বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

পর্ন সাইটগুলো বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলতাফ হোসেন খাঁন

আগামী দিনের তরুণ অভিযাত্রীদের ভূমিকা অপরসীম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ঐতিহ্য ঘিরে অনেক অবদান আমাদের তরুণ সমাজের। আলোর ভুবনে তরুণরাই এগিয়ে যাচ্ছে বলে সম্মোধন করা হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজকের তরুণসমাজ অপার ভবিষ্যৎ আজ ধূলিস্যাৎ হতে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে অনাবিল স্বপ্নগুলো। আগামী দিনের উদ্ভাবনাময় সঞ্চার তরুণসমাজ আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। পর্ন আসক্তিতে ভুগছে তরুণসমাজ। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্রায় ৮০ বছর আগে বলেছিল, প্রযুক্তি একসময় একটি নির্বোধ প্রজন্ম উপহার দেবে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, বর্তমান প্রজন্মটা আইনস্টাইনের সেই ইঙ্গিত করা প্রজন্ম।
বর্তমান যুগে যোগাযোগের সহজমাধ্যম ইন্টারনেট। আর এ ইন্টারনেটেই যখন সহজ প্রবেশাধিকার দিয়ে ইনডেক্স করা ৪৫০ মিলিয়ন পর্নোগ্রাফিক সাইট তখন প্রিয় সন্তানের জন্য সমঝদার অভিভাবকের উদ্বিগ্নতা প্রশমিত করার যেন উপায় থাকে না। আর যখন পরিসংখ্যান বলে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের ৩৮ ভাগই ইন্টারনেটে আসক্ত তখন অভিভাবকদের ভাবতে হয় অনেক কিছু। আর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কারণে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে ৫-৭ বছরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুর ১২ শতাংশ এবং ৮-১৭ বছরের ১৬ শতাংশ শিশুর সামনে ইনডেক্স করা এই ৪৫০ মিলিয়ন পেইজগুলোর সাজেশন্স চলে আসে, শিশু মন পরিচিত হয় পর্নোগ্রাফি নামক ভয়াল মানসিক বিকারের সাথে, পরিসংখ্যানের এ তথ্যে প্রযুক্তিকে আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপই ঠেকে অভিভাবকদের কাছে।
বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে পর্নোগ্রাফি আসক্তির কারণে মানুষ যে শারীরিক এবং মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেÑ এব্যাপারে অনেকেরই এখনো স্বচ্ছ কোনো ধারণা হয়নি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশব বা কৈশোরেই পর্নে আসক্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে মানুষের কাছে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের মতো ব্যাপারগুলো খুব গতানুগতিক বা সাধারণ আচরণ বলে মনে হয়। এসব আচরণের মাঝে যে বীভৎসতা কিংবা কদর্যতা আছেÑ তা আর পরবর্তীতে পর্ন আসক্ত মস্তিষ্কটি আলাদাভাবে বুঝতে পারেনা। আর পর্ন আসক্তদের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আগামী দিনের স্বপ্ন শিশুরাই।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পর্নোগ্রাফি অন্যান্য মাদকের মতোই একটা আসক্তি। মাদক যেমন মাদকাসক্তকে প্রভাবিত করে, নীল ছবিগুলোও মানুষের মস্তিষ্কে ঠিক সেভাবেই প্রভাব ফেলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন কোনো কোনো বিজ্ঞানী। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় পর্নোগ্রাফি আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ানক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণত ১৩ বছরের কিশোররা ইন্টারনেট পর্নোতে বেশি আগ্রহী এবং তারা মেয়েদের যৌনতার একটি বিষয় হিসেবে চিন্তা করতে শুরু করে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, নিষ্পাপতার দিন শেষ হয়ে গেছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারে। এটা হচ্ছে ঘরে হেরোইন রেখে শিশুকে ছেড়ে দেয়ার মতো। কিছু ডাক্তার অবশ্য বলেছেন, যারা অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তারা মাদকাসক্তদের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছেন। প্রমাণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী জেফরি সেটিনোভার বলেন, আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে, পর্নোগ্রাফির আসক্তি হেরোইনের মতোই।
প্রসঙ্গত, বৈজ্ঞানিক গবেষকদের দাবি, যাঁরা অধিক মাত্রায় অশ্লীল দৃশ্য উপভোগ করেন, তাঁদের মগজের ধূসর পদার্থ উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার জন্য গবেষকরা ৬৪ জনের বেছে নেন। এঁদের সকলেই পর্নোগ্রাফির নেশায় আসক্ত। এই ৬৪ জনকে একইসঙ্গে যৌনতাবহুল এবং সাধারণ ছবি ও ভিডিও দেখতে দেয়া হয়। এরপর মস্তিষ্কের তাঁদের এমআরআই পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, নাগাড়ে অশ্লীল দৃশ্য দেখার পর তাঁদের মস্তিষ্কের স্ট্রায়াটামের দক্ষিণ কডেটে থাকা ধূসর পদার্থের মাপ তুলনায় ছোট হয়ে গিয়েছে। এই পরীক্ষা থেকেই গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে অবিরল যৌন দৃশ্য উপভোগ করলে মস্তিষ্কে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এই গবেষণা থেকে আমরা এই শঙ্কা করতে পারি যে, আগামী প্রজন্ম একটি মেধাহীন ও অসুস্থ সমাজ উপহার দেবে।
আমাদের দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণ, বাড়ছে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানিসহ আরো নানান রকম যৌন অপরাধমূলক কাজকর্ম। প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে এই রকম খবর নিয়মিত। তাই ব্যবস্থা নিতে হবে এখনি ও সমাজের প্রতিটা কোণ থেকেই। বাঁচাতে হবে তরুণসমাজ, রুখে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রালয়কে।
আর সরকারের চেয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। কঠোর শাসন, মারধর কিংবা কম্পিউটারÑ মোবাইল ব্যবহারে বাধা না দিয়ে বরং আপনার সন্তানের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করুন। বাইরে থেকে ঘিরে না রেখে আপনার শিশুর ভেতরেই এর প্রতিরোধ বুনে দিন। অপসংস্কৃতির সাথে লড়াইয়ের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতিও একটি কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। নিজস্ব নীতিবোধ আর উপলব্ধি দিয়ে সে নিজেই মোকাবেলা করবে পর্নের মতো বিষাক্ত সরীসৃপটিকে। পারিবারিক শৃঙ্খলা, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা পারে, শিশুদের সুস্থ বিনোদন, উন্মুক্ত খেলাধুলার পরিচর্যা সমাজকে দিতে পারে একটি সুস্থ প্রজন্মের উপহার।
য় লেখক : জিনিয়াস স্টুডেন্ট ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন