শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পানির অভাবে রংপুরে ৭০ হাজার পাটচাষি বিপাকে

‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতি পাট পচাতে বাধ্য হচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

বৃষ্টির পানির জন্য পাট চাষীদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে। রংপুর বিভাগের চাষীরা পানির অভাবে উৎপাদিত পাট জাগ (পঁচানো) দিতে পারছেন না। গত কয়েক সপ্তাহের তাপদাহ আর অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। পানির অভাবে কৃষকরা পঁচাতে পারছে না পাট। জমিতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেখানে পাট পঁচাবেন। আবার কেউ কেউ পাটকাঠির আশা ছেড়ে গাছ থেকে আঁশ তুলে স্বল্প পানিতে ‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছেন। রংপুর বিভাগের কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ওই সব সাংবাদিন তৃর্ণমূল পর্যায়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করেন।

রংপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ অঞ্চলে পাটের চাষ বেড়ে গেছে। গত বছর এখানে পাট চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর। চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন।
লালমনিরহাটে এ বছর পাট চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, নীলফামারীতে ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর ও রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে। পাটের আঁশ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের কৃষক নির্মল চন্দ্র বর্মণ বলেন, এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছর করেছিলাম ৯ বিঘায়। বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি নেই। পাট পঁচাতে পারছি না। পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছি। পাচ পঁচাতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবো।

‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে স্বল্প পানিতে পাট পঁচানো যায় কিন্তু এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ করে রংপুরের কাউনিয়ার কৃষক হারিছ উদ্দিন বলেন, পাটকাঠির প্রয়োজন। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে খাল-বিলে পানি না এলে রিবন রোটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ এলাকার কৃষক নবের আলী বলেন, এবার ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পানির অভাবে এক বিঘা জমির পাট কেটে ‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছি। এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে তবে বাকি জমির পাট কেটে পঁচাবো। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা গ্রামের অধ্যাপক আমিন উল্লাহ বলেন, পাট চাষ করে বিপদে পড়েছি। পানির অভাবে ৬ বিঘা জমির পাট কেটে পালা দিয়ে রেখেছি। কখন বৃষ্টি হবে তারপর পাট জাগ দেয়া হবে।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের কৃষক সিরাজ আলী বলেন, পানির অভাবে পাট পঁচাতে না পেরে জটিল সমস্যায় পড়েছি। অতিরিক্ত পরিবহন খরচ করে অনেকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নদীতে পাট পঁচাচ্ছেন। আশ-পাশের খাল-বিলে পানি নেই। পুকুরগুলোয় পানি আছে। কিন্তু, মাছ চাষ করায় সেখানে পাট পঁচানো যাচ্ছে না। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অর্ধেক জমির পাট কেটে ফেলে রেখেছি। একই এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, পাট চাষ করতে নানান জটিলতার পড়তে হয়। তারপরও পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া না গেলে কষ্ট বেড়ে যায়। এসব কারণে দিন দিন পাটের চাষ কমে যাচ্ছে। সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারলে উৎকৃষ্টমানের আঁশ পাওয়া যায় না। কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পাট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা ড. আবু ফজল মোল্লা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে। উন্নতজাতের পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন