কাজাখস্তানে গত সপ্তাহের প্রাণঘাতী বিক্ষোভকে অভ্যুত্থান চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ। সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর একটি সামরিক জোটের নেতাদের তিনি বলেছেন, এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে একটি ‘একক কেন্দ্র’ থেকে। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, কাজাখস্তানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। পুতিন বলেন, এ অঞ্চলে কোনো বিপ্লবকে বরদাশত করবে না রাশিয়া। বর্তমানে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজাখস্তানে অবস্থান করছে রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সেনারা।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কাজাখস্তানে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরে এটি কাজাখস্তানের স্বাধীনতার ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিক্ষোভে পরিণত হয় এটি। নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬ সদস্যসহ এ বিক্ষোভে প্রাণ হারায় অন্তত ১৬৪ জন। গত ২ জানুয়ারি বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবায়েভের প্রতি অসন্তোষ থেকে এ বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। গত তিন দশক কাজাখস্তানের নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজারবায়েভ। এখনও দেশটিতে ব্যাপক প্রভাব রাখেন তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, দেশটিতে সাম্প্রতিক সহিংসতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন অভিজাতদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সম্পর্ক থাকতে পারে।
সহিংসতা শুরুর এক সপ্তাহ পর কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল। সেনা সদস্যরা অভিযান অব্যাহত রেখেছে আর কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে পাহারা দিচ্ছে। জরুরি অবস্থার পাশাপাশি কাজাখস্তানে বহাল রয়েছে কারফিউ। দেশটিতে প্রায় আট হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভে নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের মধ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) নেতাদের মধ্যে নিরাপত্তা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ বলেন, ‘অপেক্ষারত সশস্ত্র জঙ্গিরা বিক্ষোভে যোগ দেয়। নিশ্চিতভাবে তাদের মূল লক্ষ্য হলো: সাংবিধানিক শৃঙ্খলার অবমূল্যায়ন করা, সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং ক্ষমতা দখল করা। এটা ছিল অভ্যুত্থানের চেষ্টা।’
তিনি বলেন, ষোলজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং ১,৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বেসামরিক মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে, এবং সংখ্যাটি স্পষ্ট করা হচ্ছে। টোকায়েভের মতে, সারা দেশে ১,২৭০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১০০টিরও বেশি শপিং মল এবং ব্যাংক লুট করা হয়েছে এবং প্রায় ৫০০টি পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, যা এখন একটি বিশেষ সরকারী কমিশনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে’, রাষ্ট্রপ্রধান যোগ করেছেন।
২ জানুয়ারি কাজাখের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা গণদাঙ্গায় পরিণত হয় যার মধ্যে আলমাটিতে প্রথম এবং সর্বাগ্রে দেশের অনেক শহরে পুলিশ অফিসার, সার্ভিস সদস্য এবং সরকারী ভবনে হামলা হয়। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে, এবং হতাহতের সংখ্যা অজানা। টোকায়েভের অনুরোধের ভিত্তিতে সিএসটিও দেশে শান্তিরক্ষী পাঠায়। আইন-শৃঙ্খলা, কাজাখ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে, ৭ জানুয়ারির মধ্যে দেশের সমস্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়। সূত্র : তাস। (আগের খবর পৃষ্ঠা ৬)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন