বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অঘোষিত টার্মিনালেই যানজট

চট্টগ্রামের পোর্ট কানেকটিং রোড আমদানি- রফতানি পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সচল রাখা জরুরি স্থায়ী টার্মিনালই একমাত্র সমাধান

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

পোর্ট কানেকটিং রোড। নামেই যার পরিচয়। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বন্দরের সাথে মহাসড়কের সংযোগ সৃষ্টি করেছে পোর্ট কানেকটিং রোড। আর তাই সড়কটি লাইফলাইনের অংশ। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী মোট যানবাহনের তিনভাগের একভাগ চলাচল করে এই সড়ক হয়ে। প্রতিদিন গণপরিবহনে লাখো মানুষের যাতায়াত এই ব্যস্ত সড়কে। এই সড়কে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। যার ৯০ ভাগই ভারি যানবাহন।

তবে সড়কের উপর অঘোষিত ট্রাক, কার্ভাডভ্যান, লরি, ট্রেইলরসহ ভারি যানবাহন এবং বাস টার্মিনাল আর মাইক্রোবাস ও টেম্পু স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। দোকানপাট, নির্মাণসামগ্রী রেখে রাস্তা দখলসহ অবৈধ অনেক স্থাপনাও রয়েছে। ছয় লেন সড়কে কোথাও দুই লেন, কোথাও আবার চার লেন দখল হয়ে গেছে। তাতে সড়কটিতে রাতে দিনে তীব্র যানজটে আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন।

চট্টগ্রাম বন্দর এবং পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠা বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোমুখী ভারি যানবাহনের বিরাট অংশ এই সড়ক হয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল বোঝাই যানবাহন এ সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করে। সদরঘাট ও মাঝির ঘাটসহ কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে খালাস আমদানি পণ্যের বিরাট অংশ পরিবহন করা হয় এ সড়ক হয়েই। সড়কটি দখল হয়ে যাওয়ায় এসব যানবাহন আটকা পড়ছে যানজটে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, নিমতলা বিশ^রোডের মুখে অঘোষিত টেম্পু স্ট্যান্ড। এরপর রাস্তার দুইপাশ দখল করে অগণিত ভারী যানবাহন। এ দৃশ্য বড়পোল পর্যন্ত। বড়পোল মোড়েও রয়েছে টেম্পু স্ট্যান্ড। বড়পোল থেকে হালিশহর নয়াবাজার হয়ে সাগরিকা পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে অসংখ্য বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা। নয়াবাজার এলাকায় রয়েছে মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড। রয়েছে হাটবাজারও। সাগরিকা থেকে শুরু হয়েছে সড়কের উপর অঘোষিত বাস টার্মিনাল।

সাগরিকা, অলঙ্কার হয়ে এ কে খান পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে কাউন্টারের সামনে থেকে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস। পোর্ট কানেকটিং সড়কের প্রায় পুরোটা জুড়ে অঘোষিত এসব টার্মিনালের কারণে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে সম্প্রতি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর পুলিশ মাঠে নামে। অভিযান চালিয়ে ভারী যানবাহন রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তবে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছে সড়কটি। সড়কের দুইপাশে বাড়ছে অবৈধ পার্কিং।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যে অচলাবস্থা তার মূলে রয়েছে এসব অঘোষিত টার্মিনাল। দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় সীমাহীন দুর্ভোগের পর শত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সম্প্রারণ করা হয়েছে। কিন্তু বেপরোয়া দখলবাজিতে তার কোন সুফল মিলছে না। এজন্য সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলা আর গাফেলতিকে দায়ী করছেন সড়কের দুপাশের বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীরা। তারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন এবং ট্রাফিক বিভাগ সক্রিয় থাকলে সড়কটি দ্রুত দখলমুক্ত করা যায়।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এবং আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে যেকোন মূল্যে পোর্ট কানেকটিং রোড দখলমুক্ত রাখতে হবে। এ সড়কটির সাথে আমদানি-রফতানি পণ্যপরিবহনসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন পর সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তাই এখনিই সড়ক দখলমুক্ত করতে হবে। তা না হলে দখলদার আর অবৈধ স্থাপনা সরানো কঠিন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহম্মেদ বলেন, সড়কটিতে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যানবাহনকে জরিমানা আদায় এবং মামলা দেয়া হচ্ছে। তবে তাতেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। অভিযানের পর ফের সড়ক দখল করে যানবাহন রাখা হচ্ছে। কখনো অন্য সড়ক কিংবা নগরীর বাইরের কোন সড়কের পাশে এসব যানবাহন রাখা হচ্ছে।
নগরীতে বিশেষ করে বন্দর এলাকায় ভারী যানবাহনের পর্যাপ্ত টার্মিনাল না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পোর্ট কানেকটিং সড়কের দুইপাশে সাগরিকা, অলঙ্কার এবং এ কে খান এলাকায় বাস টার্মিনাল রয়েছে। এ কারণেও সড়কটিতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নগরীতে স্থায়ী বাস এবং ট্রাক টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পোর্ট কানেকটিং রোড সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিন বলেন, সড়কটির সম্প্রসারণ কাজ শেষে হতেই বিভিন্ন এলাকায় কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত অভিযানে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর সড়কটি সচল রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন