বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকতের বিশাল অংশের অবস্থান কক্সবাজার সদরে। এ সৈকতকে ভাগ করা হয়েছে ছয়টি পয়েন্টে। স্বাভাবিক সময়ে এসব পয়েন্টে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় জমে। আর শীতকালে পর্যটন মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর এতে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সাগরে গোসল করতে নামার কারণে সৈকত কেন্দ্রিক প্রাণহানি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বেসরকারি একটি উদ্ধারকারী সংস্থার তথ্যমতে গত ৫ বছরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয়েছে ২৩ পর্যটকের। একই সময়ে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৪ জনকে। সাঁতার জানা না থাকার পরেও সৈকতের পানিতে নেমে হাঁটু পানির সীমা অতিক্রম করে গভীরে যাওয়া, সৈকতে লাগানো লাল-হলুদ পতাকার সংকেত না বোঝা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় দুঘটনার অন্যতম কারণ।
গত এক সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য পর্যটকদের অসতর্কতা ও জোয়ার-ভাটায় লাইফগার্ডের নির্দেশনা অমান্য করাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এসব দুর্ঘটনার কারণ চিহিৃত করে দুর্ঘটনা রোধে সৈকত নামার আগে লাইফ জ্যাকেট পরাসহ নতুন করে ১০ নির্দেশনা দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সৈকতের গুপ্ত গর্ত ও গণস্রোতপ্রবণ এলাকা চিহৃত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সৈকতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০ নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। পানিতে নামার আগে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক ১০দিন ব্যাপী এ ক্যাম্পেইনের উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। সেদিনই দুপুরে থেকে বিকেল পর্যন্ত সৈকতের সিগাল পয়েন্টে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে লাইফ গার্ডের সদস্যরা। ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে শহরের কলাতলীর চন্দ্রিমা এলাকার আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ ইমনের পরিচয় মিললেও পরে উদ্ধার হওয়া যুবকের পরিচয় এখনো মেলেনি এছাড়াও গত ৮ সেপ্টেম্বর তৌনিক মকবুল নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন এবং পর্যটকদের অভিযোগ, ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের মূল অংশে স্বল্পসংখ্যক উদ্ধারকর্মী দিয়ে কোনোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে, যে উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন সমুদ্র থেকে উদ্ধারকাজে তারা দক্ষ নন। কক্সবাজার সী সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কর্মী ও উদ্ধার সরঞ্জামাদির সীমাবদ্ধ পাশাপাশি লাল নিশান থাকা সত্তে¡ও অনেকেই কিন্তুু নির্দেশনা না মেনে গোসল করতে নামছে। এক্ষেত্রে পর্যটকদেরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। না হলে দুর্ঘটনা ঘটনা রোধ করা কঠিন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সৈকত কেন্দ্রিক দুর্ঘটনা রোধে ১০টি নির্দেশনার পাশাপাশি সৈকতে আগত পর্যটক মাঝে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন চায় না সৈকতে আর কোন দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটুক। এ কারনে যেসব পর্যটকরা এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতে নামবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন