বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

অন্য দেশের কার্বনের ভারে নতজানু বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মীর আব্দুল আলীম
এটা নভেম্বর মাস। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী দেশে এখন ঠা-া আবহাওয়া বিরাজ করার কথা। ঠা-া আমেজের পরিবর্তে উল্টো চৈত্রের তাপদাহ দেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান একটা দিক। দেশ দ্রুত এগিয়ে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। অতীত নিকটে চমকে ওঠার মতো একটি খবর পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। ‘বন্যা হবে ২শ বছরের চেয়েও ৩ গুণ শক্তিশালী : জলবায়ু পরিবর্তনে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন বাড়বে’। আরও একটি খবর ২০ অক্টোবরের দেশের সবকটি পত্রিকা ফলাও করে ছেপেছে, গত ১৩৬ বছরের মধ্যে গরম সবচেয়ে বেশি ছিল এবারের সেপ্টেম্বর মাসে। চলতি ২০১৬ সাল বিশ্বের জানা ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে চলেছে- এমন ধারণাই গবেষণা সংস্থাগুলো জানিয়েছে। ইতোমধ্যে আরেকটি পিলে চমকানো খবর পত্রিকায় দেখেছি। খবরের শিরোনাম- ‘বাংলাদেশের জলবায়ু ভয়ঙ্করভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে!’ আগামী ২০৮০ সাল নাগাদ সমুদ্রতল ৯ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং কার্বন নির্গমনের উচ্চ হারে যে বৈশ্বিক উষ্ণতা হচ্ছে তার ফলে সমুদ্রতল ১৬ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়বে, খাদ্যাভাব দেখা দিবে, স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়বে এমনকি ২০৮০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ভূমির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে। চমকে ওঠার মতো খবর। এমন পিলে চমকানো খবরে ভড়কে যাই বৈকি! এর প্রভাবে সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোর মানুষ বাস্তুভিটা হারাবে। নদ-নদীতে লোনা পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে, বাড়বে শরণার্থীর সংখ্যা। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়বে এবং দেশে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়ে যাবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হেপাটাইটিস বি, সংক্রামক ব্যাধি, মেনিনজাইটির মত গ্রীষ্মকালীন রোগগুলো বৃদ্ধি পাবে। সে সঙ্গে সূর্যের বিকিরণকৃত আলটাভায়োলেট রশ্মিও অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চামড়ার ক্যান্সার ও চোখের ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি খাদ্যশস্যে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যাবে। খাদ্যাভাব দেখা দিবে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়কে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপ্রথাগত হুমকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জলবায়ু যে এতটা ভয়ঙ্কর পরিবর্তিত হচ্ছে, কী করছি আমরা? অশুভ কিছু ঘটার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বেঁচে থাকার উপযোগী বিশ্ব গঠনে গাফিলতির অবকাশ নেই। আর সময়ক্ষেপণ নয়, এবার কিছু একটা করতে হবে। কারণ, দ্বিতীয় কোনো বিশ্ব নেই যাকে আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে, জলবায়ু আমাদের হত্যা করছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম একটা সুন্দর পৃথিবী পাক, সেজন্য আমাদের এখনই ভাবতে হবে। বর্তমান উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত উদ্বেগ ও আলোচনার কারণ কোনো প্রাকৃতিক উপাদান নয়, বরং মানুষের প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানাবিধ অপকর্মের ফলস্বরূপ বায়ুম-লের ক্ষতিকারক গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রার সংকটজনক বৃদ্ধি গোলকীয় উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। মানুষ্য সৃষ্টি এ আজাব থেকে আমরাই আমাদেরকে মুক্ত করতে হবে। সারা বিশ্বে আওয়াজ তুলতে হবে, ‘আর পরিবেশ ধ্বংস করবো না; নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করবো’। এ সেøাগান বিশ্ব মানবতা, বিশ্ব বিবেককে তাড়িত করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ বিশ্ববাসীকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলছে। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর অযাচিত ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বেড়েছে আরো প্রকটভাবে। পুঁজিবাদী স্বার্থান্বেষী শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো কর্পোরেট সমাজের স্বার্থের কাছে পরাজিত হয়ে জলবাযু পরিবর্তন ও দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে আছে এমন আভাস আমরা অনেক আগেই পেয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ভুগবে বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো। অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ভোগান্তির শিকার হবে এসব অঞ্চলের দুই বিলিয়ন মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ সবচেয়ে খারাপ মৌসুমি আবহাওয়ার মধ্যে পড়বে। ইতোমধ্যে এখানকার দেশগুলোতে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব দৈননিন্দন জীবন থেকে শুরু থেকে কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে পড়তে শুরু করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশদূষণ, খাদ্যাভাব, কর্মসংস্থানের সংকট প্রভৃতি নানা সংকটের আবর্তে পৃথিবী নিপতিত। সাম্প্রতিককালে উষ্ণায়ন এবং তৎসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।  
পরিবেশ নিয়ে ভাবনাটা আমাদের দেশে হয় না বললেই চলে। অন্য দেশের কার্বনের ভারে আমরা নতজানু। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। এখানে কার্বন নিঃসরণের যে মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তার চেয়ে কম পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়। আবার আমাদের দেশে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সুন্দর বনের গাছ, লতাগুল্ম, বনের মাটির প্রকৃতি, গাছপালার পরিমাণ প্রভৃতি হিসাব করে দেখা যায়, এই বনের কার্বন শোষণের ক্ষমতা রয়েছে অত্যধিক। এরপরও আমরা উন্নত বিশ্বের নির্গত কার্বনেরি প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কার্বনের প্রভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধির কারণে ভূ-পৃষ্ঠের বরফ গলে আশঙ্কাজনকহারে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, বিশ্বে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বন্যা, খরা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব পরছে বাংলাদেশে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি বরফের খনি অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়ার হার বেড়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বের বড় বড় বন্দর শহরগুলোর প্রায় ৪ কোটি মানুষ ভয়াবহ সামুদ্রিক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর থেকে রক্ষা পাবে না যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোও। যুক্তরাষ্ট্রে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- মিয়ামি বিচ, লুইজিয়ানা ও টেক্সাস উপকূল। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ১০ মিটার বাড়লেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ। অর্থের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতি হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। তবে মূল ক্ষতিটা হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কার্বনডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১৪ সালে বায়ুম-লে ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি রের্কডমাত্রায় পৌঁছেছে। সংস্থাটির মতে, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর দীর্ঘস্থায়ী গ্যাসগুলোর কারণে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সালে আবহাওয়ায় উষ্ণায়নের হার ৩৪ শতাংশ পরিমাণে বেড়েছে। আগামী দশকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাইক্লোন সিডরে সাড়ে ৩৪ লাখ মানুষের বাড়িঘর ভেসে গিয়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে ওই ধরনের সাইক্লোনে তিন মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হবে। এতে ৯৭ লাখ লোকের জীবণ ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এখনই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চলতি শতকের শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প সময়কালের চেয়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ এলাকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষি উৎপাদন, পানি সম্পদ, উপকূলীয় ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০৯০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি বেশি বন্যা ও খরা হবে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। যেমন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বন্যাপ্রবণ এলাকা প্রায় ২৯ শতাংশ বাড়বে। ২০৮০ সাল নাগাদ সমুদ্রস্তর ৬৫ সেন্টিমিটার উঁচু হলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ৪০ শতাংশ উৎপাদনশীল ভূমি হারাবে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই কোটি মানুষ খাবার পানিতে লবণাক্ততার সমস্যার মুখে পড়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনে বন্যার ঝুঁকিও বাড়বে। বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি, বাংলাদেশের প্রধান নদনদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এভাবে দেখা যায়, প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ১০৯৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্যেদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ১৫ লক্ষ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এদেশের কৃষি খাতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার কারণে এদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল হল ধান। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানচাষ। অসময়ে বন্যা, বৃষ্টি এবং প্রবল শিলাবৃষ্টির কারণেও ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষীরা পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। পাট চাষের ক্রমাবনতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। শীতকালের স্থায়ীত্ব কমে যাওয়ায় রবিশস্যের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শৈত্যপ্রবাহের ফলে সরিষা, মসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসবের ফলে সারা বিশ্বে যে জলবায়ু পরিবর্তনের আলামত দেখা দিয়েছে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই।
পৃথিবী এমন এক মহাবির্পযয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই, আবার কখনো অতির্বষণ। শুষ্ক মৌসুমে মারাত্মক খরা শস্যহানি; আবার প্রলয়ঙ্কারী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পৌণঃপুণিকতা। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে, অন্যদিকে শীতকাল সঙ্কুচিত হচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তের অস্তিত প্রায় বিলুপ্ত। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরির্বতন। এই যে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নি¤œচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি।
বিগত দিনে আমরা দেখেছি, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো উল্লিখিত বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শিল্পোন্নত দেশগুলো তেমন আন্তরিক নয়। কোনো কোনো প্রতিশ্রুতি প্রায় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এবারও বিশ্ব নেতাদের মুখে নানা প্রতিশ্রুতির বাণী শোনা যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চলতি সম্মেলনে বাংলাদেশের বিপন্ন পরিবেশ নিয়ে জোড়ালো বক্তব্য দিয়েছেন। এদিকে বিশ্ব নেতারা কতটুকু নজর দেবেন এটাই এখন দেখবার বিষয়। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নানারকম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশের এই ক্ষতির দিক নিয়ে বিশ্বের প-িতদেরও উদ্বেগের শেষ নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, জলাবদ্ধতা, খরা, অতিরিক্ত লবণাক্ততা এসব সমস্যা এখন প্রকট। এসব সমস্যার কারণে প্রতি বছর দেশের লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব উদ্বাস্তুর পুনর্বাসনের বিষয়টি বাংলাদেশসহ অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করলেও এখনও এ সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি মিলছে না। ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
newsstore13@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন