টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মলিন পারফরম্যান্সের পর জায়গা হারিয়েছেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল থেকে। দেশের মাটিতে হওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের মেলেনি সুযোগ। তবে বাদ পড়ার সেই খেদ থেকেই কি-না ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ছুটছে সৌম্য সরকারের ব্যাটে! এনসিএলের পর বিসিএলেও ব্যাট হাতে তিনি হয়ে উঠেছেন দুরন্ত। বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের এই বাঁহাতি ব্যাটার। এর আগে প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সৌম্য। পরের ম্যাচে মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছিল যথাক্রমে ২ ও ৭৩ রান।
গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচের প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে তিন অঙ্কে পৌঁছান সৌম্য। সেঞ্চুরি পূরণ করতে ২০৫ বল লাগে তার। এই ইনিংসে চার আটটি, ছয় তিনটি। তিনি ফিফটি স্পর্শ করেছিলেন ১১০ বলে। দক্ষিণাঞ্চলের বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের করা ৭৩তম ওভারে শুরুতে সৌম্যর রান ছিল ৮৮। তৃতীয় বলে চার মারার পর পঞ্চম বলে তিনি হাঁকান ছক্কা। ওই ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পৌঁছে যান ৯৯ রানে। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন পরের ওভারে আক্রমণে এলে প্রথম বলে আরেকটি সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সৌম্য। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৭৬তম ম্যাচে এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। দিন শেষ করে অপরাজিত আছেন ১২৮ রান নিয়ে। আর তাতে বিসিএলে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় উঠে গেছেন সবার উপরে। তার ব্যাটে চড়ে প্রাথমিক চাপ সামলে বড় সংগ্রহের পথে রয়েছে মধ্যাঞ্চল। সঙ্গে সালমান হোসাইন (৭০) আর অধিনায়ক শুভাগত হোমের (৬২*) দৃঢ়তায় দিন শেষে ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ২৯৩ রান। তাদের জুটির রান ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে একশ’ (১১৬) পঞ্চাশ। সৌম্য ২৪৭ বলে ১২৮ ও শুভাগত ৮৮ বলে খেলছেন ৬২ রান নিয়ে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মধ্যাঞ্চল শুরুতেই হারায় ওপেনার মিজানুর রহমানের উইকেট। এরপর ক্রিজে যান সৌম্য। তবে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে জমেনি তার জুটি। দুই ওপেনারকেই বোল্ড করে বিদায় করেন নাসুম। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপাকে, তখন সালমান হোসেনকে নিয়ে প্রতিরোধ লড়াইয়ে নামেন সৌম্য। উইকেটে থিতু হয়ে রান বাড়াতে থাকেন তারা। জমে যায় জুটি। তৃতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেন ১৪৪ রান। তাদেরকে আলাদা করেন রিশাদ। ১৫২ বলে ৭০ রান করে স্টাম্প খোয়ান সালমান। নিজের পরের ওভারে এলবিডবিøউ করে তাইবুর রহমানকেও সাজঘরের পথ দেখান রিশাদ। এরপর সঙ্গী হিসেবে শুভাগতকে পান সৌম্য।
এদিকে, পয়েন্ট মাত্র ২। তালিকার তলানিতে রয়েছে উত্তরাঞ্চল। কিন্তু কাগজে কলমে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ফাইনালে ওঠার সুযোগ এখনও রয়েছে দলটির। সে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে তাদের। মোহাম্মদ আশরাফুলের লড়াইয়ের পরও শফিকুল ইসলামের তোপে তেমন স‚চনাই পেয়েছে উত্তরাঞ্চল। রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে প‚র্বাঞ্চলকে ১৬৬ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে উত্তরাঞ্চল। আর নিজেদের প্রথম ইনিংসে নেমে বিনা উইকেটে ৭১ রান তুলে দিন শেষ করেছে তারা। এখনও ৯৫ রানে পিছিয়ে আছে দলটি।
টস জিতে এদিন পূর্বাঞ্চলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় উত্তরাঞ্চল। পেসার শফিকুলের তোপে শুরুটা হয় দারুণ। অসাধারণ বোলিংয়ে দলীয় ১০ রানে পূর্বাঞ্চলের তিন উইকেট তুলে নেয় দলটি। ৭৮ রানে শেষ প্রথম সারীর পাঁচ উইকেট। এই পাঁচটি উইকেটই পান শফিকুল। তাতে একশ রানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে পূর্বাঞ্চল।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে উত্তরাঞ্চলের বাধা হয়ে ছিলেন আশরাফুল। চতুর্থ উইকেটে আফিফের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়ে চেষ্টা করেছিলেন। এরপর জোড়া ধাক্কার পর প্রিতম কুমার ও নাঈম হাসানের সঙ্গে ফের ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৪৭ ও সপ্তম উইকেটে ৩৭ রানের দুটি জুটি গড়েন আশরাফুল। কিন্তু এ ব্যাটারকে সানজামুল ইসলাম তুলে নিলে বদলে যায় চিত্র। ৪ রান তুলতে শেষ চার উইকেট হারালে ১৬৬ রানেই গুটিয়ে যায় দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭০ রানের ইনিংস খেলেন আশরাফুল। ১৬০ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন এ ওপেনার। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ বলে ৩৭ রান। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া ৩৭ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ২৬ রান করেন প্রিতম। উত্তরাঞ্চলের পক্ষে ৩৫ রানের খরচার ৫টি উইকেট নেন শফিকুল। সানজামুল পান ৩টি উইকেট। শরিফুল্লাহর শিকার ২টি।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দারুণ খেলে চলেছেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও জুনায়েদ সিদ্দিকি। অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। তানজিদ ৩৫ ও জুনায়েদ ৩০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত রয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন