বিজয়ের ৫০ বছরে আনন্দ-উৎসবে মেতেছে পুরো দেশ। অলিগলি থেকে রাজপথ, প্যারেড গ্র্যাউন্ড থেকে পার্ক-বিনোদনকেন্দ্র সবখানেই তারুণ্যের উচ্ছ¡াস। লাল-সবুজের বিজয়োল্লাস।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠা মানুষের ঢল দেখা গেছে। বিজয় দিবসে সরকারি ছুটি থাকায় সকাল ১০টা থেকেই অনেকে প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন। রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলে দুপুরের পর থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হকাররা বেলুন, পতুল, বাঁশি আর খেলনা ঢোলের তালে শিশুদের আনন্দ দিচ্ছে। দুপুরের পর থেকে লাল-সবুজ পোশাকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে হাতিরঝিলে। শীতের মিষ্টি রোদে তারা ঘুরে বেড়ায় মনের আনন্দে। স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, পরিবারের সব সদস্য, বন্ধুরা বিজয়ের রঙে আনন্দ-উচ্ছ¡াসে মাতোয়ারা। ৫০তম এ বিজয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশিরভাগই মেতে ওঠে সেলফি তোলায়। অনেকে ব্যস্ত সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করায়। কেউবা ওয়াটার বোট বা নৌকা ভ্রমণ করে হাতিরঝিলের বাড়তি আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত। সন্ধ্যার পর হাতিরঝিলের মুক্ত মঞ্চে গান গাইবেন তারুণ্যের প্রিয় ব্যান্ড শিল্পী জেমস ও হাসান। তাদের গান শুনতেও অনেক ভক্ত বিকাল থেকে এসে বসে আছে। এ ছাড়া বিকেল থেকে যারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসছেন, তারা কেউ হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে, আবার কেউ ঝিলের ধারে বসে গল্প আড্ডায় মেতেছেন। শীতের মিষ্টি রোদ ঝিলের পানিতে পড়ে ঝিলমিল করছে। যদিও ময়লা-আবর্জনা যুক্ত দুর্গন্ধময় পানি। তবু ছোট ছোট শিশুরা ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠে বেশ জমা করতে দেখা গেছে।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা বাসাবোর বাসিন্দা আব্দুর রব বলেন, ‘আজকের মহান বিজয় দিবসের ছুটিতে একটু সময় পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করছে। অনেকদিন ধরে ছেলে-মেয়েরা বায়না ধরেছিল ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরবে। সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজ অফিস ছুটি। সে সাথে আমাদের দেশের ৫০তম বিজয় দিবস। এ দিবসের আনন্দ উপভোগ করতেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছি। বেশ ভালোই লাগছে। তবে হাতিরঝিলের পানিটা যদি দুর্গন্ধময় না হতো, পরিষ্কার হতো তাহলে সবাই আরও বেশি আনন্দ পেত।
রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রের মতো মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায়ও সকাল থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ, সব বয়সি মানুষের আগমনে মুখর হয়ে উঠে চিড়িয়াখানা। বাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছেন দর্শনার্থীরা। বেড়াতে আসাদের পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া। অনেকেই হাত ও মাথায় লাল-সবুজের ব্যান্ড পরে এসেছেন। হাতে ছোট পতাকা। চিড়িয়াখানার সামনে বিজয়ের রঙে-রাঙিয়ে দিতে ঘুরছেন আঁকিয়েরা। সরকারি ছুটির এ দিনে লাল-সবুজের বাহারি পোশাকে অনেকেই আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন। ছুটির দিনে খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে আসতে পেরে দর্শনার্থীরা ছিলেন ভীষণ উচ্ছ¡সিত। শিশু-কিশোরদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ ছাড়া বিজয়ের এই ৫০ বছরপূর্তিতে রাজধানীজুড়েই ছিল উৎসবের নানা আয়োজন। সবশ্রেণি পেশার মানুষ বিজয়ের লাল-সবুজ রং ধারণ করেছে পোশাকে ও হৃদয়ে। সব বয়সি মানুষ দিনভর মেতে থাকে উৎসবের আমেজে। রাজধানীর খোলা জায়গাগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। সংসদ ভবনের পাশে মানিকমিয়া এভিনিউতে ছিল মানুষের ঢল। রমনাপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, চন্দ্রিমা উদ্যান, শিশুমেলা সবখানে ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন