পঞ্চগড় সদর উপজেলায় তৌহিদুল ইসলাম ও সাহেরা খাতুন নামের দুই ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে ফেঁসে গেছেন সাইয়েদ নূর-ই-আলম নামের এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। উত্তরাধিকার সনদে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে করা একটি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ওই চেয়ারম্যানসহ দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গত সোমবার (১১ অক্টোবর) মামলাটি করেছেন একই ইউনিয়নের গাড়াতিপাড়া এলাকার কালু মিয়া (ফালু) নামের এক ব্যক্তি। মামলায় আরো চারজনকে আসামী করা হয়।
গত মঙ্গলবার পঞ্চগড় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে বিচারক হুমায়ুন কবির সরকার মামলার ৩নং আসামী মকবুল হোসেন ও ৫নং আসামী সাইয়েদ নূর-ই-আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে, চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম নির্দোষ বলে দাবি করছেন ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্যসহ অনেকেই। ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহেরা খাতুনের অবহেলার কারণে উত্তরাধিকার সনদটিতে ভুল হতে পারে দাবি তাদের।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাদীর ওয়ারিশি জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে মৃত আছিম উদ্দীনের জীবিত পুত্র কালু মিয়াকে ভুয়া দাবি করে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ হতে চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত উত্তরাধিকার সনদ নেন আসামীরা। ওই সনদে বাদীকে ওয়ারিশবিহীন দেখানো হয়েছে। বাদী জীবিত জানা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, এঘটনায় চেয়ারম্যান সম্পূর্ণ নির্দোষ। তবে ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহেরা খাতুন দায় এড়াতে পারেননা। আসামীরা চেয়ারম্যান বরাবর উত্তরাধিকার সনদের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের এই দুই সদস্যকে তদন্তের দায়িত্ব দেন চেয়ারম্যান। পরে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম উত্তরাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখবার দাবি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, যেই উত্তরাধিকার সনদকে কেন্দ্র করে এই মামলা। সেই সনদে কালু মিয়ার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই উল্লেখ ছিলো। অথচ মামলায় উল্লেখ রয়েছে, বাদী কালু মিয়ার তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ইউনিয়ন পরিষদের সুনামক্ষুন্ন করতেই করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত কালু মিয়া অনেক আগেই মারা গেছেন এবং তার কোন স্ত্রী-সন্তান ছিলোনা। আর বাদী কালু মিয়ার প্রকৃত নাম ফালু মিয়া এবং তার বাবার নাম সুরুজ আলী। এই নামে তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। পরে ২০০৮ সালে কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম বদলে কালু মিয়া (ফালু) হয়েছেন। এই উত্তরাধিকার সনদ দেয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এতদিন পর এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার আদালতে জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত ০৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে জামিন দিয়েছেন এবং দুইজনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আবারো জামিনের আবেদন করবো ইনশাআল্লাহ বাকী দুজনও ন্যায় বিচার পাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন