শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

অপসংস্কৃতির সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকতে পারে না

প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজু আহমেদ : বাংলা বর্ণমালার চার বর্ণের সমষ্টিতে সৃষ্ট শব্দ ‘ভালোবাসা’। এই বর্ণসমষ্টি বন্ধনের সম্মন্ধে জড়িয়েছে ¯্রষ্টা-সৃষ্টি, বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকাসহ সকল মানব-মানবীকে। পর হতে দেয়নি অন্যান্য সৃষ্টির শাখার কোন ক্ষুদ্র কোন অংশকেও। ‘ভালোবাসা-ভালোবাসি’ শব্দটি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলোর বোধহয় একটি। কেউ দেশকে ভালোবাসে, কেউ গুল্ম-লতাকে আবার কেউ পাখ-পাখালিকে। নদী-সাগর, আকাশ-জমিন, বর্ষা-বাতাসের প্রতিও প্রকাশ পায় বহুমাত্রিক ভালোলাগা-ভালোবাসার ছটা। বাংলা ভাষা সাহিত্যের শব্দ ভা-ারে ‘ভালোবাসা’ শব্দের মতো তাৎপর্যম-িত শব্দ খুব বেশি যোগ হয়নি। ভালোবাসাই মানুষকে বাঁচতে শেখায়, গড়তে শেখায়। ‘ভালোবাসা’র গঠনরীতি, বর্ণরীতি, উচ্চারণরীতি, ভাষারীতি স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা বলতে আমরা যা বুঝি ভারতবর্ষের পেয়ার, আরব বিশ্বের মহব্বত কিংবা আন্তর্জাতিক ভাষাভাষীর ‘লাভ’ তা থেকে ভিন্ন অনুভূতির কিছু হৃদয়ে জাগায় না। উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্ষণকালের কোন ব্যাপারও এটা নয়। প্রেম-ভালোবাসা চিরন্তন-শ্বাশ্বত। সেই আদিম গুহাবাসী থেকে আজ অবধি হৃদয়ে উচ্ছ্বাস আবেগে অতি সহজেই ফুঁটে ওঠে ভালোবাসার লাল গোলাপ। অলৌকিক কিছু না ঘটলে আশা করা যায়, কভু মুছবে না ভালোবাসাময় অনুভূতির বন্ধন। চিরকাল বেঁচে থাকুক মানুষের প্রতি মানুষের, মানবতার প্রতি মানুষের এবং সকল জীবের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। কালের ছাঁচে ভালোবাসার জন্ম একই সময়ে হলেও দেশের ছাঁচে ভালোবাসার প্রকাশ ভঙ্গিমা বদলেছে বহু; হয়তো কোন কালেই কোন দেশে তা একরূপে স্থির ছিল না।
অসভ্য-বর্বর যুগের জঞ্জাল ঠেলে এ বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ সভ্যতার আলোর ছোঁয়া পেয়েছে। কারো কারো সভ্যতা সুসভ্যতায় পূর্ণ হয়েও গেছে। পূর্ণতার ধর্মই হ্রাস পেতে শুরু করা। নিকট অতীতে যারা সভ্য বলে বিখ্যাত ছিল তারা আবার অসভ্যতার পানে যাত্রায় ফিরেছে। প্রকাশ্য অশালীনতা, অবাধ যৌনতা, আবেগের উগ্রতা কখনো সুসভ্যতার নিদর্শন হতে পারে না; সেটা যে পাত্রেই হোক। অথচ ইতিহাস যাদের আমাদের কাছে সভ্য বলে পরিচয় করিয়েছিল সেই তারাই আজ বেহায়পনা-বেলেল্লাপনার গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসেছে। ভৌগোলিক অবস্থান বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের অসহযোগিতা (ক্ষেত্রবিশেষ শত্রুতার) কারণে আমাদের দেশে সভ্যতার পূর্ণ বিকাশ সাধিত হওয়ার আগেই প্রযুক্তির অপব্যবহার বিশেষ করে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির নগ্ন আগ্রাসনে আমাদের নৈতিকতা বোধ উর্বরমুখী হয়ে গঠনের চেয়ে ধ্বংসের দিকে টানছে বেশি। কেননা রং চংয়ের মোড়কে অন্য দেশের, ভিন্ন পরিবেশের সংস্কৃতি নামের বস্তুত অপসংস্কৃতি কার্যত আমাদের ডোবাচ্ছে। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য, এ আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য যে প্রস্তুতি-সচেতনতা দরকার তার থেকে আমরা হাল ছেড়েছি যেন বহু আগেই। ফলাফলে, প্রকট গতিতে আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি তার স্বকীয় অবস্থান হারাচ্ছে (যতটা না হারাচ্ছে তারা চেয়ে দ্রুত আমরা হারানোর পথ খুঁজে দিচ্ছি)। আপনের পরিবর্তে পরের তথা অন্য দেশের, ভিন্ন জাতির যে সংস্কৃতি আমরা বরণ করছি, তা যদিও নিজেদের সাথে পুরোদস্তুর মানিয়ে নিতে পারছি না। যে কারণে বর্তমানে এদেশে শংকর সংস্কৃতির ধারা চলছে এবং নিকট ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সুস্থ সংস্কৃতির দেউলিয়াত্বের বাস্তবতা বরণ করে নিতে হবে। আপন সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ত্যাগ করে অপরের সংস্কৃতি লালন করতে গিয়ে উপহারও কম পাচ্ছি না! বঙ্গ জুড়ে পরকীয়ার রমরমা বাজার বসেছে, নিত্যদিন সংসার ভাঙছে, আত্মহত্যা বাড়ছে সর্বোপরি শান্তি নামক বস্তুটি নির্বাসনে গেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশে মানুষ অবাধে যৌন মেলামেশা করতে পারে। যেখানে বৈধতা-অবৈধতার কোন প্রশ্ন নেই; পুরুষ হোক মহিলা হোক দু’জনের মত থাকলেই হবে। বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা, পরিবার, সন্তান নিয়ে তাদের তেমন কোন ভাবনা নাই। কাউকে ধরতেও তাদের সময় লাগে না আবার ছাড়তেও না। এটাই তাদের চেতনা-সংস্কৃতির অংশ। অথচ আমাদের দেশে এমনটা আশা করা আমাদের ধর্মীয় বোধ, বিবেক বোধ, রুচিবোধ কোনভাবেই মেনে নিবে না। ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে শুধু যে অনুমতি দেবে না তাই নয় বরং কেউ যদি প্রকাশ্যে এমন কর্ম-অকর্ম করে তবে তাকে রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিহত করতে বাধ্য। কাজেই একথা স্বীকার করতেই হবে, পরিবেশ-মানসিকতা ভেদে সংস্কৃতির ব্যাপক রকমফের রয়েছে। অন্য দেশের সংস্কৃতি আমাদের কাছে অশ্লীলতা মনে হলেও সেটা তাদের কাছে স্বাভাবিকতা। কোন বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত উপাদান গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যা গ্রহণ করছি তা আমাদের জন্য কতটুকু উপকারী কিংবা ক্ষতিকারক; এটা ধারণ করা উচিত না বর্জন ।
প্রতি বছরের ন্যায় আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারিও বিশ্বব্যাপী পালিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; বাংলাদেশও বাদ যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ দিনে তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাস দেখলে হৃদকম্প শুরু হয়। দুর্ভাবনায় ভাবি, হায়রে! আমাদের তরুণ সমাজ। যাদের হওয়া উচিত ছিল সমাজের মধ্যে সবচেয়ে সচেতন, শিক্ষিত, জাতির কান্ডারী তারা এভাবে আত্মভোলা হল কী করে? আমি ভালোবাসা দিবস পালনের বিপক্ষে নই কিন্তু ভালোবাসার জন্য এমন একটি নির্দিষ্ট দিন আমরা কেন পালন করব? এর পেছনে যৌক্তিকতা কোথায়? যে জাতির বছরজুড়ে সব দিনগুলোই ভালোবাসা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে তাদের কেন একটি বিশেষ দিনে ভালোবাসাকে সংকীর্ণ করে রাখতে হবে? ভালোবাসা দিবস তো পালন করবে তারা যাদের পরিবারে ভালোবাসার ছিঁটে-ফোঁটা নাই, বন্ধন নাই, সংসার নাই, স্ত্রী নাই, সন্তান নাই। তাদের আছে শুধু প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা। বছর পরে যাদের পরিবর্তন ঘটে যায়। তাদের প্রেমিক/প্রেমিকাকে স্মৃতিতে রাখার জন্য ভালোবাসা দিবস তাদের খুব দরকার কিন্তু আমাদের কেন? ১৩ কিংবা ১৫ ফেব্রুয়ারি কি আমরা ভালোবাসা শুন্য থাকি? বছরের অন্য মাসের ভিন্ন দিনগুলো?
ক্ষণকালের জন্য ধরে নিলাম, বিশ্বায়নের দোহাইয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদেরও ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা উচিত! কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন জ্ঞানী, সর্বোপরি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তথা মানুষ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্দিষ্ট করে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে আমরা পারি না। কোন কাজ করা, কোন দিবস পালন করার ক্ষেত্রে নির্বিচারী মানসিকতা দেখানোর সময় একবিংশ শতাব্দী নয়। এখানে যা কিছু গ্রহণ করবো তাকে অবশ্যই বিচারের কষ্টি পাথরে যাচাই করে নেয়া বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে আমিও ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করতাম এবং অন্যকে উদযাপন করতে উৎসাহিত করতাম; যদি এ দিবসের সাথে ভালোবাসার অতি ক্ষুদ্রাংশও জড়িত থাকত। অতীতের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে আসুন ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রকৃত ইতিহাস তালাশ করি। এ দিনকে ভালোবাসা দিবস বলা হলেও মূলত এর সাথে ভালোবাসার ন্যূনতম সংযোগ রয়েছে, ইতিহাসে তেমন কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। এ দিনটিকে যদি ভালোবাসা দিবস হিসেবেই পালন করতে হবে তবে ভালোবাসা দিবসের ইংরেজি হওয়া উচিত ছিল ‘লাভ ডে’ অথবা ‘লাভার্স ফেস্টিভাল ডে’ । অথচ আমরা যাকে ভালোবাসা দিবস বলে উদযাপন করছি, একটি দিন ও রাতকে প্রেম সরোবরে ডুব দেয়া, সাঁতার কাটা, চরিত্রের নৈতিক ভূষণ খুলে প্রেম সরোবরের সলিলে হারিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সেটার উৎপত্তিগত নাম ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ (ঝধরহঃ ঠধষবহঃরহব’ং উধু) এর প্রথম শব্দটিই এ দিনটির আসল পরিচয়ের জানান দিতে যথেষ্ট। অফাধহপবফ ঙীভড়ৎফ খবধৎহবৎং’ উরপঃরড়হধৎুতে ঝধরহঃ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে- অ চবৎংড়হ উবপষধৎবফ ঃড় নব যড়ষু নু ঃযব ঈযৎরংঃরধহ পযঁৎপয নবপধঁংব ড়ভ যবৎ/যরং ছঁধষরঃরবং ড়ৎ মড়ড়ফ ড়িৎশং. অর্থাৎ এমন ব্যক্তি, খ্রিস্টান গীর্জা কর্তৃক যাকে তার গুণাবলী বা ভালো কাজের জন্য পবিত্র সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ঠধষবহঃরহব অর্থ ভালোবাসা নয় বরং এক ব্যক্তির নাম। সুতরাং সহজেই বুঝা যায়, গীর্জা কর্তৃক ‘পবিত্র সত্তা’ হিসেবে ঘোষিত হওয়া একজন ধর্মযাজকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন-ই এ দিনটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে সম্পর্কে যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা অতি প্রাচীন। বর্তমান সময়ে পালিত এ দিবসের উৎস প্রায় ১৭শ বছর আগের পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালোবাসা’ উৎসব থেকে। রোমানরা পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্ম ধারণ করলেও তাদের প্রাচীন উৎসব ছাড়তে পারেনি বরং সে উৎসবের ভিন্নতা এনেছে মাত্র। এ ঘটনার পেছনে যে ইতিহাস ও কল্পকাহিনী পাওয়া যায় তার সংখ্যা অনেক। তবে ঐতিহাসিকরা যে সূত্রটির ওপর নির্ভর করেছেন সেটি হচ্ছে- রোমের স¤্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস এর শাসনামলে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক-সদালাপী এবং খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। অপরদিকে রোম স¤্রাট ছিলেন দেবদেবীর আরাধনায় বিশ্বাসী। স¤্রাটের তরফ থেকে ভ্যালেন্টাইন্সকে দেবদেবীর পূজা করতে বলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। ফলে, ভালেন্টাইন্সকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে স¤্রাট ভ্যালেন্টাইন্সকে মৃত্যুদ-ের মাধ্যমে হত্যা করেন। উল্লেখ্য যে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স কারারুদ্ধ থাকার সময় প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীরা প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। জনৈক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ে ভ্যালেন্টাইন্সের সাথে দেখা করত এবং দীর্ঘক্ষণ গল্প করত। একসময় ভ্যালেন্টাইন্স মেয়েটির প্রেমে মজে। ভ্যালেন্টাইন্সের ফাঁসি হওয়ার পূর্বে মেয়েটির কাছে যে পত্র লিখে যায় তার শিরোনাম ছিল ‘লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন্স’। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যে রোম শহর তথা ইতালিতে বর্তমানের কথিত ভালোবাসা দিবসের জন্ম সেই ইতালিতে দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ছিল।
বছর জুড়েই আমাদের দেশের রাজধানীসহ প্রায় প্রতিটি শহরের অসংখ্য পার্ক, প্রমোদ তরী, তামাশার ক্লাবে দেখা মেলে আমাদের তরুণ-তরুণীদের প্রেমের চিত্র। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল থেকে আপত্তিকরভাবে গ্রেফতার হয় লায়লা-মজনুদের দল! ইউটিউবসহ দেশে-বিদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের তরুণ-তরুণীদের কীর্তিকলাপ দেখলে লজ্জা হয়, ধিক্কার জাগে। আসন্ন ভালোবাসা দিবসে আমাদের ভালোবাসার পাল্লাটা একটু ভারি করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না হয়তো! বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও যেহেতু ভালোবাসা থেমে থাকে না তাই ভালোবাসা নিয়ে এ বিশেষ দিনটিতে বিশেষ কিছু করতে না পারলে প্রেমিক-প্রেমিকাদের স্বার্থকতা কোথায়! ফলাফলে, নতুনভাবে সৃষ্টি হবে একদল বিপথগামী যুবক-যুবতী, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হবে, খ্রিস্টান-নাসারাদের উদ্দেশ্য সফল হবে অর্থাৎ ইসলামী চেতনায় আঘাত আসবে, অনেকের মহামূল্যবান সতীত্ব বাজারে উঠবে, পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে ।
কথিত ভালোবাসা দিবস সম্পর্কিত জানা-অজানা অধ্যায় অবগত হওয়ার পরেও দেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে লালিত কোন নারী-পুরুষ কি এই দিনে তার প্রিয়জন থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কার্ড, লাল গোলাপ কিংবা কোন উপঢৌকন প্রাপ্তির মানসে অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনবে? কিংবা সতীত্ব (এটা শুধু নারীর নয় পুরুষেরও রয়েছে) হারাবে জেনেও সে পথ মাড়াবে? এরপরেও কেউ যদি এ দিবসকে সামনে রেখে এমন কোন কাজ করে যা সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যায় এবং মাতৃভূমির মাটি ও মানুষের সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে উল্টো পথে হাঁটে তবে তার দায়ভার কার? একটু চিন্তা করলেই স্পষ্ট হবে, ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের সাথে প্রকৃত ভালোবাসার কোন সম্পর্ক কোনকালেই ছিল না এবং আজও নেই। আমাদের ভালোবাসা নির্দিষ্ট একদিনের কয়েক ঘণ্টার ফ্রেমে সীমাবদ্ধ নয় বরং সারা বছরের, গোটা জীবনের। আবেগের ওপরে বিবেককে প্রাধান্য দিতে না পারলে আমরা কিসের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার? নব প্রজন্মকে সুস্থ-সংস্কৃতির চর্চায় মগ্ন করতে চাইলে কথিত ভালোবাসা দিবসের মতো যতগুলো ক্ষতিকর উৎসব প্রচলিত রয়েছে তা থেকে আমাদের বিরত থাকার শপথ নিতে হবে। যতদ্রুত আমরা সত্য ও বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারব, মঙ্গল-কল্যাণ ততদ্রুত আমাদের দ্বারে উপস্থিত হবে। তখন প্রকৃত ভালোবাসায় ভরে উঠবে আমাদের জীবন, গোটা দেশ।
 লেখক : কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন