এটা সত্যি যে, মাস্ক সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন আশেপাশের সবাই এটি পরে থাকে। এর কারণ হ’ল, যখন কোন সংক্রমিত ব্যক্তি মাস্ক পরে থাকে, তখন তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রামক কণার একটি বড় অংশ মাস্কে আটকে যায়, যা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করে। এবং যখন ভাইরাসগুলি চারপাশে ভাসমান থাকে, তখন অন্যরা মাস্ক পরে থাকলে, তাদের শ^াসতন্ত্রে ভাইরাস প্রবেশে বাধা পায়।
এমন ব্যাপক উদাহরণ রয়েছে যেগুলি দেখায় যে, আশেপাশের অন্যরা মাস্ক ব্যবহার না করলেও মাস্ক পরিধানকারী সম্ভাব্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে। তবে, মাস্কের সুরক্ষার মাত্রাটি এর গুণগত মান এবং এটি কতটা লাগসই, তার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, সুইজারল্যান্ডে একটি হোটেলে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় বেশ কয়েকজন কর্মচারী এবং একজন অতিথি যারা কেবল ফেসশিল্ড পরেছিলেন কিন্তু মাস্ক ব্যবহার করেননি, তাদের করোনা সংক্রমণ ঘটেছিল। তবে, যারা মাস্ক ব্যবহার করেছিলেন, তারা সংক্রমিত হননি।
টেনেসির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাস্কের বাধ্যবাধকতা নেই, এমন এলাকার তুলনায় মাস্ক বাধ্যতামূলক এলাকাগুলিতে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির হার কম। বেশ কয়েকটি ল্যাবরেটরি গবেষণা বলেছে যে, মাস্কেন সুরক্ষার স্তর, মাস্কের ধরন, এটি তৈরির উপাদান, সংক্রমণের মাত্রার ক্ষেত্রে সেটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের উপর মাস্কের সুরক্ষার মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্শন-সিডিসি’র একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি আদর্শ সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধানকারীকে শুধুমাত্র ৭.৫ শতাংশ রক্ষা করে। কিন্তু মেডিকেল মাস্কের চারপাশ ভালো করে আটকে এবং ফিতাগুলি গিঁট দিয়ে পড়লে সংক্রমণ থেকে প্রায় ৬৫ শতাংশ হ্রাস করে। সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর কাপড়ের মুখোশ পড়লে, তা সংক্রমণ ৮৩ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
টোকিওর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি সাধারণ সুতির মাস্ক পরিধানকারীকে ১৭ থেকে ২৭ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। সার্জিক্যাল মাস্ক ৪৭ থেকে ৫০ শতাংশ, হালকা ফিটিং এন-৯৫ মাস্ক ৫৭ থেকে ৮৬ শতাংশ এবং শক্তভাবে সিল করা এন-৯৫ মাস্ক ৭৯ থেকে ৯০ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
যদিও কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন হ’ল সর্বোত্তম সুরক্ষা। তারপরেও, অন্যদের ভ্যাকসিন নেয়া আছে কি না, জানা না থাকলেও, ভ্যাকসিন নেয়া ব্যাক্তিদের ভিড় বা বড় জমায়েত এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক, তাই সর্বোচ্চ মানের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
কিন্তু সমস্ত গবেষণার মূল কথা হল যে, মাস্ক পরিধান ব্যক্তির সম্ভাব্য সংক্রমণ হ্রাস করে। ভার্জিনিয়া টেক-এর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর এবং ভাইরাল ট্রান্সমিশনের ওপর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ ড. লিন্সে মার বলেন, ‘যেহেতু ডেল্টা সহজেই অনেক বেশি সংক্রামক বলে প্রমানিত হয়েছে এবং যেহেতু ভ্যাকসিন নেয়া মানুষরাও সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তাই আমাদের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সেরা মাস্ক পরিধান করতে হবে।’ সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন