রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আমলে সালেহ বা নেক আমল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ হতে যে তালীম ও শিক্ষা নিয়ে আগমন করেছিলেন-এর বুনিয়াদী দিকনির্দেশনা হচ্ছে এই যে- মানুষের পরকালীন মুক্তি ও নিষ্কৃতি দু’টি জিনিসের ওপর নির্ভরশীল। এর প্রথমটি হচ্ছে ঈমান এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমলে সালেহ বা নেক আমল। বস্তুত: ঈমান হচ্ছে আল্লাহ পাকের দেয়া বুনিয়াদি বিধি-বিধানের ওপর পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার নাম। আর আমলে সালেহ হচ্ছে সেই বিধানাবলি অনুসারে আমল করা ও এগুলোর বাস্তবায়ন করা। কোনো বিধান বা কথার শুধু মাত্র জ্ঞান ও বিশ্বাস পরকালীন মুক্তি ও কামিয়াবীর জন্য যথেষ্ট হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জ্ঞান ও বিশ্বাস মোতাবেক আমল করা না হয়।

ইসলাম মানুষের নাজাত ও মুক্তিকে যে দুটি জিনিসের ওপর নির্ভরশীল সাব্যস্ত করেছে, এ দুটি বস্তু একটি অপরটির পরিপুরক। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ঈমান হচ্ছে ভিত্তি বা বুনিয়াদ আর আমলে সালেহ বা নেক আমল হচ্ছে-এর ওপর প্রতিষ্ঠিত দেয়াল ও স্তম্ভ। যেভাবে একটি ইমারত ভিত্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, তেমনি দেয়াল ও স্তম্ভ ছাড়াও সে ইমরাত দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।

ঈমান ও আমলে সালেহের উত্তম উদাহরণ হচ্ছে আর্কিমিডিসের সূত্র ও ছকের মতো। ঈমানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উদ্ভাবনী নিয়ম-নীতি এবং পরিজ্ঞাত বিধানাবলির সাথে যোগসূত্রতা ও সম্পৃক্ততা। যেগুলোর যথার্থতা স্বীকার না করলে আর্কিমিডিসের ছকগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে বাধ্য।

কিন্তু যদি এ সকল উদ্ভাবনী নিয়ম-নীতি এবং পরিজ্ঞাত বিধানাবলিকে স্বীকার করে নেয়া হয় এবং সে মোতাবেক ছকগুলোর ব্যবহার না করা হয়, তাহলে উদ্ভাবন নির্মাণ ভূগোল, দূরত্ব ও পরিধি নির্ণয়ে আর্কিমিডিসের উদ্ভাবিত বিষয়ের কোনো মূল্যই থাকবে না। এমন কি এর দ্বারা মানুষ আসল উদ্দেশ্য ও সাধন করতে পারবে না। তাই, সাধারণ মানুষের ভুল বুঝাবুঝিকে দূর করার জন্য এ ব্যাপারে কোরআনুল কারীমের শিক্ষাকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা একান্ত দরকার।

মূলত : কোরআনুল কারীমের মূল শিক্ষার প্রতি গভীরভাবে তাকালে একথা অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে, মানুষের মুক্তি ও কামিয়াবী অর্জনের অসংখ্য নির্দেশ আল কোরআনে রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশাবলির সকল স্থানেই ঈমান এবং নেক আমলকে পরস্পর নির্ভরশীল বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানুষের মুক্তি ও সফলতার জন্য আল কোরআনের সর্বত্রই প্রথম ঈমানকে এবং তারপর নেক আমলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : কালের শপথ! প্রকৃতই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার মাঝে নিমগ্ন; কিন্তু তাদের ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে। (সূরা আসর : ১,২)।

কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় এমন বহু ঘটনার কথা সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে যে, আল্লাহর উপর বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য উন্নতি, অগ্রগতি এবং কামিয়াবির দুয়ার সর্বদাই খোলা ছিল এবং আছে। এই বিশ্বাসটিকে সুদৃঢ় করার জন্য নেক আমলের ও প্রয়োজন আছে।

জান্নাত লাভের জন্য যা একান্ত দরকার তাহলো ঈমান ও নেক আমল। যে ব্যক্তি ঈমান আনয়নের পর নেক আমল করবে, সৎ এবং পুণ্য কর্মের অনুষ্ঠানের ভিতরে নিজের জীবনকে অতিবাহিত করবে, তারাই হবে জান্নাতের হকদার। আল কোরআনে স্পষ্টতঃই ঘোষণা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং ইহুদী, সাবেঈন ও নাসারাদের মাঝে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের কোনোই ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত ও হবে না। (সূরা মায়িদাহ : ৬৯)।

এই আয়াতের মর্ম কথা ও একই যে, জান্নাত লাভের ব্যাপারটি বংশ এবং গোত্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং আহকামে ইলাহীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সে মোতাবেক আমল করাই হচ্ছে জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়। প্রকৃতপক্ষে ঈমানহীনতা ও পাপ কাজের চূড়ান্ত ফল হচ্ছে আখেরাত বরবাদ হয়ে যাওয়া। পক্ষান্তরে ঈমান ও নেক আমলের ফল হচ্ছে দ্বীন ও দুনিয়ার মঙ্গল লাভ করা। মহান আল্লাহ পাকের এটাই হচ্ছে চিরস্থায়ী স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন। এই নিয়ম নীতির মাঝে চুল পরিমাণ ব্যতিক্রম ও হয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
MD Arfatur Rahman Noor ৩১ মে, ২০২২, ৭:৫৬ এএম says : 0
সুখ-শান্তি অর্জন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে যারা ধর্মীয় ও চমৎকার চমৎকার কাজে ব্যস্ত থাকে।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ৩১ মে, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
বেশি বেশি ঘুমিয়ে, আরাম তালাশ করে বা আমলে সালেহ করতে অনিচ্ছুক হয়ে অবশ্যই সুখ পাওয়া যায় না।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৩১ মে, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
হাদিসের পরিভাষায় আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা এবং রোজা পালন করা হলো আমলে সালেহ বা নেক কাজ।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ আবুল কাশেম ৩১ মে, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
এ সব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে হেফাজত করে। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় এটি প্রমাণিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন