারণে সম্মেলনগুলো করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ জায়গায় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। ঠিক একই ভাবে বিএনপিরও যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা ওয়ার্ড পর্য়ায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে একেবারে মাঠ পর্যায়ে এবং একেবারে জেলা পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি জেলায় সম্মেলন অতি দ্রুত শেষ হবে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন