শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বৃষ্টিতেও গরম রাজধানীর বাজার

খরচের টাকা জোগাড় করাই কঠিন ‘আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না’ বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি

মো. জাহিদুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’। তবে মাঘ মাস প্রায় শেষ দিকেই চলে এসেছে। এরই মধ্যে টানা দুদিন বৃষ্টি দেখল ঢাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। দুপুরের দিকে দমকা হাওয়াসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি শুরু হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। তবে বৃষ্টির মাঝে ঠাণ্ডা বাতাসেও গরম ভাব বজায় ছিল রাজধানীর বাজারগুলোতে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়ছে।

নিত্যপণ্যের দাম যে হারে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইলে চলে যাচ্ছে, তাতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে না দিয়ে আটকে রাখাটা অনেক কঠিন বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, করোনায় চাকরিহারা, বেকার, আয়-রোজগার কমে যাওয়া মানুষের খরচের টাকা জোগাড় করা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বড় ধরনের ভোগান্তিতে ফেলেছে অনেক পরিবারকে। এতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। এটি সমন্বয় করতে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়। এর ফলে পণ্য ও সেবা খাতের ব্যয় বেড়ে গেছে। যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। গত এক বছরে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারি হিসাবে দাম বেড়েছে চাল ৭৯ শতাংশ, খোলা আটা ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দা ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিন ২৮ দশমিক ১১, পাম অয়েল ৩৮ ও মসুর ডাল ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে সংসারের নিত্যপণ্যের বাজারে। সল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে সবার জন্য ডাল-ভাত জোগাড় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ, শক্তিশালী চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনীতিবিদদের সামনের বছরের অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। কারণ, করোনা মহামারির কারণে গত এক বছরেরও বেশি সময়ে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম হওয়ায় এবং দেশে দেশে টিকা নেওয়ার হার বাড়ায় জীবনযাত্রায় কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরেছে। কিন্তু নতুন এই চাহিদা সঙ্গে সরবরাহ তাল মেলাতে না পারায় জীবনযাত্রার খরচ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা আগের বছর একই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭০। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে তা ২০২০ সালের নভেম্বরের তুলনায় কম। ওই বছর নভেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ ছিল।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে শসা কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরপর রয়েছে বেগুন। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি দাম বেড়েছে ইলিশের। ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এরপর বেশি দাম বেড়েছে চিংড়ির ৫০-৭০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের শাকের দামও বেড়েছে। শাকের আঁটি প্রতি ৫-১০ টার মতো দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি দাম বেড়েছে পালন ও লাল শাকের।
সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম বাড়লেও রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন দেড়শো টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। অবশ্য ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে ঊর্ধ্বমুখী মাছের দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি।
বাজার করতে আসা মানুষেরা জানান, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে আমাদের মতো স্বল্পআয়ের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। দেখেন এ শীতের মধ্যেও বাজারে সবধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক। বাজারে একশো টাকা নিয়ে গেলে দুই-তিনটির বেশি সবজি কেনা যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন