শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি আমলে নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

খাদ্য নিরাপত্তা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। রাষ্ট্রের সামরিক প্রতিরক্ষার চেয়ে এটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদা ও সার্বজনীন অধিকারের মধ্যে খাদ্য অন্যতম। সব নাগরিকের জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো পুরণ করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করেই সব মানুষের খাদ্য চাহিদা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। চাহিদা অনুসারে পরিকল্পিত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার সাথে সাথে এর উৎপাদন খরচ, দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং যোগান নিশ্চিত করার ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা ছাড়া রাষ্ট্র সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনা। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের সরকারের তরফ থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনের দাবি করা হলেও খাদ্যমূল্য যখন তখন লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেলের মত নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটেড কারসাজির অভিযোগও দীর্ঘদিনের। কিছু সংখ্যক মুনাফাবাজ, মজুদদারের কারণে দেশের সাধারণ কৃষক এবং দরিদ্র মানুষ ধানের বাম্পার ফলনের সুফল থেকে বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছে। কথিত ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্তভোগী সিন্ডিকেটের সাথে দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। ধানের ভরা মওসুমে ভারত থেকে নিম্নমানের চাল আমদানি এবং বাম্পার পেঁয়াজ উৎপাদনের পরও সীমান্ত পথে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ অবারিত রেখে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় গত দুই বছর দুই দফায় পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। সে অভিজ্ঞতার আলোকে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হলেও এই ভরা মওসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ করে দিয়ে দেশের কৃষকদের কাঙ্খিত মূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেও ভারতের কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে রাজধানী অভিমুখে পদযাত্রা করে জীবনযাত্রা অচল করে দিয়েছিল। এখন ভারতের পেঁয়াজের আগ্রাসনে দেশীয় পেঁয়াজ চাষীরা মূল্য বঞ্চিত হয়ে বিক্ষোভ করছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সময়সীমা একমাস বাড়িয়ে দেয়ায় দেশের পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে যে পেয়াঁজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা, তা এখন ৩০-৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে এবার আলু ও টমাটোর মত মওসুমি ফসলেরও মূল্য পাচ্ছে না কৃষক। ধান, আলু, পেঁয়াজ, টমাটো ইত্যাদির উৎপাদন খরচ না উঠায় পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছে লাখ লাখ কৃষক। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগররা পুঁজি হারিয়ে নিরুৎসাহিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য।

আগে আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র কৃষকের পেঁয়াজ উঠানো শুরু হওয়ায় এমনিতেই পেঁয়াজের মূল্য কমে এসেছে। এহেন বাস্তবতায় আরো একমাস ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়িয়ে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে, এই প্রশ্ন করেছে বিক্ষুব্ধ পেঁয়াজ চাষীরা। দেশের কৃষক এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে দেশীয় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের ৩১.৫ ভাগ দারিদ্রসীমার মধ্যে রয়েছে। প্রায় ৪ কোটি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে, ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত্রি যাপনে বাধ্য হচ্ছে। করোনাকালীন বাস্তবতায় কয়েক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। এরই মধ্যে গতমাসে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ৬.২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির তথ্য পাওয়া গেছে। গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২১ এর র‌্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের ১১৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার চেয়েও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। পানি, বায়ু ও পরিবেশ দূষণে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাও চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয়ের সাথে সাথে বাণিজ্যিক ও আমলাতান্ত্রিক দূরভিসন্ধির কারণে সৃষ্ট খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ও মূল্যস্ফীতির যাঁতাকল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন