হোসেন মাহমুদ
এক ঐতিহাসিক নির্বাচনে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের সব স্বপ্নসাধ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়ে ও গোটা বিশ^কে বিস্মিত করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। আসছে জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের পর চার বছরের জন্য বিশে^র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবন হোয়াইট হাউস বা সাদা বাড়ির বাসিন্দা হতে চলেছেন তিনি। আমেরিকার ইতিহাসে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আর কখনো হয়নি। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা এর আগে কেউ কারো সাথে এ রকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারির সাথে তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সব ক’টিতেই হেরে যান। বিতর্কে হেরেও কোনো প্রার্থীর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা আগে দেখা যায়নি। আর কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর চরিত্র ও কথাবার্তা নিয়েও এ রকম অসম্মানজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ডোনাল্ডের মতো আর কোনো প্রার্থীই এত বিতর্কের সৃষ্টি করেননি। যে কোনো বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। আর কোনো নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের এ রকম বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়নি।
রয়টার্সের সর্বশেষ তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০, আর হিলারি পেয়েছেন ২২৮। পপুলার ভোট ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯২ লাখ ১৩ হাজার ১৮৮ আর হিলারি পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৩। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের মধ্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি ২৩৮টিতে জয়ী হয়েছে। হিলারির ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জয় পেয়েছে ১৯২টি আসনে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ৩৪টিতে। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ৫১ আসনে রয়েছে রিপাবলিকানরা। আর ডেমোক্র্যাটদের হাতে রয়েছে ৪৭টি আসন।
এবারের তাক লাগানো নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সকল বিচারেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নিউইয়র্কে এক ব্যবসায়ী পরিবারে ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করা ডোনাল্ড জন ট্রাম্পের বয়স এখন ৭০। ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিতে ¯œাতক ডিগ্রি লাভের পর ১৯৭১ সালে পিতার ব্যবসার দায়িত্ব পান ও সাফল্যের পরিচয় দেন। তিনি রিপাবলিকান দলের সমর্থক হলেও আগে কখনো সক্রিয় রাজনীতি করেননি। তাই কোনো রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও তার নেই। ইতোপূর্বে যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন সাবেক গভর্নর, সিনেটর কিংবা চার তারকা জেনারেল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি দাঁড়াবেন তা কারো জানা ছিল না। প্রথম যৌবনে পিতার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তিনি নিজের মত ব্যবসা শুরু করেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তিনি ধনকুবেরে পরিণত হন। এ ছাড়াও তার আছে ক্যাসিনো ও স্টকমার্কেট ব্যবসা। ফোর্বসের তথ্যে তার সম্পদের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলার বলা হয়েছে। অবশ্য ট্রাম্প নিজে তার সম্পদের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারের কম নয় বলেছেন। তিনি রাজনীতিক না হয়েও জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত দলীয় সম্মেলনে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্খী মনোনীত হন। পরবর্তীতে দলের অন্যান্য মনোনয়ন প্রার্থীরা একে একে সরে গিয়ে তার জন্য পথ পরিষ্কার করে দেন। কিন্তু তখনো কারো মনে হয়নি যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। দিন এগোনোর সাথে সাথে ট্রাম্পের স্বরূপও ফুটে উঠতে থাকে। তার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে অভিবাসী, মুসলিম ও নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী আগমন বন্ধ করার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ করার কথা ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সীমান্ত ২ হাজার মাইলের বেশী দীর্ঘ। তিনি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমন নিষিদ্ধ করবেন বলে জানান। নারীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচনা ও ধিক্কারের শিকার হন। তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন একাধিক নারী। ট্রাম্পের আরো দু’ স্ত্রী ছিলেন, তাদের ঘরে তার সন্তানও আছে। তার বর্তমান তথা তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া প্রথম জীবনে মডেল ছিলেন এবং নগ্ন মডেলিং করেছিলেন। শোনা গেছে যে স্বামী বিজয়ী হলে তিনি নগ্ন হয়ে স্টিপট্রিজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ রকম একজন নারীর স্বামী নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও একজন সাবেক নগ্ন মডেল সে দেশের ফার্স্টলেডি হচ্ছেন।
তবে ট্রাম্পের চরিত্রের যে বিষয়গুলো বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে তা হচ্ছে ব্যবসায়িক জীবনের সফলতার মতো রাজনীতিতেও সাফল্য তিনি অর্জন করেছেন। ট্রাম্প পেশাদার রাজনীতিক নন, তাই শুরু থেকেই রাজনীতিকদের মতো আচরণ করেননি। তিনি যা ভালো মনে করেছেন, ভেবেছেন, বলা উচিত মনে করেছেন তাই বলেছেন। তিনি কারো সমালোচনাকে গুরুত্ব দেননি, এ যেন ‘নদী আপন বেগে পাগলপারা’র মতো ব্যাপার। বস্তুত, সাধারণ দৃষ্টিতে তার কোনো বক্তব্য, তার কোনো পদক্ষেপ ভোটদাতাদের তেমন আকর্ষণ করার মত ছিল বলে কারো মনে হয়নি। তাই প্রায় সকল জনমত জরিপেই তিনি পিছিয়েছিলেন। যে কোনো অর্থেই ভোটদাতাদের কাছে তার পজিটিভ ইমেজ ছিল না। এমনকি তার নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সার্বিক সমর্থনও তিনি পাননি। অনেক নেতাই তার কাছ থেকে ঘোষণা দিয়ে দূরে সরে গেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে তার বিরোধিতাও করেছেন, এমনকি হিলারিকে ভোট দেবেন বলেও ঘোষণা করেন। ফলে এমনও মনে হয়েছে যে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রাখলেও হালে পানি পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ট্রাম্প তাতে ভ্রƒক্ষেপ করেননি। নিজ কাজে ও কথায় তাকে একবারেই অনমনীয় দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রার্থী যিনি নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন যদি তা তার পক্ষে না যায়। এভাবে মার্কিন ভোটারদের বিভক্তির মধ্যে ঠেলে দেন তিনি। এতকিছুর পরও শেষের দিকে এসে হঠাৎ করেই হিলারির সাথে তার ব্যবধান কমতে থাকে। এমনকি তিনি হিলারিকে ছাড়িয়েও যান। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর রয়টার্সের সর্বশেষ জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলে জানানো হয়। কিন্তু ৮ নভেম্বর ভোটপর্ব শেষে ফলাফল প্রকাশের ধারা দেখে সবার চিন্তা পাাল্টে যায়। দেখা যায়, হিলারি কোথায়, বিজয়ের পাখিরা ট্রাম্পের চারপাশে ডানা মেলে উড়ছে।
হিলারির এ পরাজয় নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ চলছে। বিশ্লেষকরা এর পাঁচটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে ট্রাম্পের পক্ষে শ্বেতাঙ্গ সমর্থনের জোয়ার, বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির পরেও তার অবিচল থাকা, রাজনীতিতে ‘বহিরাগত’ হয়েও কাউকে পাত্তা না দেয়া, হিলারির ই-মেইল নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তৎপরতা এবং নিজের ধারণার উপর ট্রাম্পের আস্থা। তবে বড় কথা হচ্ছে হিলারির প্রতি মার্কিন জনগণের আস্থার অভাব। তার ইমেইল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এফবিআইর টানাহেঁচড়া তার জন্য ভীষণ নেতিবাচক হয়েছে। এটাকে আরো পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, মার্কিন জনগণ যতই শিক্ষিত হোক, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করুক, এবারের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে তারা মানসিকতার দিক দিয়ে অত্যন্ত রক্ষণশীল রয়ে গেছে, নারী প্রেসিডেন্ট চায় না তারা। ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তিনি ভদ্র, চৌকস, দায়িত্বশীল, রাজনীতিক হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে সাফল্য লাভ করতে পারেননি।
এবারের নির্বাচনে স্পষ্ট হয়েছে যে মার্কিন শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা এখনো একজন নারীকে তাদের শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নয়। এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ভাষায়, ‘মনে হচ্ছে আমেরিকানরা এখনো একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট পেতে এবং তারা তাদের ট্রাডিশন থেকে বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত নয়। আগামী দুশো বছরেও তাদের মানসিক উন্নয়ন হবে কিনা সন্দেহ। তার পরিবর্তে একজন ফুটবল মাথা, সেক্সিস্ট, রেসিস্ট জোকারকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিতে তাদের আপত্তি নেই। অথবা তারা ব্যক্তির চাইতে দল পরিবর্তন করাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।’ অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গরাও ব্যাপক হারে তাকে ভোট দেননি বলেই বলা হচ্ছে। ফলাফলে দেখা গেছে, হিলারি ৮৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোট পেয়েছেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোট যা তার পাওয়ার কথা ছিল না। তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপারে একাধিকবার কটু কথা বলেছেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেছেন। তারপরও কৃষ্ণাঙ্গরা তাকে ভোট দিয়েছেন। হিলারি সকল কৃষ্ণাঙ্গের মন জয় করতে পারেননি। আবার ল্যাটিনো বা হিস্পানিকদের ভোটেরও পুরোটা হিলারি পাননি। ৬৫ শতাংশ হিস্পানিক তাকে ভোট দিলেও ২৯ শতাংশ দিয়েছে ট্রাম্পকে। তরুণরা হিলারিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু তাদের ভোটও হিলারি আশানুরূপ পাননি। দেখা যাচ্ছে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের ৫৫ শতাংশ তাকে ভোট দিয়েছেন, ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ। ট্রাম্প নারীদের সম্পর্কে বেফাঁস কথা বলায় নারীরা তার উপর বিতৃষ্ণ ছিলেন। কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, হিলারি পেয়েছেন ৫৪ শতাংশ নারীর ভোট, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। তার মানে এই যে মার্কিন নারীরা অনেকেই ট্রাম্পের অপমানে তেমন কিছু মনে করেননি। আরো কথা হচ্ছে, হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি, এফবিআইর তদন্তের দাবি শেষ পর্যন্ত হিলারির প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতার জন্ম দিয়েছে। এ কথাও বলা হচ্ছে, নির্বাচনী জরিপও হিলারির জন্য কাল হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জরিপেই হিলারির এগিয়ে থাকার কথা জানা যায়। সব জরিপের ফলাফলে বলা হচ্ছিলো অনায়াসে জিততে চলেছেন হিলারি যে কারণে ভোটারদের কাছে প্রত্যক্ষভাবে পৌঁছানোর চেষ্টাও ডেমোক্র্যাটদের কম ছিল। আর সর্বশেষ বিংশ শতকের জরিপের পদ্ধতি বিপজ্জনকভাবে ভুল তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে।
এসবের বাইরে কথা হচ্ছে, মার্কিন জনগণের বড় অংশটিই সম্ভবত পরিবর্তন চাইছিল। বারাক ওবামার নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাটরা একটানা আট বছর ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের বদলে হয়তো নতুন মুখ চাইছিলেন মার্কিন ভোটদাতারা। অন্যদিকে ট্রাম্প পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি রাজনৈতিক নেতা নন। তার হাতে ক্ষমতা দেয়া হলে পরিবর্তন আসবে। তার এ কথায় হয়ত ব্যাপকভাবে ভোটদাতা জনতা প্রভাবিত হয়েছেন। নারী হিলারির চেয়ে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান দেয়া পুরুষ ট্রাম্পের উপর আস্থা রাখাকেই তারা ভালো মনে করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্প প্রথাগত রাজনীতিতে ক্লান্ত জনতার শঙ্কার জায়গাটি ধরতে পেরেছিলেন। অভিবাসনে আতঙ্কিত জনতা, মুক্ত বাণিজ্যের দৌলতে উত্তরোত্তর কাজ হারাচ্ছে উৎপাদন শিল্পের শ্রমিক। ক্রমেই বেড়ে চলা ইসলামিক মৌলবাদে ভীত জনতা ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যে নীরবে সমর্থন জুগিয়েছে। একের পর এক মহিলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছে। ট্রাম্পও মহিলাদের নিয়ে নানা বিদ্রƒপ করেছেন। কখনও তা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম যতই হিলারির পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যতই ছি ছি হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন জনতা ট্রাম্পেই আস্থা রেখেছে।
এবারের নির্বাচনে একটি বিষয় সবার দৃষ্টি করেছে। তা হচ্ছে জনমত জরিপের অসারতা। সকল জনমত জরিপে হিলারির নিশ্চিত বিজয় বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করে জয় হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এ প্রসঙ্গে এক বিশ্লেষকের মন্তব্যের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশ্লেষক বলেন, জনমত জরিপে অংশ নেন শিক্ষিতরা। এখন দেখা যাচ্ছে শিক্ষিতরা মূর্খদের কাছে হেরে গিয়েছেন। যাহোক, মার্কিন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে জনমত জরিপের এতদিনের রমরমা বাণিজ্য এবার যে প্রচ- ধাক্কা খেল তাতে সন্দেহ নেই।
এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিজয় ভাষণে ট্রাম্পের সুর পাল্টে যেতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে নির্বাচনী প্রচার সদর দফতরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘বিভেদ ভুলে আমাদের আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকাকে আমি সবসময় শীর্ষে রাখব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এ জন্য এসেছি যেন আমরা একসঙ্গে কাজ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই আমেরিকাকে মহান করার জন্য কাজ করব।’ নিজের সদিচ্ছার পরিচয় দিয়ে ভোটের কারণে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, যারা অতীতে আমাকে সমর্থন দেননি, তারা সংখ্যায় কম হলেও আমি তাদের কাছে সাহায্য ও দিক নির্দেশনার জন্য যাব। উল্লেখ্য নির্বাচনের সময় তিনি হিলারির সমালোচনা করলেও বিজয় বক্তৃতায় তার প্রশংসা করেন।
১০ নভেম্বর ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারী অবমাননা ও অনৈতিকতার অভিযোগে নির্বাচনের প্রাক্কালে শতাধিক কবি ও লেখক আমেরিকার জনগণের প্রতি খোলা চিঠি হিসেবে দেয়া এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জেনিফার এগান, জুনট ডিয়াম ও স্টিফেন কিং প্রমুখ। তাদের মতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে বিশ্ব জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলের মতো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। নোবেল বিজয়ী ওল সোয়েঙ্কা অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তিনি গ্রিনকার্ড ফেলে আমেরিকা ছেড়ে চলে যাবেন। হ্যারি পটার খ্যাত জে কে রাওলিং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর হ্যারি পটার সিরিজের ভয়ঙ্কর লর্ড ভোল্ডিমোর্ট চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর আগে লেখক সালমান রুশদি ট্রাম্পকে শিশু ধর্ষক, যৌন উন্মাদ, কর ফাঁকিবাজ হিসেবে তুলে ধরেন।’
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন। অনেক আমেরিকান দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন। এ রকম কিছু হলে কানাডা তাদের স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছে। এসব ঘটনা থেকে আমেরিকার ভাঙ্গন সম্ভাবনা জোরদার হতে পারে বলে কেউ কেউ আশংকা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনোই কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। হিলারির সামনে সে সুযোগ এসেছিল। দলের সার্বিক ও ওবামার মত একজন সফল প্রেসিডেন্টের সক্রিয় সমর্থনও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু সকল সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভাগ্য তাকে সহায়তা করেনি। পরাজয় স্বীকার করে তিনি ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তার সাফল্য কামনা করেছেন। হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হলে কি হতো আর না হতো তা এখন অর্থহীন আলোচনা। বরং যিনি প্রেসিডেন্ট হলেন সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীতে দেশ ও জনগণের জন্য কি করেন, জটিল বিশ^ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনদিকে নিয়ে যান, তাই এখন দেখার অপেক্ষা।
য় লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন