শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দান

আয়তন, মিনার ও মুসুল্লির কারণে দেশ নয় এশিয়ার সর্ববৃহৎ জামাতে পরিণত হয়েছে

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৪৯ পিএম

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদজামাতের জন্য প্রস্তুতের শেষ প্রান্তে। এই মাঠে নির্মিত বিশাল সৌন্দর্যমন্ডিত মিনারটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার বলে কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে। ৫১৬ ফুট দীর্ঘ সর্বোচ্চ ৬০ ফুট উচ্চতার দুটি গম্বুজসহ মোট ৫২ গম্বুজ এর পাদদেশে আসন্ন ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের জন্য দিন রাত কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালে নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ৬ টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গোর এ শহিদ ময়দানের মিনারটি ইতিমধ্যেই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঈদ কার্ডে স্থান করে নিয়েছে। গুগলসহ আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে ঈদগা মাঠটি। বিভিন্ন কারনে বৃটিশ শাসনামল থেকে ঐতিহাসিক দিনাজপুরের গোর এ শহীদ বড় ময়দানটি এখন দৃষ্টি নন্দন মিনার আর মুসুল্লির অংশগ্রহনের কারনে ঐতিহাসিক ঈদগা মাঠে পরিণত হয়েছে। করোণার কারনে নামাজ আদায় বন্ধ থাকার পর এবার ঈদুল ফিতর এর নামাজ আদায় হবে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একসাথে সর্ববৃহৎ জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। চলছে মিনার সংস্কার ও রঙ করা, ধোয়ামোছা, মাঠে মাটি ভোরাটসহ আনুসাঙ্গিক কাজ। মুসুল্লিদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এরই মধ্যে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদ জামাতকেই দেশের সর্ববৃহৎ মাঠ ও জামাত হিসাবে অভিহিত করা হয়। দিনাজপুর গোর এ শহীদ ময়দানটি ২২ একর জমির উপর অবস্থিত। এর মধ্যে ১০ একর জমি নামাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালের জামাতে প্রায় ৬ লক্ষ মুসুল্লি জামাত আদায় করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জায়গা ও মুসুল্লির উপস্থিতির দিক দিয়ে শোলাকিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ঈদগা মাঠটি। এছাড়া এই মাঠে যে মিনারটি তৈরী করা হয়েছে তা শোলাকিয়া নয় দেশের এমনটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ মিনার বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে থাকার জন্য মুল গম্বুজ (মেহেরাব) সহ বড় বড় মিনারগুলি পাইলিংয়ের মাধ্যমে মজবুত কাঠামোয় নির্মান করা হয়েছে। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে ২০১৫ সালে এ ঈদগাহের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়। ৫২টি গম্বুজ নিয়ে তৈরী মিনারের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এর মাঝে আরো ২০ ফুট উচ্চতার ৫২ গম্বুজ নিয়ে ৫১৬ ফুট প্রস্থের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ ময়দানের ঈদগাহ মিনারটি এখন ঐতিহাসিক মিনারে পরিণত হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি গম্বুজে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি।

এতদঅঞ্চলের বিশাল সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া মাঠটিতে ঘিরে অনেক বড় বড় পরিকল্পনা হয়েছিল। মূলত সেনাবাহিনীর মালিকানার মাঠটি ছিল জনগনের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত। ২০১৫ সালে মাঠের পশ্চিম প্রান্তে মিনার নির্মানের স্বিদ্ধান্ত নেন দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। দৃষ্টি নন্দিত মিনারের পাদদেশে খোলা আকাশের নীচে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি এবং আল্লাহ প্রদত্ত খুশির দিনের নামাজ আদায়ের স্বপ্ন দেখেন। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেনাবাহিনীর সম্মতি পেয়ে যায় ঈদগা মাঠের মিনার নির্মান কার্যক্রম। শুরু হয়ে যায় বিশাল নির্মানযজ্ঞ। দাড়িয়ে যায় আজকের বিশাল ঈদগা মিনার। রাতের বেলা আলোর ঝলকানিতে মিনারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শত শত দর্শনার্থী এখন গোর এ শহীদ মাঠমুখি হয়। এ ব্যাপারে হুইপ ইকবালুর রহিম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় দৃষ্টিনন্দন মিনারটি নির্মান করা সম্ভব হয়েছে। অনেক বড় বড় কর্মকান্ডের মধ্যে দিনাজপুরের ঈদগা মাঠটি স্থান করে নিতে পেরেছে। দিনাজপুরের মানুষ এজন্য কৃতজ্ঞ। কর্মকান্ড ইতিহাস সৃষ্টি করে আবার ইতিহাসের পাতায় ঠাই নিয়ে থাকে। এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ এই মিনারের পাদদেশে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঐতিহাসিক পাতায় ঠাই করে নিয়েছে। নিরাপদ ও সহজে বিশাল জামাতে অংশগ্রহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থার দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কর্তৃপক্ষ দেখছে বিষয়টি।

জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ জামাত সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের লক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা লক্ষ লক্ষ মুসুল্লির অংশগ্রহনে দু’রাকাত নামাজে শরীক হওয়া। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মুসুল্লির ওজুর জন্য ট্যাপ স্থাপন করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার) জানিয়েছেন, গোর এ শহীদ বড় ময়দানের দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগা মাঠের মুসুল্লিদের অংশগ্রহন, যানজোট সৃষ্টি না হওয়াসহ যানবাহন নিয়ন্ত্রনে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। মাঠের চারিদিকে ট্রাফিক ব্যবস্থার পাশাপাশি যানবাহন রাখার জন্য গ্যারেজ বা ব্যবস্থা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন