শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মাদকাসক্তি থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে

মো: আরাফাত রহমান | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২২, ১২:০৬ এএম

বর্তমান বিশ্ব যে কয়টি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন তার মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। বিশ্ব জুড়ে আজ মাদকাসক্তি একটি জটিল সামাজিক ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের সমাজে এই দূরারোগ্য ব্যাধির তীব্রতা আরো বেশি প্রবল। এর শিকার হয়ে দেশের যুব সমাজ তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। দিন যত যাচ্ছে এর ভয়াবহতা আরো বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকদ্রব্য হচ্ছে সেসব দ্রব্য বা বস্তু যা গ্রহণের ফলে মানুষের স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন ঘটে। শুধু তাই নয়, এসব দ্রব্যের প্রতি তাদের এক ধরণের নেশার সৃষ্টি হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে নেশা সৃষ্টি করাকে মাদকাসক্তি বলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে, মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রমাগত বিক্ষিপ্তভাবে গ্রহণ করা এবং এসব দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। মাদকদ্রব্যের এই নেশা সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন নেশা জাতীয় যে কোনো দ্রব্যই হারাম। সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম হওয়া সত্তে¡ও এসব দ্রব্যসামগ্রীর প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকদ্রব্য প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিষ্কজাত সংজ্ঞাবহ সংবেদন হ্রাস পায় এবং বেদনাবোধ কমায়। তাই এগুলো কখনও কখনও বেদনানাশক হিসেবে চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মাদকদ্রব্যে মুখ্য ভেষজক্রিয়া ঘটে। চিকিৎসাগত ব্যবহারের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বেদনানাশ। কিন্তু মাদকদ্রব্যের বেদনানাশক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে তন্ত্রাচ্ছন্নতা, আনন্দোচ্ছাস, মেজাজ পরিবর্তন, মানসিক আচ্ছন্নতা, শ্বাস-প্রশ্বাসের অবনমন, রক্তচাপ হ্রাস, বমি, কোষ্ঠবদ্ধতা ও মূত্র হ্রাস, অন্তঃক্ষরাগ্রন্থি ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনসহ অনেকগুলো অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়াগুলোর সবটাই মাদক গ্রহণের মাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মাদকের ধরন অনুসারে এগুলোতে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।

অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে সব মাদকেই গভীর ঘুম আসে এবং পরিণামে মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ স্তিমিত হয়। বিভিন্ন রকমের মাদকের মধ্যে পার্থক্য বস্তুত এগুলোর ক্রিয়া শক্তি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিহিত। ক্রমাগত মাদক ব্যবহারে এগুলোর সহনক্ষমতা বাড়ে এবং শারীরিক নির্ভরশীলতা বা আসক্তি জন্মে। হেরোইন অত্যন্ত বিপজ্জনক ও আসক্তিকর মাদকগুলোর অন্যতম। আসক্তিকর বিধায় অধিকাংশ মাদকদ্রব্যই সাধারণত রোগ নিবারক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। সচরাচর ব্যবহূত অধিকাংশ মাদকদ্রব্যই আফিমজাত। ক্যানাবিস থেকে উৎপন্ন মাদকদ্রব্যগুলোর মধ্যে আছে গাঁজা, ভাং, চরস, মারিজুয়ানা, হাশিশ, প্রভৃতি।
এসব নিষিদ্ধ দ্রব্যের পাশাপাশি কিছু কিছু জীবন রক্ষাকারী ঔষধও নেশার উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। মানুষের স্বাভাবিক মানসিক ক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী এ প্রক্রিয়াকেই মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যদিও জাতিসংঘ কনভেনশনে মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। অবৈধ মাদকদ্রব্য অসংখ্য জীবন ধ্বংস করে এবং সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়। মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবসায় এবং এর প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বহু শতাব্দী ধরে মাদকদ্রব্য গ্রহণ জীবনের জন্য একটি দুষ্ট বাস্তবতা এবং গত ৫ দশকে এতে আসক্তির পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের মাঝামাঝি হওয়ার ফলে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে খুবই উপযুক্ত। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে শত শত নদ-নদী ও খাল দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মাদক চোরাকারবারিরা সমুদ্র উপকূল ও নৌপথকে তাদের পণ্য পাচারের খুবই উপযুক্ত পথ হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে ভারতের অনুপ্রবেশযোগ্য বিশাল সীমান্ত। ভারতে বৈধভাবে ফেনসিডিল প্রস্তুত হয়। ১৯৮২ সালে উৎপাদন বন্ধের পর সা¤প্রতিককালে বাংলাদেশে ফেনসিডিল একটি অপব্যবহারযোগ্য মাদকদ্রব্যে পরিণত হয়েছে।

টাইডিজেসিক নামে একটি ভারতীয় ইনজেকশনও বাংলাদেশে মাদক হিসেবে অপব্যবহূত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে স¤প্রতি যুক্ত হয়েছে ইয়াবা নামের আরেকটি উত্তেজক ট্যাবলেট যা, মূলত মেথামফেটাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ। ভারতের সাথে এই বিশাল ও অনুপ্রবেশযোগ্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসব মাদকদ্রব্য সহজেই চোরাচালান হয়ে আসছে। প্রযুক্তির দ্রæত অগ্রগতির ফলে, বিশেষ করে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল চালুর ফলে বিদেশি সংস্কৃতি এ অঞ্চলের প্রাচীন নৈতিক মূল্যবোধসমূহ নষ্ট করে ফেলছে। যুবকরা তথাকথিত ফাস্ট লাইফ নকল করতে গিয়ে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করছে।

অবৈধ মাদকের ব্যবহার এবং অপরাধ হাত ধরাধরি করে চলে। মাদক ব্যবহারকারীরা তাদের নেশা মেটানোর জন্য মাদকদ্রব্য পেতে আক্ষরিক অর্থেই যে কোন অপকর্ম করতে পারে। মাদক গ্রহণকারীরা প্রায়শই যে সমস্ত অপরাধ করে থাকে সেগুলো হচ্ছে: পকেটকাটা, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দেহব্যবসা, অযথা ঝামেলা বাধানো এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয়। এরা মাদকের প্রভাবে অনেক অপরাধ করে থাকে। দেশে নেশা আসক্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে গত এক দশকে মাদক সংক্রান্ত আটক, অবৈধ মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত এবং চিকিৎসা সাহায্যপ্রার্থী মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের সমস্যাসমূহ সন্ত্রাস, অপরাধ, পারিবারিক বিপর্যয়, স্বাস্থ্যসমস্যা ইত্যাদির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় বাধাসহ মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। মাদক ব্যবহারের সঙ্গে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে সমস্যা জড়িত তা হলো যে সমস্ত মাদকসেবী ইনজেকশন নেয় তাদের মধ্যে এইচআইভি বিস্তার।

বাংলাদেশ সরকার মাদকের অপব্যবহারকে অন্যতম মারাত্মক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-এ জাতীয় মাদকদ্রব্য প্রয়োগনীতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘ কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হয়েছে। মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তা একটি বহুমুখী কাজ এবং সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রের লোকবল ও সংগঠন মিলে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশে যে সমস্ত সংগঠনের ওপর মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ কার্যক্রম ন্যস্ত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর, পুলিশ, কাস্টমস, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড।

মাদকাসক্তির বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্তির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মাদকাসক্তির অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো হতাশা। এই হতাশার করণেই ব্যক্তি তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এর ফলে সাময়িকভাবে আত্মমুক্তির জন্য সর্বনাশা মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাদকাসক্তির জন্য সঙ্গদোষ মারাত্মক কারণ। নেশাগ্রস্থ বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে এটি বিস্তার লাভ করে। কৌতূহলও একটি মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ। অনেকেই মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জেনেও কৌতূহলবশত মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে।

অনেক সময় মানুষ মাদককে আনন্দ লাভের সহজ উপায় হিসাবে গ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তরুণদের মধ্যে মাদক গ্রহণের জন্য এটি অন্যতম কারণ। পরীক্ষায় ফেল, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে সচেতন করে তোলে। কিন্তু সা¤প্রতিককালে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি ঘটায় মাদকাসক্তির বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারে পিতা-মাতার নেশার অভ্যাস থাকে। ফলে তাদের সন্তান সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণে মাদকাসক্তদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সুতরাং, সামগ্রিকভাবে হতাশা, আদর্শহীনতা, বিভ্রান্তি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তির সংখ্যা দিন দিন বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদকাসক্তি এক ধরণের মরণ নেশা। মৃত্যুই তার একমাত্র গন্তব্যস্থল। মাদক গ্রহণ ধীরে ধীরে স্নায়ুকে দুর্বল করে তোলে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে নিঃশেষ করে দেয়। তাছাড়া ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি হ্রাস ঘটায়। মাদক গ্রহণে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন দ্রæত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। রাগান্বিতভাব, নিদ্রাহীনতা, উগ্রমেজাজ, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাবসহ মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

এক কথায় মাদকাসক্তি মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। সভ্যতার এই আধুনিক যুগে মাদকাসক্তির ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে অজস্ত্র তরুণ-তরুণীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এর প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করলে মাদকের অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্যের এই সর্বনাশা ব্যবহার বর্তমান বিশ্বে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে এই পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়। মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও আমদানি রোধ করার জন্য প্রতিরোধ কর্মসূচি আরো জোরদার করা, মাদক চোরাচালান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, সমাজের প্রত্যেক মানুষকেই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা, বেকারত্ব হ্রাস করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে মাদকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর ভূমিকা পালন করা, সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং সভা, সমিতি, সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।

লেখক, সহকারি কর্মকর্তা, ক্যারিয়ার এন্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন