আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, সুনির্দিষ্ট করারোপ, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার দাবিতে সংহতি প্রকাশ করেছে তামাকবিরোধী ১৮টি সংগঠন। ২৯ মে রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের অদূত রহমান ইমনের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্রাটেজির নাসির উদ্দিন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর ফারহানা জামান লিজা, উন্নয়ন সমন্বয়ের পরিচালক ওয়ালিউল ইসলাম, প্রজ্ঞার মেহেদী হাসান, নাটাবের খলিল উল্লাহ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের মো. শরিফুল ইসলাম ও ডা. ফারহানা রহমান, তাবিনাজের সীমা দাস শিমু, ডরপের রুবিনা ইসলাম, ব্যারিস্টার জুয়েল সরকার সহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি। কিন্তু কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে, বিদ্যমান তামাক কর ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে পুরোপুরি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে ও পঙ্গুত্ব বরণ করে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ । ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ও রাজস্ব আয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। নিট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
এসময় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেয়া হয়। সেগুলো হলো-
১। সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা,
২। অভিন্ন করভারসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন করা,
৩। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩। নিম্ন স্তরের জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক প্রচলন করা।
এসময় বলা হয়, এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে-
১। প্রায় ৯ লক্ষ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত করা যাবে এবং প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ তরুণ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে এটি খুবই সহায়ক হবে।
২। বাড়তি ৯,২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা যাবে। এসডিজির টার্গেট ৩.৪ অর্জনে- ‘২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনার জন্য’ এই বাড়তি রাজস্ব ব্যয় করা যাবে।
৩। নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্য বেশি বাড়ালে নিম্ন আয়ের সিগারেট ব্যবহারকারিদের সুরক্ষা করা যাবে। তাঁদের আয়ের প্রায় ২১% ব্যয় হয় তামাক পণ্যের পেছনে। এই অর্থ তামাক পণ্যের পরিবর্তে শিক্ষায় ব্যয় করলে তাঁদের সন্তানদের পড়ালেখার মোট ব্যয় ১১% বাড়ানো সম্ভব হবে।
সংহতি শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
সংহতিতে অংশগ্রহণ করা তামাকবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমুনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি), এইড ফাউন্ডেশন, ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিস অব সোসাইটি (ডাস), ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ), গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস, ন্যাশনাল এন্টি টিউবারকিউলোসিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নাটাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা), স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), উন্নয়ন সমন্বয়, ভয়েস, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট) ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন