স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সড়কে গণপরিবহন চলাচল করবে শনিবার থেকে। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন করে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবেন বাস মালিকরা। গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। ভাড়া না বাড়িয়ে বিদ্যমান ভাড়ায় গণপরিবহন যাত্রী পরিবহন করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৩ জানুয়ারি থেকে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনার পর থেকেই ভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ দেয়া শুরু করেন বাস মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয় বনানীতে গতকাল সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে বৈঠকে বসে বিআরটিএ। বৈঠকে বাসভাড়া না বাড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে বাসে ভিড় কমাতে অর্ধেক আসন খালি রাখার সিদ্ধান্ত ভালো। কর্মদিবসের সকালে ও বিকালে অফিস শুরু এবং ছুটির সময়ে রাজধানীর গণপরিবহনে আসন পাওয়াই দুষ্কর। সব খোলা রেখে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনে যানবাহনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের শঙ্কা প্রকট হবে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ রোধের লকডাউনে প্রথম দফায় ৬৮ দিন বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। সে বছরের ১ জুন থেকে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। মালিকদের প্রস্তাবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল।
গত বছর দুই দফার একই হারে ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলেছিল বাস-লঞ্চ। ডিজেলের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়ায় গত ৮ নভেম্বর বাসের ভাড়া ২৭ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়েছে। লঞ্চে ভাড়া ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্ধেক আসন খালি রাখলে পিক আওয়ারে তিন থেকে চারগুণ বাস লাগবে। ফলে যানবাহন সঙ্কট হবে নিশ্চিত। অর্ধেক সিট খালি রাখলে যান সঙ্কট কিভাবে দূর করা হবে তার নির্দেশনা নেই। যাত্রী ও মালিক-উভয় পক্ষই করোনার কারণে আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। তাই যাত্রীর ওপর বাড়তি ভাড়ার বোঝা না চাপিয়ে সরকারকেই প্রণোদনা দিতে হবে। করোনার বিস্তার রোধে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুরোদমে খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন কিভাবে সম্ভব হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেছেন, বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনা কার্যকরের বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিআরটিএর কাছে সবার আগে জনস্বার্থ। বৈঠকে আগের ভাড়ায় গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগের বার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার শর্ত মানতে মালিকরা ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। পরে মন্ত্রণালয় ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বৈঠকে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা প্রস্তাব করেছেন বিধিনিষেধ চলাকালে বাস ও মিনিবাসে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা হলে মালিকদের লোকসান গুনতে হবে না। ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা হলে রাজধানীতে পরিবহন সঙ্কট চরম আকার ধারণ করবে ও যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছাবে। এ অবস্থায় বাস ও বাস টার্মিনালে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এখন যেভাবে বাস ও মিনিবাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে সেভাবে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা উচিত। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের এ প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে পাঠানো হবে। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এখন বাস ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। কারণ গত নভেম্বর মাসে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তারা সবশেষে একমত হয়েছেন যে ভাড়া বাড়ানো হলে যাত্রীদের ওপর বেশি চাপ তৈরি করা হবে এবং এ মুহূর্তে বাড়ানো যৌক্তিক হবে না।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানিয়েছেন, আগামী শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে। তবে আগের ভাড়াতেই যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরবিহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই বাসভাড়া নির্ধারণ নিয়ে মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেছি। মালিকদের সবাই বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই আগামী শনিবার থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হবে। দেশের সব অফিস আদালত, কল-কারখানা খোলা। এখন বাসের অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করলে পরিবহন সঙ্কট দেখা দিবে। মালিক পক্ষও অনেক লোকসান হবে। তাই শতভাগ করোনা টিকা নিশ্চিত করে সব আসনে যাত্রী পরিবহনের দাবি জানিয়েছেন বাস মালিকরা।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে, যানবাহন সঙ্কটের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। আগেও অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্ত মানা হয়নি। কিন্তু ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়েছে। এবারও তাই হতে পারে। এর চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কঠোর জোর দিয়ে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন