বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

সাতই নভেম্বরের চেতনা ও জিয়ার কথা

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ড. কেএএম শাহাদত হোসেন মন্ডল
৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। ক্যালেন্ডারের পাতার অন্য সব দিনের মতো নয় এই দিনটি। এই দিনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্ব এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। কারণ এই দিনেই সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রক্ষা পেয়েছিল আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। রক্ষা পেয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের করদ রাজ্য হওয়া থেকে।
আজ থেকে ৪১ বছর পূর্বে এই দিনেই শুধুই স্বাধীনতা নয়, এদেশের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির দুয়ার উন্মোচিত হয় এই বিপবের মাধ্যমে। দেশের আপামর জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের কারণেই সম্ভব হয়েছিল দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে এদেশের মাটি ও মানুষকে রক্ষা করা। এর পেছনে ছিল দেশপ্রেমের চেতনা। সেদিক থেকে দিনটির তাৎপর্য অপরিসীম। তাই ৭ নভেম্বর এক অনন্য দিন- ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’। দেশ ও জাতির জন্য দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব। এদেশের মানুষ তাই গভীর শ্রদ্ধার  সঙ্গে স্মরণ করে সেদিনের সেই মহান বিপ্লবের নায়ক সিপাহী জনতাকে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাতই নভেম্বরের বিপ্লব আগাম কোন ঘোষণা দিয়ে আসেনি− কিংবা কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির ডাকে সংঘটিত হয়নি। এটি হয়েছিল বাংলাদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক একটি সিপাহী ও জনতার যৌথ বিপ্লব। এটি ছিল তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপরিহার্য।
বিশিষ্ট প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের ভাষায়, “বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ঐক্য ও সংহতিই ছিল যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল শক্তি, তেমনি সেই একই সংহতির পুনরুত্থান ঘটে ৭ নভেম্বর। এই পুনরুত্থান অনিবার্য, অত্যাবশকীয় ছিল এ কারণে যে, ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লব-সংগ্রাম বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কালো মেঘমুক্ত করে। ৭ নভেম্বর সংগ্রামী জনগণ ও সিপাহীদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম, বিপ্লবী ঘটনাসমূহের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি অর্জন না হলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক আধিপত্যবাদীদের অধীনতাপাশে আবদ্ধ হওয়ায় সমূহ সম্ভাবনা ছিল। এটি সত্য যে, ভূরাজনৈতিক কারণেই ভারতের শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের উপর বরাবর তাদের আধিপত্যবাদী থাবা উদ্যত করে রেখেছে” (সূত্র: সাতই নভেম্বর যেদিন নতুন সূর্যোদয়, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা সম্পাদিত, মৌলি প্রকাশনী, ৩৮/২খ বাংলাবাজার, ঢাকা: এপ্রিল ২০০২, পৃ. ২১-২৬)।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম আনোয়ার জাহিদ তার এক নিবন্ধে লিখেন, “পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনার পিছনে নিশ্চয়ই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র গণঅভ্যুত্থান যে অভ্যুত্থানের নায়ক সাধারণ মানুষ আর সাধারণ সৈনিক। বন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে তারাই তাঁকে জাতির নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছিলেন। তারাই সেদিন নতুন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিঘোষিত করেছিলেন। ৩ নভেম্বর পুতুল সরকারের পুনরুত্থানের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”
৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে বলতে হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনাবলীর কারণে সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব তথা নিয়ন্ত্রণে চরম সংকট দেখা দেয়। ‘চেইন অফ কমান্ড’ ভেঙ্গে পড়ে। ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ বঙ্গভবনে অবস্থান নেন। তারা সেখান থেকে সফলভাবে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করলেও সেনাবাহিনীর সাথে সংগত কারণেই বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পায়। সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা মেজরদের এই আচরণকে ‘মেজর জেনারেলের’ আচরণের মতো মনে করেন। সিনিয়ররা চাচ্ছিলেন মেজররা সেনানিবাসে ফিরে এসে তাদের কমান্ড মেনে চলুক। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষমতা গ্রহণের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তারা সেনানিবাসে ফিরে যেতে প্রস্তুত বা রাজি ছিলেন না। ক্যু নেতাগণ তাদের ট্যাঙ্ক বহর ও সেনাসামন্ত নিয়ে বঙ্গভবন নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। অপরদিকে সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) খালেদ মোশাররফ এবং ঢাকা ব্রিগেডের অধিনায়ক কর্নেল শাফায়াত জামিল সেনানিবাস নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। বিবদমান-এ দু’পক্ষের মাঝে অবস্থান করছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। জাতির এই দু’জন অভিভাবকই চাইতেন দু’পক্ষের সমঝোতা। তাই কোনো গ্রুপকে বিরূপ করতে পারে এরকম কার্যব্যবস্থা গ্রহণে তারা উভয়ই বিরত ছিলেন। মহান স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদান ও ব্যক্তিগত আচরণের কারণেই উভয় পক্ষের কাছেই তিনি গ্রহণযোগ্য ছিলেন।
১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে। পরস্পর অবিশ্বাস, সন্দেহ, হানাহানি চরমে ওঠে। শান্তি সম্প্রীতির পরিবর্তে হিংসা ও শত্রুতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই সেনানিবাস ও ঢাকা শহরে জোর গুজব রটে যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে। খোদ প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদও জানতেন একটা কিছু হতে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার উপর কারো কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। মোটামুটিভাবে সেনাবাহিনী বনাম বঙ্গভবন স্নায়ুযুদ্ধের প্রান্তসীমায় উপনীত হয়েছিল।
একথা সত্য যে, ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে কোন প্রশাসনই ছিল না। সেনাবাহিনীর মধ্যে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই ছিল না। গোটা দেশটাই ছিল সরকারবিহীন এক অন্ধকারে। দেশব্যাপী ক্যু পাল্টা ক্যুর আশংকা ও গুজব। মোট কথা সব মিলিয়ে দেশে একটা আতঙ্কজনক ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করে। দেশবাসী জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় দিশেহারা ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কিন্তু এই যখন দেশ ও জনগণের অবস্থা, তখন খোন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং মুজিব সমর্থিত দলগুলো মাঠে নেমে পড়ে। ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার তারা মুজিব দিবস পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ মিনারসহ ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে স্মৃতিসভা অনুষ্ঠিত হয়। একটি মিছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফের মা, তার ভাই রাশেদ মোশাররফ এবং বেগম মতিয়া চৌধুরী। তারা ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ শুক্রবার শেখ মুজিবের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শোকসভার আয়োজন করে। এসব ঘটনার উল্লেখ করে বৃটিশ সাংবাদিক এন্থনী ম্যাসকারেনহাস তার বইয়ে লিখেছেন, “এসব কারণে জনগণের মনে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য এই অভ্যুত্থানের (৩ নভেম্বর) সূচনা হয় বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। সর্বোপরি তারা যখন আবিষ্কার করলো, আওয়ামী লীগের মিছিলে খালেদ মোশাররফের মা ও ভাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন তারা বুঝে নেয় যে, তার অভ্যুত্থানের পেছনে ভারত আর আওয়ামী লীগ জড়িত এতে সন্দেহ নেই। দেশের ডান-বাম সব রাজনৈতিক শক্তিই ৩ নভেম্বর ক্যুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। এই প্রতিক্রিয়া সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং ৭ নভেম্বর ঘটে যায় সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান”।
তিনি আরও লিখেন, “সকাল বেলা সৈনিকরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসে। রাজপথে হাজার হাজার মানুষ তাদের অভিনন্দন জানায়। এন্থনী ম্যাসকারেনহাসের ভাষায় “উলাসিত কিছু সৈনিক আর বেসামরিক লোক নিয়ে কতকগুলো ট্যাংক ঢাকা শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় চলাচল করতে দেখা যায়। ওই ট্যাংক দেখে লোকজন ভয়ে না পালিয়ে ট্যাংকের সৈনিকদের সাথে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। চারদিন ধরে তারা মনে করেছিল যে, খালেদ মোশাররফকে দিয়ে ভারত তাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা খর্ব করার পায়তারা চালাচ্ছে। এতক্ষণে তাদের সেই দুঃস্বপ্ন কেটে গেল। জনতা সৈনিকদের তাদের ত্রাণকর্তা বলে অভিনন্দন করলো। সর্বত্রই জোয়ান আর সাধারণ মানুষ খুশিতে একে অপরের সাথে কোলাকুলি শুরু করে। রাস্তায় নেমে সারা রাতভর তারা শ্লোগান দিতে থাকেন আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহী বিপ্লব জিন্দাবাদ, জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ। অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের গণজাগরণের মতো জনগণ আবারও জেগে উঠেছে। এটা ছিল সত্যিই এক স্মরণীয় রাত। সিপাহীরা রাত ৩টায় অবরুদ্ধ জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে। সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারীর সদর দপ্তরে জিয়াকে কাঁধে করে নিয়ে আসে সৈনিকরা। সৈনিকরা আনন্দ আপ্লুতভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে। অসংখ্য সৈনিক তাকে ফুলের মালা দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা, সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘চেইন অব কমান্ড’ ফিরে আনার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে রাত দেড়টা নাগাদ সিপাহী বিপ্লবের খবর বেতার মারফত দেশবাসীর কাছে পৌঁছে যায়”। জিয়া এ সময় বেতারে একটি ছোট ভাষণ দেন। উক্ত ভাষণে তিনি দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি দেশের সর্বস্থানে অফিস, আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, নৌ-বন্দর ও কল-কারখানাগুলো পূর্ণভাবে চালু রাখার ঘোষণা দেন।  
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য আমাদের জাতীয় জীবনে তাই অসীম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাষায় বলতে হয়, “সংহতি ও বিপ্লব দিবসের শিক্ষা আমাদের নিবেদিতপ্রাণ জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রমিক জনগণকে আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য নতুন ‘বিপ্লব’-এর উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনে প্রেরণার উৎস এবং নতুন মহিমান্বিত ‘বিপ্লব-এর পূর্ণ সাফল্যের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম, ত্যাগ ও ঐক্য অপরিহার্য”।
৭ নভেম্বর-এর তাৎপর্য সম্পর্কে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আমিনুর রহমান সরকারের ভাষ্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অপশাসনের বিরুদ্ধে, ক্ষমতালিপ্সার বিরুদ্ধে, জটিল ও কুটিল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, আধিপত্যবাদী নীল নকশার বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর এক জ্বলন্ত বিদ্রোহ। সেনাবাহিনীর জওয়ান আর সচেতন জনতা সম্মিলিতভাবে ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে এই দিনে যেভাবে আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম মর্যাদা সমুন্নত করেছে, জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ঝা-া ঊর্ধ্বে স্থাপন করে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে, সমকালীন ইতিহাসে সত্যিই তার তুলনা মেলা ভার (সূত্র: ৭ নভেম্বর- বিপ্লব বনাম ভ্রান্তিবিলাস, জার্নাল পাবলিশার্স, ঢাকা, ডিসেম্বও ২০১৪, পৃ. ১৫৯)।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া যে দেশকে অরাজকতা ও ভারতীয় হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করেন তা প্রতিভাত হয় ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ঘটনাবলীর সময় ঢাকার ব্রিগেড অধিনায়ক এবং ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের দক্ষিণ হস্ত কর্নেল শাফায়াত জামিলের বক্তব্য থেকে। তার ভাষায়, “জিয়া সেদিন সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। প্রকৃতপক্ষে জিয়া তখন দেশকে সামগ্রিক অরাজকতার হাত থেকে যেমন রক্ষা করেছেন, তেমনি ভারতীয় হস্তক্ষেপ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখেন। জাসদের গণবাহিনীর ইন্ধনে সৈনিক সংস্থার নামে কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীর পদবী তুলে দেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেন। এ সময় অনেক সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই বিদ্রোহ ছিল সেনাবাহিনী ও দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত। গণবাহিনী ও সৈনিক সংস্থার পরিকল্পনা ছিল সেনা অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি করে এর মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিছু বুদ্ধিজীবী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে এসে অরাজকতা নিরসন করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাতেন এবং পুলিশ অ্যাকশনের নামে ভারতীয় হস্তক্ষেপ হয়ে যেত। জিয়া এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে দৃঢ়তার সাথে তা মোকাবিলা করেন। জিয়া দেশপ্রেমিক সৈনিকদের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন এবং তাদেরকে পুরো ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করেন। সৈনিকদের সহায়তায় তিনি কর্নেল তাহেরের বিদ্রোহ প্রশমন করেন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ তিন বাহিনীর মধ্যে পদবী অক্ষুণœ রাখেন। এভাবেই জিয়া সেনাবাহিনী ও দেশকে রক্ষা করেন” (দৈনিক দিনকাল, ২০/১০/১৯৯৮)।
দেশ ও জাতি আজ চরম সংকটে আবর্তিত। গণতন্ত্র নির্বাসিত। করিডোর ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কবলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অখ-তা আজ চরম হুমকির মুখে। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলীতে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ পাখির মতো প্রতিনিয়ত নিহত হচ্ছে। অথচ সরকার নীরব। এক দলীয় শাসন জাতির বুকে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে রয়েছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকোচিত। অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত আজ গোটা দেশটাই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। খুন, গুম, হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতন আজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা দেশটাই যেন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায় পরিত্রাণ পেতে চায় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের নাগপাশ থেকে। কিন্তু এজন্য এই মুহূর্তে দরকার জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং একটি গণতান্ত্রিক দুর্বার আন্দোলন। ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতা বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেÑ এই প্রত্যাশাই আজকের এই দিনে।
 লেখক : প্রফেসর, ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস ও সাবেক প্রো-ভিসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সড়হফধষংয৫২@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন