বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উপজাতিদের আদিম নেশায় বিপন্ন উত্তরের বন্যপ্রাণী

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:৪৯ পিএম | আপডেট : ৪:০২ পিএম, ৮ জানুয়ারি, ২০২২

রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সহ বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষি জমি বাড়াতে বনবাদাড় উজাড় ইত্যাদি কারনে উত্তরাঞ্চলের বন্য প্রাণীজগৎ এমনিতেই বিপন্ন ও বিপর্যস্ত। তার ওপরে উপজাতিদের আদিম জীবন ধারার অন্যতম নেশা বন্যজন্ত শিকার করে তা’ ভক্ষণ করার প্রবণতায় দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরের প্রায় সব জেলাতেই রয়েছে উপজাতি মানুষেরা। তবে বৃহত্তর দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, ঘোড়াঘাট, বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, বৃহত্তর বগুড়ার জয়পুরহাট,পাঁচবিবি, বৃহত্তর রাজশাহীর , নওগাঁ ,নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চলনবিল এলাকায় এদের বসবাস। আদিবাসীদের উন্নয়ন ও ধর্মান্তর কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন চার্চ , মিশনারি সংস্থার কার্যক্রমের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডভিশন ও কারিতাস ইত্যাদি এনজিওদের চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও অন্ত ২৫ লাখ আদিবাসী মানুষ আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।
উপজাতি গবেষণা পর্ষদ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মোতাবেক এখনও অন্তত ২৫ লাখ আদিবাসী মানুষ তাদের প্রাচীন জীবনধারা অনুসরণ করে যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই সাঁওতাল। প্রায় ভূমিহীন এই উপজাতিরা স্বভাবতই শহর ও পৌর এলাকা থেকে দুরবর্তি দুর্গম গ্রামাঞ্চলে বসবাস করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ভুস্বামী গোত্রের মানুষদের কাছ থেকে এরা সামান্য জমি নিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করে।
ভুস্বামী সহ অন্যান্য মানুষের জমিতে ফসল রোপন ও কর্তনের কাজই উপজাতি মেয়েদের প্রধান কাজ। কৃষিকাজ ও ঘর গেরস্থালীর কাজ মেয়ের্ইা করে থাকে। চোলাইমদ তৈরীও এদের অন্যতম একটি কাজ। পুরুষেরা করে মাছ ও বন্যপ্রানী শিকারের কাজ। নদনদীতে পানি না থাকা এবং বড়বড় বিল জলাশয়গুলো এখন প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মৎস্যচাষ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় উপজাতিদের মৎস্য শিকার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তীর ধনুক ব্যবহার করে পাখী ও বন্যপ্রানী শিকারই হয়ে উঠেছে তাদের আমিষের চাহিদা মেটাবার একমাত্র অবলম্বন। এটা উপজাতি পুরুষদের নেশাও বটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেজি, বনবেড়াল, মেছোবাঘ , ভোঁদড় জাতীয় প্রানী, ধেড়ে ইঁদুর, শজারু, বনরুই ও শেয়াল জাতীয় প্রানী এবং কিছুকিছু সাপ ও পাখী উপজাতিদের প্রিয় খাবার। বর্ষাকালটা এরা বশতবাড়ীতে থেকেই উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে এবং ঘরে তৈরী চুঁয়ানী ও দারু জাতীয় মদ খেয়ে সময় কাটায় তবে শীত মওসুমে এরা দল বেঁধে তীরধনুক সহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। পুর্ব নির্ধারিত টার্গেট পয়েন্টগুলোতে পৌঁছে তারা বন্যপ্রানী শিকার করে মৌজমাস্তি করে ঘরে ফেরে ।
উপজাতি গবেষনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ভাষায়, এরফলে দিনে দিনে প্রকৃতি ও পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে সেটা তাদের বিবেচনায় আসেনা। তার মতে সরকারকে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। বিপুল সংখ্যক উপজাতি জনগোষ্ঠির ভাষা ও সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ঠিক রেখে তাদের সআভাবিক জীবন যাত্রায় ফেরানোর দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসুচি নিতে হবে। এরফলে বিপন্ন প্রায় বন্যপ্রানী রক্ষা পাবে সুরক্ষা হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রায়হান আহম্মেদ রানার মতে উপজাতিদের নিয়ে যেটুকু কাজ হচ্ছে সেটা মুলত খৃস্টানধর্মে দীক্ষার শর্তে উন্নয়ন। এটাতো কাংখিত হতে পারেনা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলারের মতে উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশেরে ভারসাম্য রক্ষায় অবশ্যই আদিবাসীদের ভুমিকা রয়েছে । এটা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ভাবনা চিন্তার অবকাশ তৈরী হয়েছে ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন