পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডাক পিয়নের নূর ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ন‚র ইসলাম অভিনব কায়দায় ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ-এর নামে পাশবই তৈরি করে একের পর এক হিসাব নম্বর খুলেছেন। কয়েক বছর মেয়াদী সঞ্চয়ী স্কিম, ডিপিএসসহ নানা কায়দায় গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান। প্রতারণার শিকার সাগরকান্দি গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুÐু বলেন, মাস দু’ুয়েক আগে তিনি আট লাখ টাকা জমা রাখতে যান গ্রামের সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে। পোস্টম্যান ও পোস্ট মাস্টার জানান ডাক বিভাগের নতুন সেবা নগদ -এ টাকা রাখলে লাখে এক হাজার টাকার মাসিক মুনাফা পাওয়া যাবে ।
তাদের পরামর্শে ন‚র ইসলামের হাতে টাকা দিয়ে হিসাব খোলেন প্রদীপ। দেওয়া হয় নগদের নামে ছাপা পাশ বই, হিসাব নম্বর। এক মাস মুনাফা দেওয়ার পরই লাপাত্তা ন‚র ইসলাম। রাতারাতি বদলি নিয়ে পালিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুনও। শুধু প্রদীপ কুÐুই নন, সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি গ্রামের শতাধিক গ্রাহকের প্রায় তিন কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান ।
গতকাল মঙ্গলবার সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক ভুক্তভোগি নারী পুরুষ ভিড় করছেন সাগরকান্দি পোস্ট অফিসের বারান্দায়। নূর ইসলাম বকুল ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে না পেয়ে কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। কেউবা করছেন বুকফাটা আর্তনাদ।
সাগরকান্দি প‚র্বপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি প্রায় দশ বছর ধরে জমানো পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পোস্টমাষ্টার আব্দুল্লাহর পরামর্শে তিনি চারমাস আগে নগদের নামে হিসাব খুলে ন‚র ইসলাম বকুলের কাছে দেন। চার মাসে তাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে মুনাফাও দিয়েছে। গত সপ্তাহে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে টাকা তুলতে আসেন তিনি। আব্দুল্লাহ তাকে একদিন পর আসতে বলেন।
তিনি বলেন, নির্ধারিত দিনে এসে জানতে পারি আব্দুল্লাহ বদলি নিয়ে সাতবাড়িয়া পোস্ট অফিসে চলে গেছেন। খোঁজ নেই ন‚র ইসলাম বকুলেরও। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অন্য গ্রাহকেরাও। টাকার খোঁজে জেলা পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করে বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে পোস্ট অফিসে লেনদেন করি। বুঝতে পারিনি তারা প্রতারণা করছে। সরকারি চেয়ারে বসে যারা এমন অন্যায় করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই।
চাটমোহর উপজেলায় ছয়তলা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন পিয়ন ন‚র ইসলাম। সেখানে গিয়েও খোঁজ মেলেনি তার। এদিকে প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করলেও কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি পোস্ট মাস্টার আবব্দুল্লাহ আল মামুন। ভুক্তভোগিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে জেলা ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রাথমিক তদন্তে তারা প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান।
ডাক বিভাগের পাবনা উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক শাহীন জুবায়ের হাসান খান বলেন, পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন ন‚র ইসলাম গর্হিত অপরাধ করেছেন। তারা নগদের নাম লোগো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমরা সরেজমিনে প্রমাণও পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্যও আমরা চেষ্টা করব।
ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন