শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এমপি-মন্ত্রীদের জন্য মডেল টাউন হচ্ছে

প্লটের ব্যবসার গতি বাড়াচ্ছে রাজউক

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

২০১৪ সালে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল রাজধানীতে আর কাউকে প্লট দেয়া হবে না। সাধারণ মানুষের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি-পার্ক ভেঙে দিয়ে এবার মন্ত্রী, এমপি ও বিত্তশালীদের জন্য নতুন মডেল টাউন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বলা হয়েছে সাধারণ মানুষও এসব প্লটের জন্য আবেদন করতে পারবে। আবার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বছরের পর বছর ফেলে রেখে নতুন ব্যবসার গতি বাড়াচ্ছে রাজউক। উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব) প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এদিকে নতুন মডেল টাউন যদি করতেই হয় তাহলে রাজধানীর বাইরে করা উচিত বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর কোনো কাজ হয়নি। এখন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুতই শুরু হবে। তিনি জানান, তিনটি প্রকল্পেরই দেখভাল করছেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম। অন্য প্রকল্পগুলো দ্রুত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীতে আর কাউকে প্লট দেয়া হবে না। ২০১৪ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, প্লট যিনি পান, তিনি অত্যন্ত লাভবান হন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসনের চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। আগের সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মন্ত্রী, এমপি, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিত্তশালীদের প্লট দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। এ জন্য দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাভার ও কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজার দুই হাজার ২৮৭ একর জমিতে মন্ত্রী-এমপিদের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য এসব মৌজার কয়েক হাজার পরিবারের জমি-বাড়ি ও স্থাপনা অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২২ সালে শুরু হয়ে আগামী ২০২৬ সালে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর বিত্তশালীদের জন্য প্রকল্পটি হবে আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাড় ঘেঁষে। জলাশয়ভিত্তিক আবাসন প্রকল্প। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘আশুলিয়া ওয়াটার বেইজড মডেল টাউন’। এ ছাড়া রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের চেহারার আমূল পরিবর্তন করার জন্য কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকায় করা হবে শেখ রাসেল ওয়াটার বেইজড বিনোদন পার্ক।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, আগে যে যার মতো কাজ করেছে। এখন তা হবে না। আমরা চাই রাজউক যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সেগুলো দ্রুত শেষ করতে। রাজউকের প্রকল্প অন্য প্রতিষ্ঠান নিতে পারবে না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের জন্যই যে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়। সাধারণ মানুষও সেখানে প্লটের আবেদন করতে পারবেন। সেখানে মানুষের ঘরবাড়ি থাকায় এলাকাবাসী বাধা দেবে কি না এ জন্য একটু ধীরে চলতে হচ্ছে। মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে প্রকল্পটি হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং তারা ক্ষতিপূরণ ও প্লটও পাবে। এ জন্য প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশুলিয়ার প্রকল্পটিতে বিদেশি বিনিয়োগকারী পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটার কাজও এখন দ্রুতই এগোবে। আর কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন বাস্তবায়ন করা হবে রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে। বর্তমানে রাজউকের ফান্ডে অর্থে কিছু ঘাটতি রয়েছে।
মন্ত্রী-এমপিদের জন্য কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন : যেসব এমপি-মন্ত্রী রাজধানীতে প্লট পাননি, বিভিন্ন সময়ে তারা প্লটের জন্য সংসদে সরব হয়েছেন। তাদের চাপে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন নামে একটি প্রকল্পপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় রাজউক। মৌজাগুলোর অবস্থান বসিলার পশ্চিম পাশে প্রকল্পটি। ওই বছরই পূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। কিন্তু সেই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেনি রাজউক। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে প্রকল্প এলাকার দূরত্ব ৫-৭ কিলোমিটার। মন্ত্রী-এমপিদের যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে ওই স্থানটিই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জায়গা বেছে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘর-বাড়ি ও বড় ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। এগুলো ভেঙে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের খবর জানাজানি হওয়ায় কিছুদিন আগে এলাকাবাসী আন্দোলনে নামে। পরে রাজউক থেকে আশ্বাস দেয়া হলে তারা শান্ত হয়। এখন আবার সেই স্থানেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন : রাজউকের প্রকল্পপত্রে বলা হয়েছে, কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায় মোট জমির পরিমাণ দুই হাজার ২৮৭ একর। এখানে আট হাজার প্লট নির্মাণ করা হবে। মৌজাগুলো হলো- আহাদিপুর, বড়েকান্দি, বাড়িলগাঁও, বেলতা, দক্ষিণ বাহেরচর, দেওলী কাশারিয়া, নজিপুর, উত্তর বাহেরচর, তারানগর, ছাগলকান্দি, মুন্সিনোদ্দা, চুনারচর, তুরাগ, পাঁচুলী ও ভাকুর্তা। মোহাম্মদপুর বসিলা ব্রিজ পার হয়ে কিছুদূর এগোলেই ঘাটারচর এলাকা। সেখানেই ৫০ দশমিক ৭০ একর জমির ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৭২ একর খাসজমি। বাকিটা আশপাশ থেকে অধিগ্রহণ করা হবে। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকা। এ জন্য প্রকল্পপত্রে ঘাটারচার মৌজার ১২১, ১৯৭, ৭৩৯, ৫০০, ৫০২, ৫৪৫ ও ৪৯৮ দাগের জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত। এসব দাগের জমি ম্যাপে হালট, নাল ও বিল হিসেবে চিহ্নিত আছে। এর বাইরে আশপাশ থেকে বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হবে প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়।
জলাশয়ভিত্তিক মডেল টাউন : আমিনবাজার, মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কাশিমপুরের অংশবিশেষ নিয়ে একটি বৃহৎ আবাসন প্রকল্প করছে রাজউক। তুরাগ নদের পাড় ঘেঁষে সাভার ও আশুলিয়ার বিশাল এলাকা ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রাজউক রক্ষা করতে পারছে না। বর্ষা মৌসুমে রাতের বেলায় নৌকায় করে তারা বালু ফেলে। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই সেখানে চর জেগে ওঠে। এভাবে আশুলিয়ার বিশাল এলাকা ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গাছপালা গজিয়েছে। এ জন্যই আমিনবাজার থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত পুরো এলাকা অধিগ্রহণ করে তুরাগ নদ ও জলাশয়গুলো রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে বলা হয়েছে, যেসব স্থান ভরাট হয়ে গেছে সেখানে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেয়া হবে।
এরই মধ্যে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডব্লিউএম) দিয়ে ওই এলাকার জরিপও করেছে রাজউক। এতে বলা হয়েছে, সেখানে ৭১ শতাংশ পুকুর রয়েছে। বাকি ২৯ শতাংশে প্লট, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট, হোটেল প্রভৃতি তৈরি করা যাবে। এ ছাড়া জায়গাটি বিমানবন্দরেরও কাছে হওয়ায় আরো আকর্ষণীয় হবে। গাবতলী ব্রিজের উত্তরে কোর্টবাড়ি মৌজা ও পশ্চিমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে উত্তর দিকে আশুলিয়া পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাশ দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত এলাকায় হবে এ আবাসন প্রকল্পের কাজ। এসব এলাকায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি, কারখানা, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট, আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোও রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৭ এএম says : 0
এই পুরো টি শহরই এই দলীয় আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতির এম পি মন্ত্রীদের ,ইনসআললাহ আরো দুই বার যদি ক্ষমতায়,এই সংসদীয় পদ্ধতির এম পি মন্ত্রীরা থাকতে পারে,অথবা নতুন করে ও যদি অন্য দল ক্ষমতায় আসে ইনসআললাহ শহর কি পুরোপুরি দেশটি ও তাদের হয়ে যাবে,জনগণের কাছে কিছুই থাকবে না ,জনগণ এই দলীয় আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতি করেছেন,এখন বিষ নামবে,যদি সামনে রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি না করতে পারেন,72এর সংবিধান না মানেন,জনগণের দুঃখ দশায় জীবন যাবে।
Total Reply(0)
Ashik Ak ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
আগে আমাদের মতো মধ্যেবিত্তদের এক মুঠো ভাতের ব্যবস্তা করেন
Total Reply(0)
নাজমুল হাসান ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
সাধারণ মানুষ আজ মরার উপক্রম আর উনাদের জন্য হয় মডেল টাউন।
Total Reply(0)
তরিকুল ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
এই দেশে গরীব মানুষের বসবাস আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক।
Total Reply(0)
হিম সাগর ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
তাদেরই দরকার, আর কারোর না হলেও হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন