যে হাতিরঝিল ছিলো দূষণে আচ্ছাদিত এখন তা ব্যস্ততম বিনোদন কেন্দ্র। রাজধানীতে পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে হাতিরঝিলের পূর্ব অংশ। তবে পশ্চিম অংশে তেমন কোন কাজ না হওয়ায় সৌন্দর্যহীনই পড়ে রয়েছে এ অংশ। সোনারগাঁও হোটেলে পিছনের অংশটি এখনো রয়েছে অবহেলিত। এসএসডিএস ও মোটরের সাহায্যে পরীবাগ এলাকার ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থা থাকলেও লেকের পানিতে ভাসছে গৃহস্থালি ও পলিথিনের আবর্জনা। সড়কের পাড় পূর্বপাশের মতো আধুনিকতার ছোঁয়া এখনো লাগেনি। এলাকাবাসীর দাবি এই পাশেও আধুনিকভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হলে উপকৃত হতো নগরবাসী।
হাতিরঝিলের পূর্ব অংশে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পুল, বোটিং সুবিধা। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি নান্দনিক ভাসমান থিয়েটার। সেখানে সাংস্কৃতিক শাস্ত্রীয় আচার পালন, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাট্য-নাটিকা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রয়েছে অত্যাধুনিক গাড়ি পার্কিং ভবন। বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই হাতিরঝিল। সম্পূর্ণ ঝিল ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। ভ্রমণকে আরো আনন্দিত করার জন্য লেকে রয়েছে নৌ-ভ্রমণের সুযোগ। নৌ-ভ্রমণ করার জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট আর ওয়াটার বাস। কিন্তু এসবের কোন সুবিধাই নেই পশ্চিম অংশে। সাধারণ একটি লেকের মতোই পড়ে রয়েছে এ অংশটি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ গবেষকরা জানান, সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে হাতিরঝিল হতে পারত ঢাকায় স্বচ্ছ পানির সবচেয়ে বড় আধার। হাতিরঝিল থেকেই ঢাকার মাছের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব হতো। নগরবাসীর সাঁতার কাটার একটা ভালো জায়গা তৈরি হতো। হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কারের জন্য দুই ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এতে ময়লা নিচে পড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এ ময়লা আমরা তুলে অন্যত্র ফেলা হচ্ছে। কিন্তু শুধু বৃষ্টির পানি ঢুকছে না। পয়োবর্জ্য, ময়লা-আবর্জনাও চলে আসছে।
গতকাল সরেজমিন হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি স্থানে গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পান্থপথ, ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকা থেকে বর্জ্য ও নোংরা পানি সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের ড্রেনসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশ করছে। সেখানে মেশিনের সাহায্যে অধিকাংশ ময়লা তুলে ফেলা হচ্ছে। হাতিরঝিলের ক্যান্সার খ্যাত লেকের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবৈধভাবে নির্মিত ১৬তলা ভবনটি ইতোমধ্যে ভাঙা হয়েছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৩ সালে বিজিএমইএকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে ভবন ভাঙার জন্য বলা হয়। এরপর রিভিউ আবেদনটিও খারিজ হয়। পরবর্তীতে আদালতের কাছে সময় চেয়ে বারবার আবেদন করে সংগঠনটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি ভেঙেই ফেলতে হয়। এ অংশের লেকের যে স্থানের বিজিএমইএ ভবন ছিলো সেখানে ভবনটি ভাঙার পরও ওই স্থানের মাটি এখনো সরানো হয়নি। এত করে লেকের পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পশ্চিম অংশের কয়েকটি স্থানে পানি চলাচল বদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে দূষণ বাড়ছে। এ অংশের মগবাজারের পাশে রেল লাইনের কারণেও পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তবে এখানে একটি কালভার্টের মাধ্যমে পানি প্রবাহ সচল রাখা হয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশের অংশে ছিন্নমূল লোকজনের আনাগোনা থাকায় এখানে সব সময়ই থাকে অপরিচ্ছন্ন।
ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ করেন আরিফ মিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সে এখানে কাজ করছেন। পরীবাগসহ কয়েকটি এলাকার ময়লা আবর্জনা এখান দিয়েই আসে। মেশিনের সাহায্যে ময়লা পরিস্কার করার পর পানি লেকে প্রবেশ করে। আমরা কয়েকজন নিয়মিত এ কাজ করছি। আগে আরো বেশি আবর্জনা ছিলো। এখন অনেকটা কমে এসেছে।
ইস্কাটন এলাকার জসিম বলেন, আগে আমরা এই এলাকায় আসতে পারতাম না। দুর্গন্ধ ও ময়লার জন্য এখানে দাঁড়ানো যেত না। এখন আগের তুলনায় ময়লা কমেছে। এলাকার লোকজন এখন এখানে এসে সময় কাটাতে পারে। তবে পুরো হাতিরঝিলটা যদি একসাথে পানি প্রবাহ সচল করা যেত তাহলে ভালো হতো। বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হলেও সেখানকার মাটি সরানো হয়নি। মাটি সরিয়ে পানি সচল রাখা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন