শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্থায়ীভাবে’ চাষাভুষার টং স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের পতনের দাবি আন্দোলন চলাকালে খাবারের দোকান ও ফুডকোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হলে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চের পিছনে একটি ‘চাষাভুষার টং’ স্থাপন করে। তবে শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় একাডেমিক ভবন ‘বি’ এবং ‘ই’ এর সামনে আরও দুইটি টং স্থাপন করেছে তারা। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনকে পরিচ্ছন্নতার অভিযানে নেমে পুরো ক্যাম্পাসের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেছে শিক্ষার্থীরা।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীরাই চাষাভুষার টং পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু করেছি। আজকে আমরা বি এবং ই বিল্ডিং এর সামনে দুইটি টং স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। আগে ক্যাম্পাসে টং থাকায় সাংস্কৃতিক অনুশীলন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৌদ্ধিক আদান-প্রদান, প্রাণখোলা আড্ডার অসাধারণ পরিবেশ ছিল। টংগুলো তুলে দেয়ায় ক্যাম্পাসে একরকম স্থবিরতা নেমে এসেছিল। টংগুলো পুনরায় স্থাপনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে পূর্বের সেই প্রাণোচ্ছ্বল পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।’
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জানুয়ারি আন্দোলনকারীদের ওপর নারী শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও স্লোগানের অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে শিক্ষকদের একাংশ। মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন শিক্ষক সমাজকে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত দাবি করে বলেন, ‘ আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।’ এমন মন্তব্যের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। এর পর আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুডকোর্ট ও চায়ের দোকান বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীরা ‘চাষাভুষার টং’ নামে একটি অস্থায়ী টং দোকান স্থাপন করে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলাগুলোতে অগ্নিকান্ডে গত বছরের রোপন করা চারা পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরণের আগুন থেকে বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে এবং তা বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করে অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার পাশাপাশি এর থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
অপরদিকে ক্যাম্পাসে চলমান ছাত্র আন্দোলনের পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা দেখেছি বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে আগুন লাগিয়ে গাছপালা ও বন নষ্ট করা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আগেও আমরা দেখেছি বর্তমান উপাচার্যের নির্দেশে কীভাবে ক্যাম্পাসে টিলা কেটে, বনজঙ্গল উজাড় করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা, তার পরিচর্যা করা এবং নিরাপত্তা বিধান করা প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলেও, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশ বারংবার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত এ প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ জঘন্য কাজে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন