শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ব্যয়বাহুল্য নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

নাগরিকদের জীবন যাপন ব্যয়ের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন সিইও ওয়ার্ল্ডের এক জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় ও ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রকাশিত রিপোর্টে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সিইও ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশের খেতাব লাভ করেছে পাকিস্তান। আর জীবন যাপনের ব্যয়বাহুল্যের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে শীর্ষ স্থান লাভ করেছে সুইজারল্যান্ড। এরপর শীর্ষ দশে অবস্থান করছে যথাক্রমে নরওয়ে, আইসল্যান্ড, জাপান, ডেনমার্ক, বাহামাস, লুক্সেমবার্গ, ইসরাইল, সিঙ্গারপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে পাকিস্তানের পর শীর্ষ সাশ্রয়ী দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান, ভারত, সিরিয়া, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান ও তিউনিসিয়া। লক্ষ করলে দেখা যায়, বিশ্বের ব্যয়সাশ্রয়ী শীর্ষ দেশগুলোর অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। সামগ্রিকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোই এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। ব্যয়বাহুল্য এবং ব্যয়সাশ্রয়ী দেশের তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে এক প্রকার সাযুজ্য বিদ্যমান। ইউরোপের উচ্চ আয়ের দেশগুলো জীবনযাত্রার ব্যয়ের দিক থেকেও শীর্ষে থাকা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন অনেকটাই ব্যতিক্রম। অভ্যন্তরীণ সম্পদ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে না থাকলেও জীবন যাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে সবেচেয়ে বেকায়দায় পড়ছে এখানকার দরিদ্র মানুষ।

যে পাঁচটি বিষয় বা সূচকের ভিত্তিকে সিইও ওয়ার্ল্ড এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা হচ্ছে, জীবনযাপনের খরচ, বাসা ভাড়া, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, খাবারের দাম এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের আয়-রোজগার বেশি হওয়ার সাথে সাথে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে এবং চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য থাকলে জীবনযাপনের ব্যয় কোনো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় না। কিন্তু সমাজে আয়বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করলে এবং পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে পণ্যমূল্যের অযৌক্তিক উল্লম্ফনে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বহ হয়ে উঠে। বাংলাদেশে এ ধরনের বাস্তবতা বিদ্যমান। দেশের অর্থনীতি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। বাণিজ্য ঘাটতি, কম রাজস্ব আয়, বাজেট ঘাটতি এবং আর্থিক খাতের দূরবস্থা নিয়ে অর্থনীতিবিদগণ শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কিছু উচ্চাভিলাষী মেগা প্রকল্প এবং প্রণোদনার ঘোষণায় প্রবাসীআয়ের রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ছাড়া দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে কোনো শুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় কোনো সঙ্গত কারণ ছাড়াই পণ্যমূল্য বেড়ে চলেছে। সেই সাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সরকার নিয়ন্ত্রিত সেবামূলক খাতগুলোর ব্যয় অব্যাহত গতিতে অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ব্যয়বহুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য উৎপাদন ও কাঁচামাল পরিবহন সুগম করার ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ। চলমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সামনে অপার সম্ভাবনার হাতছানি। বিশেষত চীন ও জাপানি বিনিয়োগ এবং শিল্পকারখানা রি-লোকেট করার যে সব প্রস্তাব দেখা যাচ্ছে, তাতে লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। টেকজায়ান্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশিত দেশীয় কোম্পানিগুলোও দেশের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সন্দেহ নেই, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামীতে জীবন যাত্রার ব্যায় আরো বাড়তে পারে। অতএব, সম্ভাব্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পথে বিদ্যমান অন্তরায়সমূহ দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব সরকারের। সেই সাথে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে যথেচ্ছ সরকারি পরিষেবা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেটেড তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে দারিদ্র্য বিমোচন অসম্ভব। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। আয়বৈষম্য এবং মূল্যসন্ত্রাসের কারণে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ব্যবসায় ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের আয়বৈষম্য নিরসন এবং ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে পণ্য ও পরিষেবার মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য পরিষেবার মূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, পুষ্টি ও নিরাপত্তার সামগ্রিক বিষয়গুলোকে যথার্থভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উন্নয়নের সুফল একশ্রেণির লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ ধনীর সম্পদ বৃদ্ধির উপযোগ হিসেবেই ব্যবহৃত হবে। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য ও জীবনমানের উন্নয়নে কোনো কাজে আসবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:১৯ পিএম says : 0
Top to Bottom we are corrupt as a result majority of our populations are suffering too much---then what's the point we give seas of blood to liberate our country from the clutch of Pakistan??????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন