নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে পুলিশই স্যালুট দিয়ে চাকরি দেবে এ কথা বলে পুলিশ কনস্টেবল পদের চাকরি প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলত একটি প্রতারক চক্র। তারপর হাতিয়ে নিত সই করা ফাঁকা চেক ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প। অথচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই চক্রের কোনো সম্পর্কই নেই।
বুধবার এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দাশপুকুর মহল্লার মারুফ শাহরিয়ার (৩৬), বরিশাল সদরের মঙ্গলহাটা এলাকার শাহাদত হোসেন (৩৩), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাতৈনভিটি গ্রামের আব্দুল আজিজ (৪২)।
গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে নেওয়া ৩২টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, প্রায় ৫৬ কোটি টাকার এমাউন্ট বসানো স্বাক্ষর করা ১০টি চেক, ৫০টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে এখন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রতারক চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এসপি আরও বলেন, ‘এরা এখনো চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ কোনো টাকা নেয়নি। কিন্তু ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। এই ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে জিম্মি করে পরে টাকা আদায় ছিল তাঁদের লক্ষ্য।’
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। রাজশাহীতে আবেদন পড়েছিল ১৮ হাজার। এর মধ্যে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাক পড়েছিল সাড়ে তিন হাজার জনের। সাতটি পর্বে শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে তাদের। এতে উত্তীর্ণরা বুধবার লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতসব পরীক্ষার পর যোগ্য প্রার্থীদেরই চাকরি দেওয়া হবে। কোনো তদবির কাজে আসবে না। অথচ প্রতারক চক্রটি চাকরিপ্রার্থীদের বলত, তারা আগে কোনো টাকা নেবে না। চাকরি হওয়ার পরই টাকা নেবে। এ জন্য ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে রাখত। তারা বলত, শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেই চাকরি হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা থেকেই চাকরি দিয়ে দেবেন। পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে পুলিশ স্যালুট দেবে। তারপর চাকরি দেবে। এভাবে তাঁরা অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলেছে।’
প্রতারকদের সঙ্গে চুক্তি করা চাকরিপ্রার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে দেখেন, ভেতরে তাকে কেউ খুঁজছে না। অন্য সব প্রার্থীর মতো তাকেও সব পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। তা দেখে ওই চাকরিপ্রার্থী তাঁর বাবাকে জানান। তাঁর বাবা তখন বিষয়টি রাজশাহীর এসপিকে জানান। পরে এসপির নির্দেশেই জেলা ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে। বলেন এসপি হোসেন।
এই চক্রের সঙ্গে রাজশাহীর একজন রাজনৈতিক নেতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে জানিয়ে এসপি বলেন, ‘একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, চাকরিপ্রার্থীর বাবা ওই রাজনৈতিক নেতার কাছে ছেলের চাকরির জন্য গিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, তিনি চাকরি নিয়ে দিতে পারবেন না। তবে তাঁর একটি উপায় জানা আছে। এরপর তিনিই এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার তিনজনও জানিয়েছেন, তাঁরা ওই নেতার অধীনে কাজ করতেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এসপি মাসুদ বলেন, ‘প্রতারকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে তোলা হবে। তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ডে নিয়ে চক্রের অন্যদের ব্যাপারেও তথ্য নেওয়া হবে। তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন