শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

থমকে গেছে মেগা প্রকল্প

হু হু করে বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

কাজের পীক সিজনেই রড, সিমেন্ট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক গতিতে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে থমকে গেছে অনেক মেগাপ্রকল্প। বাড়ছে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল এবং ব্যয়। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কয়েকটি প্রকল্প সীমিত পরিসরে সচল থাকলেও ছোটবড় অনেক প্রকল্পের কাজে ভাটা পড়েছে। আবাসন খাত প্রায় থেমে গেছে। উৎপাদনমুখী বিভিন্ন খাতে শিল্প কারখানা নির্মাণ ও সম্প্রসারণ এবং বেসরকারি-ব্যক্তি পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এলজিইডিসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চলমান উন্নয়ন প্রকল্প এখন স্থবির। বড় বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও দাম কমার আশায় কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। তবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কবে কমবে বা সহনশীল হবে তা কেউ বলতে পারেন না।

নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা ঠিকাদারেরা। লোকসানের আশঙ্কায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন তারা। প্রায় বছর ধরে নির্মাণ সামগ্রীর মুখ্য উপকরণ- রড, সিমেন্ট ও ইটের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণ খাতে সব ধরনের সামগ্রীর দাম গড়ে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। সেই সাথে প্রকল্পের সময় বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়িতে মেগা প্রকল্পের বহরসহ প্রায় দুই হাজার প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মীরসরাই-সীতাকুÐ ও ফেনীর সোনাগাজীর বিশাল এলাকায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজও চলছে। আবাসন খাতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে লাখ লাখ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ সামগ্রীর আকাশছোঁয়া দামে এখন উন্নয়ন কর্মকাÐ থমকে আছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আমরা এখন প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। কারণ ঠিকাদাররা লোকসান দিয়ে কাজ করতে চাইবেন না। এতে প্রকল্পের কাজে গতি কমে গেছে। ফলে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নও কঠিন হয় পড়বে। সিডিএর উদ্যোগে নগরীতে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় ১৩শ’ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড প্রকল্পের ব্যয় তিন দফা বাড়িয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এ দুটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় ফের বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজেও ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিকাশমান আবাসন খাত। রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাত আমাদের জর্জরিত করছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। এ অবস্থায় আমরা শঙ্কিত। এভাবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবাসন খাতেও মূল্য বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খুব শিগগির আমরা এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। আবাসন খাতে দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্যানমারের সিনিয়র ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. মাঈনুল হক বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আবাসন খাতে ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে আবাসন নির্মাণে মানও অক্ষুণœ রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা কঠিন সময় পার করছি।

আবাসন সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকে প্রকল্প কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে এ খাতে সংশ্লিষ্টরা আর্থিক সংকটে পড়ছেন। অতিরিক্ত ব্যয় পুষিয়ে নিতে আবাসন খাতে মূল্যবৃদ্ধি হলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

সম্প্রতি নগরীতে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেছেন এলজিইডি ঠিকাদার মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, এক বছরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ অবস্থায় লোকসান দিয়ে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মূল্য না কমলে কাজ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলেও জানান তারা। ঠিকাদাররা বলছেন, সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। আবার বাজারে সরবরাহও কমে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

ব্যক্তিগত খাতেও উন্নয়ন থমকে গেছে। বাড়ির মালিকেরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। নগরীর লালখান বাজারের বাসিন্দা নূরউজ্জামান খান জানান, পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন করে তৃতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু এখন আর কাজ চালিয়ে নিতে পারছেন না। ছোটখাটো কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তার মত অন্যরাও মাঝপথে কাজ বন্ধ রেখেছেন। দাম কমবে এমন আশায় রয়েছেন তারা। একইভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠান আধাআধি অবস্থায় নির্মাণ কাজ ফেলে রেখেছে। নির্মাণ সামগ্রীর ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবক্ষেত্রে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
AH Kanak ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৪৭ এএম says : 1
হঠাৎ করে রড়, সিমেন্ট, বিটুমিনসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন ঠিকাদাররা।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৪৮ এএম says : 1
দাম কমানো না হলে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন। এতে দেশের চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ঠিকাদারদের মানবিক দিক বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে যাবতীয় নির্মাণ উপকরণের দাম কমানো হোক।
Total Reply(0)
Ahad Ahmed ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 1
আমরা গরিব য়ারা আশা করে বসে আছি দু থেকে তিন রুম করব তা কি করে সম্ভব
Total Reply(0)
Burhan Ahmed Dukon ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 1
ডিজিটাল দেশে আরো বাড়তে পারে
Total Reply(0)
Jaman Khan ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 1
ব্যবসায়ীরা কোনদিনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারন পাবলিক কারণ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তারাও বেশি দাম দিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করে
Total Reply(0)
MD Aslam Sikder ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 1
আমরা এখন অভিভাবক হীন অবস্থায় দিনযাপন করছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।
Total Reply(0)
Nurulafsar Abbasali ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 1
উন্নয়নের বাংলাদেশ তাই।। উন্নয়ন হলেতো বাড়তে হবে
Total Reply(0)
Hasib Hasib ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫১ এএম says : 1
এই জন্য তো রডের পরিবর্তে সরকারি রাসতার কাজে রডের পরিবর্তে বাস ব্যবহার করতেছে
Total Reply(0)
Eddris Ali Nishad ১৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৫১ এএম says : 1
দাম না বাড়লে উন্নয়ন হবে কিরাম করে,পাবলিক এটি বোঝে না ক্যান
Total Reply(0)
জনাব আলী ১৮ মার্চ, ২০২২, ৯:৪৬ পিএম says : 1
আমি দিনে এনে দিনে খাই ভাবছিলাম ৩ টা রুম বানাবো এখন কি করি
Total Reply(0)
মিজান ২০ মার্চ, ২০২২, ৩:৫৬ পিএম says : 1
জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারনে প্রকল্প ব্যয় যদি বাড়ানো হয় তাহলে যখন জিনিসপত্রের দাম কমবে তখন প্রকল্প ব্যয় কমানো হবে কিনা সে ব্যপারেতো কিছুই বলে না আমাদের পীর সাহেবেরা,
Total Reply(0)
হাবিবুর রহমান ২৪ মার্চ, ২০২২, ৯:১৪ এএম says : 1
আবাসন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সহ সকল বাসাবাড়ি নির্মানে ব্যাক্তিবর্গের উচিত এই মহুর্থে নির্মান কাজ অন্তত ২।৩ মাস বন্ধ রাখা।এছাড়া অতি মোনাফালোভী রাগব বোয়ালদের দৌরাত্ব বন্ধ করা যাবেনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন