মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

এই সুন্নতটি জিন্দা করুন : মুসাফাহার দুআর ব্যাপারে যত্নবান হোন

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

হাদীস শরীফে এসেছে যে : যখন দুইজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করে, আল্লাহ তাআলার হামদ ও শোকর করে এবং আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে তো আল্লাহ তাআলা উভয়কে মাগফিরাত দান করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৬৯)। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘যখনই দু’জন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা পরস্পর হাত মিলায় তো আল্লাহ তাআলার ওপর তাদের এই হক জন্মে যে, আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন এবং তাদের হাতগুলো পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস ১২৪৫১)।

উপরোক্ত হাদীসগুলোর কারণে আমাদের পূর্বসূরী বুযুর্গরা মুসাফাহার সময় একে অপরের জন্য মাগফিরাতের দুআ করতেন। এই দুআর জন্য প্রসিদ্ধ আরবি বাক্যটি খুবই উপযুক্ত : ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম’। অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।’

এটা কত ভালো বিষয় যে, মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ প্রথমে শান্তি ও সালামতী এরপর ক্ষমা ও মাগফিরাতের দুআর দ্বারা হবে। ঈমানের পরে সুস্থতা ও নিরাপত্তা এবং মাগফিরাত ও পবিত্রতার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামত আর আছে কি?

মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, এর প্রকৃত প্রেরণা তো আল্লাহর হামদ ও ছানা এবং সালাম ও মাগফিরাত কামনাই হওয়া উচিত। সায়ীদ আলমাকবুরী রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : আমি (অনেক সময়) বাজারে যাই। তবে এজন্য নয় যে, সেখানে আমার কোনো প্রয়োজন রয়েছে; বরং এজন্য যাই যে, (সেখানে অনেক মানুষের সমাবেশ, তাই অনেক মানুষকে সালাম করার সুযোগ হবে) আমি তাদেরকে সালাম দেব এবং উত্তরে তাদের সালাম লাভ করব।’

বুশাইর ইবনে ইয়াসার বলেন : ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে কেউ আগে সালাম দিতে পারত না।’ (আততবাকাতুল কুবরা ইবনে সাদ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৫৫, ১৫২)। উমর রা. এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন : কেমন আছ? তিনি বললেন : ‘আমি আপনার কাছে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করছি।’ (হিলইয়াতুল আউলিয়া আবু নুয়াইম খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০)।

ইমাম ইবনুল মুবারক রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : ‘আমরা কখনো একে অপরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করি এবং কুশল জিজ্ঞাসা করি, শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, এভাবে পরস্পরে আল্লাহর হামদ ও ছানা করব।’ (আযযুহদ ওয়ার রাকাইক পৃ. ৬৮-৬৯)।

সালাফে সালেহীনের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে উঠেছিল নবী করীম (সা.)-এর সুন্নাহর অনুকরণে। তবারানী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন- কেমন আছ? তিনি বললেন : ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি আপনার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করছি।’ রাসূলে করীম (সা.) ইরশাদ করলেন, তোমার কাছে এটাই আমি চেয়েছি। (অর্থাৎ আমার প্রশ্নের উত্তরে তুমি আল্লাহর হামদ ও ছানা করবে এটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল)। (মাজমাউয যাহওয়াইদ খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ১৪০, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬)।

সারকথা এই যে, মুসলমানদের কোনো সাক্ষাত সালাম, দুআয়ে মাগফিরাত ও হামদ ও ছানা বিহীন না হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
আমার জীবনের গল্প ৪ অক্টোবর, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
সুন্নত মোতাবেক জীবন চালালে সমস্যা হবে কম
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৪ অক্টোবর, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.) যা যা করেছেন, সবই সুন্নাত। তাঁর জীবনের প্রধান অবলম্বন ছিল সত্য, পবিত্রতা ও প্রেম। সত্যবাদিতার জন্য তিনি আশৈশব ‘আল আমিন’ অর্থাৎ সত্যবাদী, বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত উপাধি পেয়েছিলেন। আজীবন কোনো শত্রুও তাঁকে কখনো মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেনি।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৪ অক্টোবর, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
ইসলাম পবিত্র ধর্ম। চিন্তায়, মননে, বিশ্বাস ও কর্মে সব ক্ষেত্রেই এর পরিধি বিস্তৃত। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে এটি পরিব্যাপ্ত।
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ৪ অক্টোবর, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
প্রেম সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহ তাআলা কুল মাখলুকাত সৃজন করেছেন। প্রেমেই আনুগত্য, আনুগত্যই ইবাদত। প্রেম আল্লাহর প্রতি, রাসুল (সা.)–এর প্রতি ও সমগ্র সৃষ্টির প্রতি।
Total Reply(0)
জব্বার ৪ অক্টোবর, ২০২১, ৯:৩২ এএম says : 0
লেখাটির জন্য দৈনিক ইনকিলাব ও লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
মো.আব্দুর রাজ্জাক ৪ অক্টোবর, ২০২১, ৫:১২ পিএম says : 0
শুধু শুধু মুখে উচ্চারন না করে দোয়া একাগ্রচিত্তে কামনা হওয়া উচিত
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন