বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

১২০ বলের ম্যাচে ৫২ ডট!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ম্যাচের তখন ১২.৪ ওভার। লিয়াম লিভিংস্টোনের লেগ স্পিন লেগে খেলে এক রানের জন্য দৌড় দেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন। টাইমাল মিলস প্রথম দফায় বলটা ধরতে না পারায় আরেকটি রান নিতে দৌড় দেবেন কি না- কয়েক সেকেন্ড সে দ্বিধায় ভুগলেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ‘কল’ দিয়েছিলেন। আফিফ তাতে সাড়া দিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বুঝলেন দৌড়টা ‘আত্মঘাতী’ হয়ে গেছে। ততক্ষণে মিলসের থ্রো থেকে স্টাম্প ভাঙার আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন জস বাটলার।
মাঠের বাইরে থেকে সেই দৃশ্য দেখে ইংল্যান্ড কোচ ক্রিস সিলভারউডের সে কী হাসি- যেন চল্লিশ দশকের কমেডি জুটি ‘লরেল অ্যান্ড হার্ডি’র শো দেখছেন! কারও সঙ্গে প্রথমবারের সাক্ষাৎয়ে যে এত মজা, সেটা যেন তার জানা ছিল না! গতকাল টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। আবুধাবিতে এ ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ অবশ্য এ ম্যাচে নিজেদের জন্য হাসির খোরাক জোগাড় করতে পারেনি।
প্রতিপক্ষ আলাদা হলেও দৃশ্যপট সেই একই। সেই একই ভুল, ইনিংসের সেই একই গতি-প্রকৃতি। সংবাদ সম্মেলনে ‘ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া’র কথা নামতা পড়ার মতো বলা হলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত সাদামাটা কিংবা আরেকটু ভদ্রভাবে বললে মোটামুটি সংগ্রহেই থেমেছে দলের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও যেমন ৯ উইকেটে ১২৪ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।
সবচেয়ে দৃষ্টিকটু হলো আউটের ধরন। লিটন দাস এমনিতেই রানের মধ্যে নেই। মঈন আলীর প্রথম ওভারে দুটি দর্শনীয় চারে শুরু করা লিটনের আজও ‘আত্মহত্যা’র সাধ জেগেছে! স্কয়ার লেগ এবং ডিপ মিডউইকেট সীমানায় দুজন ফিল্ডার রেখে একটু ঝুলিয়ে বল ছেড়ে লিটনকে সুইপের লোভ দেখান মঈন। টোপটা টুপ করে গিলে লিটন (৯) ফিরলেন ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। একসঙ্গে নেমে দ্রæত কারও ফিরে যাওয়াই যেন নিয়তি।
লিটনের ‘বদঅভ্যাস’- এর কারণে এদিনও সেই নিয়তি মেনে নেওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু মোহাম্মদ নাঈমের মাথায় কী খেলা করছিল কে জানে! লিটন আউট হওয়ার পরের বলেই নাঈমের ইচ্ছা হলো মিড অন দিয়ে মঈনকে উড়িয়ে মারবেন। তাতে ফলটা দাঁড়াল বাংলাদেশের ইনিংসে ১৫ বলের (২.৩ ওভার) মধ্যে দুই ওপেনার আউট। সেটিও টানা দুই বলে! রোমিও-জুলিয়েটের গল্পের মতো- একজন আত্মহত্যা করলে আরেকজনের ‘বেঁচে’ থেকে কী লাভ! নাঈম ৫ রানে ফেরার পর ১৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছে তখন সাকিব আল হাসানের ওপর দায়িত্ব আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অসংখ্য ম্যাচে বাংলাদেশকে প্রায় একা টানতে টানতে সাকিব কি ক্লান্ত? দুই ওভার পর সাকিবও তাই বুঝি রান বের করতে গিয়ে ভুলটা করে বসলেন! পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে ক্রিস ওকসকে জোর করে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন সাকিব (৪)।
পাওয়ার-প্লেতে বাংলাদেশের রান ছিল ৩ উইকেটে ২৭। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দৃশ্যটা অপরিচিত কিছু না। মুশফিকুর রহিম এখান থেকে অনেকবারই বিপদমুক্ত করেছেন দলকে। মাহমুদউল্লাহকে পেয়েছিলেন সঙ্গী হিসেবে। ৩২ বলে ৩৭ রানের একটি জুটিও হলো। তাতে টি-টোয়েন্টির মেজাজে রান না উঠলেও অন্তত রানের চাকাটা ঢাকার জ্যামের রাস্তায় গাড়ি–ঘোড়া চলার মতো চলল। কিন্তু ওই যে বদঅভ্যাসের কথা বলা হচ্ছিল-মুশফিকের জন্য সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল। টি-টোয়েন্টিতে রিভার্স সুইপ ঠিকমতো খেলতে বলের লেংথ বাছাই করাটা গুরুত্বপ‚র্ণ। মুশফিক তা ভুলে গিয়ে লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হলেন এলবিডবøু। ৩০ বলে মুশফিকের ২৯ বলের এই ইনিংসটি আক্ষরিক অর্থেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
আফিফ-মাহমুদউল্লাহ জুটিতে ভর করে শেষটা অন্তত ভালো করার আশায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু ১৩তম ওভারে আফিফের ওই রান আউট এবং ১৫তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর লেগ স্পিনে চিরকালীন দুর্বলতা সমর্থকদের যন্ত্রণার ক্ষতটা আরও গভীর করে ছাড়ে। ইংল্যান্ডের ‘পার্ট টাইম’ লেগ স্পিনারকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ (২৪ বলে ১৯)। যে মেহেদী হাসান ও নুরুল হাসানের শেষ দিকে দ্রæত রান তোলার সামর্থ্য নিয়ে এত কথা হচ্ছে- তারাও হতাশ করেছেন দ্রæত আউট হয়ে।
শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সুরটা ধরিয়ে দিয়েছেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। নয়ে নেমে ১৯তম ওভারে দুটো ছক্কা হাঁকান আদিল রশিদকে। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম ছক্কা। টপ অর্ডার ব্যাটিং যা করতে পারেনি সেটাই সাহস করে করে ফেলেন নাসুম। ওই ওভারে উঠেছে ১৭ রান- বাংলাদেশের এই ইনিংসে এক ওভারে যা সর্বোচ্চ। তবু শেষটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শেষ ওভারে ৫ রান নিয়ে শেষ দুই বলে ফিরেছেন নুরুল ও মুস্তাফিজুর রহমান।
২৭ রানে ৩ উইকেট নেওয়া টাইমাল মিলস, ১৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া লিভিংস্টোন কিংবা ১৮ রানে ২ উইকেট নেওয়া মঈনের বোলিংয়ের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং চোখে বিঁধেছে বেশি। সে যন্ত্রণা আরও বেড়েছে ‘ডট’ বল খেলার সংখ্যায়- ৫২টি। অর্থাৎ ৮.৪ ওভার! ওই তো সেই খোঁড়ানো ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাটিং।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন