শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডা. সাবিরা হত্যা মামলার তদন্ত অন্ধকারেই ঘুরছে

রহস্যের জালে আটক ৬

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

খুনও কি নিখুত হয়! এমন একটি পথ কি খুঁজে পাওয়া যায় না; যে পথ ধরে অগ্রসর হত্যা রহস্যের কিনারা করা যাবে? আট মাস আগে রাজধানীর কলাবাগানে নিজ ঘরে খুন হন গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি। হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে অন্ধাকারে শত চেষ্টা করেও পুলিশ তার চোখে আলোর দেখা পাচ্ছে না।

ঘরের ভেতর খুন। ছুরিকাঘাত করে লাশে আগুন। কিন্তু মেলেনি কোনো অস্ত্র, কোথাও নেই খুনির আঙুলের ছাপ। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, যিনি সন্দেহজনক কাউকে ভবনে ঢুকতে বা বের হতে দেখেছেন। সেই ভবনে নেই কোনো সিসিটিভি। তবে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় রয়েছেন ওই চিকিৎসকের একাধিক ঘনিষ্ঠজনও। ইতোমধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আভাস দিয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু এ পর্যন্ত হত্যাকারীদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য না পাওয়ায় হতাশ তার পরিবার। গত বছরের ৩০ মে সকালে কলাবাগান প্রথম লেনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের শোবার ঘর থেকে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান ওরফে লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গলা কাটা, পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়া ছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাবিরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটিতে তিনটি কক্ষ। একটি কক্ষে সাবিরা, বাকি দুটি কক্ষে দুই তরুণী থাকতেন। সাবিরার পাশের কক্ষে থাকা কানিজ সুবর্ণা মডেলিং করেন। আরেকটি কক্ষে যে তরুণী থাকেন, তিনি ঘটনার আগেই বাড়িতে গিয়ে আর ফেরেননি। ওই তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে (বিবিএ) পড়েন।

পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলমান। এখন পর্যন্ত ক্লুলেস। সন্দেহের তালিকায় অনেকে থাকলেও আমরা এখনও নির্দিষ্ট করতে পারিনি। প্রতিটি দিকে আমরা নক করছি। প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করছি। নতুন করে সবাইকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কাজ চলছে, তবে আসামি ধরার মতো অগ্রগতি না হলেও চেষ্টা চলছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবিরা হত্যায় শুরু থেকে কলাবাগান থানার পাশাপাশি ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও পিবিআই ছায়া তদন্ত করে। তারা কানিজ সুবর্ণা, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গৃহকর্মী, ভবনের বাসিন্দা ও সাবিরার সহকর্মী স্বজনসহ অন্তত ৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সাবিরার জব্দ করা মোবাইল ফোনটির ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন সিআইডি থেকে গেছে তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে। ওই প্রতিবেদন তদন্তে কাজে আসবে, এমন কিছু পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে সাবিরার ফোনের কল তালিকার ব্যক্তিদেরও জেরা করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ৩০ মে সকাল ১০টার দিকে বা তার আগে সাবিরার কাছে কে কে এসেছিলেন, বাসার বাইরে থাকায় তা কানিজ দেখেননি বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কানিজ চিকিৎসক সাবিরার ভাড়া বাসায় সাবলেটে ওঠেন। সুবর্ণা দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল ছয়টায় তিনি (সুবর্ণা) প্রাতঃভ্রমণে বের হন। তখন সাবিরার কক্ষের দরজা বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে নয়টায় ফিরে এসে তিনি ওই কক্ষ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। তখন তিনি দারোয়ানকে ডেকে আনেন। দারোয়ান ডেকে আনেন আরেক নারীকে। পরে মিস্ত্রি ডেকে এনে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তারা। তখন কক্ষটিতে আগুন দেখতে পেয়ে ‘৯৯৯’ নম্বরে জানালে তাদের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর পর সাবিরাকে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। আগুন নিভিয়ে একটি চাদর দিয়ে দেহটি তারা ঢেকে দেন। পরে পুলিশ এসে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ওই বাড়িতে কেউ এলে তা নিবন্ধন করার ব্যবস্থা ছিল না। সাবিরাকে খুন করে খুনিরা চলে গেলেও দরজা ভাঙার আলামত নেই। লাশে আগুন ধরিয়েও দেয়া হয়নি। তোশকে ধরে যাওয়া আগুনে তিনি দগ্ধ হন। এছাড়া সাবিরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা ছিল না।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআইয়ের বিশেষ এসপি আহসান হাবিব পলাশ ইনকিলাবকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নেই। নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা করা হয়েছে। অনেকগুলো কারণ সামনে রেখে তদন্ত এগোচ্ছে। কানিজ সুবর্ণাকে নিয়ে বাদীর সন্দেহের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুতই খুনীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মামলার বাদী সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের আট মাস হয়ে গেল, এত দিনেও পুলিশ কিছু বের করতে পারল না। এতে হতাশই লাগে।

এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত সূত্র জানান, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য যেসব সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফোনের সংযোগে কোনো কিছু ঘটেছে কি না, সব খুঁটিনাটি দেখা হয়েছে। সাবিরার কক্ষে ঢুকে তাকে খুন করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের বড় ক্ষত ছিল কাঁধ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি জায়গায়। পরে তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খুনি কোনো আলামত রেখে যায়নি। তদন্ত এগিয়ে নেয়া যায়, এমন একটি ক্লুও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন