জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ৫নং পিংনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মাত্র দুই বছরে শূন্য থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ডাকাতি ও হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাবাসসহ নানা অপকর্মের দায়েও অভিযুক্ত তিনি। অবৈধ অর্থের দাপটে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি নৌকা প্রতীকের মনানয়ন প্রত্যাশী।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের মেইয়া গ্রামের কৃষক মরহুম হাতেম আলীর ছেলে সিদ্দিকুর রহমান। একসময় রাজধানীতে পোশাক কারখানায় সামান্য বেতনের শ্রমিক ছিলেন। বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে এলাকায় হঠাৎ তার উত্থান ঘটে। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এমপি ডা. মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পেয়ে যান। মুরাদ হাসানের নির্দেশে এলাকায় গড়ে তুলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দক্ষিণ সরিষাবাড়ীতে মাদক, জুয়া, নারী কেলেঙ্কারী, সরকারি বরাদ্দ হরিলুটসহ নানা অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষসহ খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাও তটস্থ ছিলেন। ভয়ে কারো মুখ খোলার সাহস ছিল না। মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলে রোষানলের ভয়ে কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন সিদ্দিক।
অভিযোগ রয়েছে, যমুনা নদীতে অন্তত ১০টি স্পটে ড্রেজার মেশিনে অবৈধভাবে উত্তোলনসহ পুরো এলাকায় এককভাবে বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন সিদ্দিক। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় গো-হাট গোপালগঞ্জের সাপ্তাহিক হাট তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারিভাবে গরুর হাটটি মিনহাজ উদ্দিনকে ইজারা এবং পরিচালনার জন্য হাসান আলী নায়েবকে সভাপতি করা হলেও তাদের কোনো কর্তত্ব ছিল না। সিদ্দিক তার নিজের বাহিনী দিয়ে গরুর হাট নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি সপ্তাহে সিংহভাগ বিক্রি রশিদ গোপন ও মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান দেখিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। কথিত রয়েছে, প্রতি হাটে তিনি চোরাই গরুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেও তিনি বাগিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। এলাকায় উন্নয়ন বরাদ্দ এলেও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে এককভাবে কাজ করার নামে সরকারি টাকার নয়-ছয় করেন।
জানা গেছে, মাত্র দুই বছরে তিনি কয়েক কোটির টাকার মালিক হয়ে বর্তমানে চলাফরা করেন ব্যক্তিগত দামি গাড়িতে। বগুড়ায় তার শশুরবাড়িতে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ভবন। নিজবাড়িতেও সম্প্রতি বহুতল ভবনের কাজ শুরু করেছেন। তার বিরুদ্ধে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ সপ্তাহের প্রতি শনিবার তার ব্যক্তিগত অফিসে বসে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তিকে ‘রিলিফ’-এর মতো করে লাইন ধরিয়ে ৫০০-১০০০ টাকা করে বকশিশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পুরনো মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমান নবইয়ের দশকে মেইয়া গ্রামের রহিম মিয়ার শ্যালো মেশিন ডাকাতি করতে যান। এসময় মেশিনের চালককে তিনি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। এরপর নিহতের স্ত্রীকেও তিনি জোরপূর্বক তুলে নিয়ে কিছুদিন তার কাছে রেখে দিয়েছিলেন। হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা হলে সিদ্দিক ৯ বছর কারাভোগ করেন। এছাড়াও র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগেও পৃথক একটি মামলা তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে। নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের নায়ক হলেও মুরাদ হাসান এমপির সুপারিশে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল উপজেলা যুবলীগ তাকে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ দেয়। কিন্তু তিনি ধর্মীয় আচার-আচরণবিরুদ্ধ কর্মকা-েই অধিকাংশ সময় লিপ্ত থাকেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানান। এদিকে ৬ষ্ঠ ধাপের আসন্ন ইউপি নির্বাচনে পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সম্প্রতি নৌকা প্রতীকের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, ‘বঙ্গবন্ধুও জেল খেটেছেন, রাজনীতি করলে মামলা হতেই পারে।' তার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা চলমান ও হত্যা মামলায় ৯ বছর কারাভোগ করে এখন মুক্ত আছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। এছাড়া তার আয়ের উৎস সম্পর্কে তিনি জানান, 'নিজের ব্যবসা-বানিজ্য ও গরুর হাট ইজারা রয়েছে।'
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ বলেন, দলীয় মনোনয়ন দেওয়া-না দেওয়া কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের বিষয়। মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীর অতীত ও বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হয় এমন কেউ নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন